‘তোমার কম্বলকোনা শীতের রাইতোত জান বাঁচাইবে’

প্রথম আলো ট্রাস্টের উদ্যোগে তারাগঞ্জের ৪০০ শীতার্ত মানুষকে কম্বল ও চাদর দেওয়া হয়েছে। সোমবার সকালে
ছবি: প্রথম আলো

শরীরে হাঁটার শক্তি নেই সত্তরোর্ধ্ব মনোয়ারা বেগমের। পুরোনো একটা শাড়ি গায়ে মলিন মুখে ভ্যানে বসে ঠান্ডায় কাঁপছিলেন। তাঁর গায়ে নতুন একটি কম্বল জড়িয়ে দিতেই মলিন মুখে ফোটে হাসি। দুই হাতে কম্বল জড়িয়ে মনোয়ারা বেগম বলেন, ‘গাও খানোত উসুম নাগোছে। হিয়ালোতে রাইতোত ঘুমাবার পারো নাই। খুব কষ্টে আছনু। তোমার কম্বলকোনা শীতের রাইতোত জান বাঁচাইবে।’

মনোয়ারা বেগমের বাড়ি রংপুরের তারাগঞ্জ উপজেলার ছুট হাজীপাড়া গ্রামে। আজ সোমবার প্রথম আলো ট্রাস্টের উদ্যোগে তারাগঞ্জের ৪০০ শীতার্ত মানুষকে কম্বল ও চাদর দেওয়া হয়। সকালে জগদীশপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে অন্যদের সঙ্গে এ কম্বল নিতে এসেছিলেন মনোয়ারা।

আরও পড়ুন

ইকরচালী ইউনিয়নের মেনানগর গ্রাম থেকে এসেছিলেন স্বপ্না বেগম (৬৬)। ১০ বছর আগে তাঁর স্বামী মারা গেছেন। অন্যের বাড়িতে গৃহকর্মীর কাজ করে এক মেয়েকে নিয়ে চলে তাঁর সংসার। কম্বল হাতে পেয়ে স্বপ্না বেগম বলেন, ‘স্বামী নাই। নিজে যে কামাই করি, তাক দিয়া ভাত হয় না। গরম কাপড় কিনার পাই নাই। এবার শীত বেশি, খুব কষ্ট। কম্বলকোনা পানু, ভালোই হইল। গাওত দিয়্যা ঠান্ডা থাকি বাঁচিম। তোমার জন্যে দোয়া করিম।’

শরীরে হাঁটার শক্তি নেই। ভ্যানে বসে ঠান্ডায় কাঁপছিলেন। গায়ে নতুন একটি কম্বল জড়িয়ে দিতেই মুখে হাসি ফোটে সত্তরোর্ধ্ব মনোয়ারা বেগমের
ছবি: প্রথম আলো

কম্বল ও চাদর পেয়ে মনোয়ারা ও স্বপ্নার মতো শীতের কষ্টে থাকা ৪০০ মানুষের মুখে হাসি ফুটেছে। কেউ লাঠিতে ভর করে, কেউ রিকশায় চড়ে, কেউবা পায়ে হেঁটে এসেছিলেন কম্বল নিতে।

চার সদস্যের সংসারে একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি ছিলেন ফকিরপাড়া গ্রামের মোন্নাফ মিয়া (৪৪)। চিকিৎসার টাকার অভাবে পচন ধরা এক পা ১০ বছর আগে কেটে ফেলতে হয়। এখন লাঠিই তাঁর চলাফেরার একমাত্র ভরসা। এখন এবাড়ি-ওবাড়িতে চেয়েচিন্তে চলে তাঁর সংসার। কম্বল পেয়ে মোন্নাফ বলেন, ‘অ্যালা কাম করিবার পারো না। ভাঙা ঠ্যাং নিয়া খুঁজি খাও। গরম কাপড় কিনার টাকা মোর নাই। তোমরা ডাকে আনি কম্বল দিনেন, শীতোত আর মোর কষ্ট হবার নোয়ায়।’

আরও পড়ুন

নারায়ণজন গ্রামের ষাটোর্ধ্ব নারী বুলিমাই বলেন, ‘কম্বলকোনা পানু, মাঘ মাসি শীতোত আর কষ্ট হবার নোয়ায়। কম্বলকোনা গাওত দিয়া আরামে ঘুমাবার পাইম। নামাজোত বসি তোমার জন্যে দোয়া করিম।’ ডাঙ্গাপাড়া গ্রামের হাফিজা বেগম (৪১) বলেন, ‘পাঁচ বছর হওছে স্বামী নাই। ঠান্ডা থাকি শীতোত কষ্টে আছনু। এবার সেই কষ্ট হবার নোয়ায়। তোমার চাদরকোনো গাওত দিয়া কামোত যাইম, শীত থাকি বাঁচিম।’

কেউ লাঠিতে ভর করে, কেউ রিকশায় চড়ে, কেউবা পায়ে হেঁটে এসেছিলেন কম্বল নিতে। সোমবার সকালে তারাগঞ্জের জগদীশপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে
ছবি: প্রথম আলো

কম্বল ও চাদর বিতরণের আগে গ্রামে গ্রামে ঘুরে দুস্থ শীতার্তদের বাছাই করে স্লিপ বিতরণ করা হয়। সকাল ৯টায় জগদীশপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে তাঁদের হাতে কম্বল-চাদর তুলে দেন অবসরপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক সাইফুল ইসলাম, প্রথম আলো তারাগঞ্জ বন্ধুসভার আহ্বায়ক আজহারুল ইসলাম, সদস্য জেমিন শেখ, নাহিদুজ্জামান, এনামুল হক, মামুন সরকার, নাঈম ইসলাম, সুরুজ মিয়া, খাদিজা আক্তার, নুর আলম, রোমানা আক্তার, স্মৃতি আক্তার, রনি মিয়া, পবিত্র রায়, মোজাহারুল ইসলাম, আক্তারুজ্জামান ও প্রথম আলোর তারাগঞ্জ প্রতিনিধি রহিদুল মিয়া।

আরও পড়ুন

শীতার্ত মানুষের সহযোগিতায় আপনিও এগিয়ে আসতে পারেন।

হিসাবের নাম: প্রথম আলো ট্রাস্ট/ত্রাণ তহবিল

হিসাব নম্বর: ২০৭২০০০০১১১৯৪

ঢাকা ব্যাংক লিমিটেড, কারওয়ান বাজার শাখা, ঢাকা।

অথবা বিকাশে পেমেন্ট করতে পারেন: ০১৭১৩-০৬৭৫৭৬ এই মার্চেন্ট অ্যাকাউন্ট নম্বরে। বিকাশ অ্যাপে ডোনেশন অপশনের মাধ্যমেও আপনার অনুদান পাঠাতে পারেন।