তৃণমূলের সংস্কৃতিকর্মীদের উদ্বুদ্ধ করা গেলে সংস্কৃতির ভান্ডার সমৃদ্ধ হবে

মানিকগঞ্জের সিঙ্গাইর উপজেলায় গ্রাম থিয়েটারের সুফিয়াফুল মঞ্চ উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি। বুধবার বিকেলে গোলাইডাঙ্গা গ্রামে নাট্যকার আনন জামানের বাড়িতে
ছবি: প্রথম আলো

শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি বলেছেন, ‘আমাদের ভাষা, সাহিত্য ও সংস্কৃতি অত্যন্ত সমৃদ্ধ। আমাদের এই সাহিত্য ও সংস্কৃতির সমৃদ্ধ অতীতকে যেন না হারিয়ে ফেলি। এ জন্য গ্রাম থিয়েটার ফেডারেশন যেমন কাজ করছে, তেমনি সারা দেশে সংস্কৃতিকর্মীরাও কাজ করছেন। তৃণমূলের সংস্কৃতিকর্মীদের উদ্বুদ্ধ করতে পারলে আমাদের সংস্কৃতির ভান্ডার আরও সমৃদ্ধ হবে।’

বুধবার বিকেলে মানিকগঞ্জের সিঙ্গাইর উপজেলার গোলাইডাঙ্গা গ্রামে নাট্যকার আনন জামানের বাড়িতে গ্রাম থিয়েটারের সুফিয়াফুল মঞ্চের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে শিক্ষামন্ত্রী এসব কথা বলেন। এর আগে সুফিয়াফুল মঞ্চ উদ্বোধন করেণ তিনি।

উদ্বোধন অনুষ্ঠানে স্থানীয় মানিকগঞ্জ-২ আসনের সংসদ সদস্য কণ্ঠশিল্পী মমতাজ বেগম, বাংলাদেশ গ্রাম থিয়েটারের প্রতিষ্ঠাতা সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব বীর মুক্তিযোদ্ধা নাসির উদ্দীন ইউসুফ ও নাট্যকার আনন জামান বক্তব্য দেন। এ সময় অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) সানোয়ারুল হক, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস) ইমতিয়াজ মাহাবুব, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা দীপন দেবনাথ, অভিনেতা ও গায়ক শিমূল ইউসুফ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘আমরা বাঙালি। আমাদের বাঙালি সংস্কৃতির যে ঐতিহ্য রয়েছে, তাকে ধারণ করে আমাদের সামনে এগিয়ে যেতে হবে। অর্থনীতি, রাজনীতি ও সংস্কৃতি সবই একসঙ্গে এগিয়ে যেতে হবে। আমাদের যত আন্দোলন-সংগ্রাম এবং অর্জন রয়েছে, সেগুলোর জন্য রাজনীতি ও সংস্কৃতি পাশাপাশি হাত ধরে চলেছে। কাজেই আজও আমাদের যে অগ্রযাত্রা, সেই অগ্রযাত্রায় সাংস্কৃতিক পুনর্জাগরণের দরকার। আমাদের নতুন প্রজন্ম যেন আমাদের দেশীয় সংস্কৃতি, আমাদের সমৃদ্ধ অতীতকে ভুলে না যায়।’

সারা দেশে সৃজনশীল মেধা অন্বেষণ প্রতিযোগিতার মধ্য দিয়ে প্রতিবছর স্কুলপর্যায় থেকে নিয়ে এসে বিভাগীয় পর্যায়ে এবং জাতীয় পর্যায়ে শিক্ষার্থীদের পুরস্কৃত করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি। তিনি বলেন, সারা দেশে ক্রীড়া উৎসব ও সাংস্কৃতিক উৎসব হয়। স্কুলপর্যায়ে সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড হচ্ছে না, এটি সঠিক নয়। তবে নিশ্চয়ই তা বেগবান করার প্রয়োজন আছে। নতুন শিক্ষাক্রমে সংস্কৃতি এবং ক্রীড়ার পাশাপাশি জ্ঞানচর্চার মতো বিষয়গুলোতে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।

সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব বীর মুক্তিযোদ্ধা নাসির উদ্দীন ইউসুফ বলেন, ‘ঐতিহ্যবাহী নাট্যরীতি, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা সামনে এগিয়ে নিয়ে যেতে হলে আমাদের শিক্ষায় যেমন উন্নয়ন ঘটাতে হবে, তেমনি সংস্কৃতিতে নানা ভূমিকা রাখতে হবে। এ কারণে সারা দেশে শত মঞ্চ করার পরিকল্পনা করা হয়। এই পরিকল্পনার অংশ হিসেবে গ্রাম থিয়েটার মঞ্চ নির্মাণের কাজ শুরু করা হয়েছে।’

ধর্মের সঙ্গে সংস্কৃতির কোনো বিরোধ নেই উল্লেখ করে নাসির উদ্দীন বলেন,‘ বিষয়টি আমাদের বুঝতে হবে। আঞ্চলিক যে শিল্পরীতি আছে, যেগুলোর ওপর হাজার বছর ধরে এ জনপদ গড়ে উঠেছে। আমরা গ্রাম থিয়েটারে একটি আন্দোলন শুরু করেছি। গ্রাম থিয়েটারের বয়স ৪০ বছর হয়েছে। এটি যুগ যুগ বছর ধরে চলবে। মুক্তিযোদ্ধারা দেশ স্বাধীন করতে পারেন, তবে দেশটা জনগণের। সেই জনগণের সংস্কৃতির প্রতিফলন রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে পৌঁছাতে গ্রাম থিয়েটার কাজ করে চলেছে। সারা দেশে আমরা ৬০টি গ্রাম থিয়েটার মঞ্চ তৈরি করছি। কোনোটির গ্যালারি আছে, আবার কোনোটির গ্যালারি নেই।’

নাসির উদ্দীন ইউসুফ আরও বলেন, ‘আমরা রাজনীতি ও সংস্কৃতিকে হাত ধরাধরি করে চলতে দেখতে চাই। অতীতে আমাদের সাংস্কৃতিক আন্দোলন আমাদের রাজনৈতিক আন্দোলনকে নিয়ন্ত্রণ করেছে। সংস্কৃতি যে শিক্ষা দিতে পারে, আর কোনো প্রতিষ্ঠান এই শিক্ষা দিতে পারে না। যিনি যে পেশাতেই থাকুন না কেন, সবার আগে দেশপ্রেমী হতে হবে।’

১৫ জানুয়ারি পর্যন্ত পাঁচ দিনব্যাপী সুফিয়াফুল মঞ্চে নাটক, গাজির গান, গাজিযাত্রা, বিচ্ছেদ ও বৈঠকি গান, বিচার গান পরিবেশন করবেন বরেণ্য শিল্পীরা।