সৌদি থেকে ভিডিও কলে নির্দেশনা দিয়ে চালান হাঁসের খামার, বিক্রি হয় শত শত ডিম
সৌদি আরবে বসে ভিডিও কলে নির্দেশনা দিয়ে বাড়িতে হাঁসের খামার গড়ে তুলেছেন পটুয়াখালীর মির্জাগঞ্জের আবদুর রহিম। হাঁসগুলো ডিম দিতে শুরু করেছে। দেখতে শুরু করেছেন সাফল্যের মুখ। মায়ের হাতে হাঁসকে খাবার খাওয়ানো, স্ত্রীর হাতে ডিম কুড়ানোর দৃশ্যগুলো যেন তাঁকে প্রতিমুহূর্তে অনেক দূর থেকে গ্রামের বাড়িতে নিয়ে আসে।
প্রবাসী রহিমের নির্দেশনায় তাঁর মা-বাবা ও স্ত্রী মিলে খামারের কাজ সামলান। বর্তমানে খামারে প্রায় সাড়ে ৭০০ হাঁস আছে। খামার থেকে প্রতিদিন তিন থেকে সাড়ে চার শ ডিম আসতে শুরু করেছে। সেই ডিম বিক্রি হচ্ছে পাঁচ থেকে সাড়ে পাঁচ হাজার টাকায়। খরচাপাতি মিটিয়ে পাচ্ছেন ভালো লাভ।
আবদুর রহিম বলেন, ‘খামারের প্রতিটা কাজ আমি ভিডিও কলে দেখি। কখন কী খাবার দিতে হবে, কখন কী ওষুধ দিতে হবে সবকিছু আমি বলে দিই। মা-বাবা আর বউ মিলে কাজগুলো করে।’
গ্রামের দরিদ্র পরিবারে জন্ম আবদুর রহিমের। তাঁর পড়াশোনা থেমে যায় পঞ্চম শ্রেণিতেই। সংসারের ঘানি টানতে হাঁস পালনের উদ্যোগ নেন ২০২০ সালে। প্রথমে প্রথমে ১ লাখ ৩৩ হাজার ৩৫০টি হাঁস কিনে খামার শুরু করেন তিনি। কয়েক মাস লালন-পালনের পর এলাকার খাল-বিলের পানি যখন শুকিয়ে যায়, তখন বেশ লাভেই হাঁসগুলো বিক্রি করে দেন। পরে সাহস করে কিনেছিলেন একসঙ্গে আরও সাত শ হাঁসের বাচ্চা। হাঁসগুলো যখন ডিম দেওয়ার সময় হয়, তখন অজ্ঞাত রোগে এক দিনেই মারা যায় প্রায় চার শ হাঁস। পরে বাকি হাঁসগুলো লোকসানে বিক্রি করে দেন। হোঁচট খেয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েন তিনি।
খামারের প্রতিটা কাজ আমি ভিডিও কলে দেখি। কখন কী খাবার দিতে হবে, কখন কী ওষুধ দিতে হবে সবকিছু আমি বলে দিই। মা-বাবা আর বউ মিলে কাজগুলো করে।আবদুর রহিম, সৌদি প্রবাসী
এর মধ্যে আবদুর রহিমের বাবা অসুস্থ হয়ে পড়েন। কেটে ফেলতে হয় তাঁর পায়ের একটি আঙুল। একদিকে খামারে লোকসান, অন্যদিকে বাবা জামাল হাওলাদারের পায়ের অস্ত্রোপচারের খরচ জোগাতে গিয়ে তিনি ঋণে হাবুডুবু খাচ্ছিলেন। উপায় না পেয়ে ২০২২ সালে সৌদি আরবে চলে যান তিনি। বিদেশে গিয়েও তিনি স্বপ্ন ছাড়েননি। ফাঁকে ফাঁকে ইউটিউব দেখে শিখেছেন হাঁস পালনের নিয়ম, রোগ নিরাময়ের উপায়, খাবার ব্যবস্থাপনা। বিদেশে বসেই ঠিক করেন আবার শুরু করবেন হাঁসের খামার।
যেই কথা, সেই কাজ। পিরোজপুরের এক খামারির কাছ থেকে এক শ হাঁস ৪০ হাজার দরে ৪৬০টি হাঁস এবং পটুয়াখালীর পাখিমারা এলাকা থেকে আরও ৩০০ হাঁস কিনে আবদুর রহিম নতুন করে শুরু করেন হাঁসের খামার।
মুঠোফোনে প্রথম আলোকে আবদুর রহিম বলেন, ‘লোকসান কাটিয়ে হাঁসের খামার থেকে এখন লাভই হচ্ছে। প্রতিদিন সব খরচ বাদ দিয়ে দুই থেকে তিন হাজার টাকা লাভ থাকে। আমি চাই খামারটা আরও বড় করতে। ঋণ পরিশোধ করে কিছু টাকা জমাতে পারলে দেশে ফিরে আরও বড় করে হাঁসের খামার করার ইচ্ছা আছে।’
হাঁসের খামার নিয়ে আবদুর রহিম ও তাঁর পরিবারকে বিভিন্ন পরামর্শ দেওয়া হয় বলে জানিয়েছেন উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা মো. আলাউদ্দিন মাসুদ। সম্প্রতি খামারটি পরিদর্শন করেছেন মির্জাগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. তরিকুল ইসলাম। তিনি বলেন, যুবকদের আত্মকর্মসংস্থান তৈরির জন্য এ ধরনের উদ্যোগ অনুপ্রেরণামূলক।