এক কিলোমিটারে যত ভোগান্তি

  • সড়ক বিভাজক তৈরির পরিকল্পনা ছিল না। নকশায় নতুন করে বিভাজক সংযোজন করা হয়েছে।

  • দুই-তৃতীয়াংশ সড়ক বর্তমানে চলাচলের উপযোগী।

দীর্ঘদিন ধরে ধীরগতিতে সড়ক পুনর্নির্মাণের কাজ চলায় ভোগান্তিতে পড়েছেন খুলনার শিল্প এলাকা বিআইডিসি সড়কের ব্যবসায়ী ও বাসিন্দারা। ২৭ ফেব্রুয়ারি চিত্রালী বাজার এলাকায়প্রথম আলো

খুলনা নগরের নতুন রাস্তার মোড় থেকে পিপলস গোল চত্বর পর্যন্ত বিআইডিসি সড়কে চলাচলকারী মানুষের ভোগান্তি যেন শেষ হচ্ছে না। দীর্ঘদিন ধরে নির্মাণকাজ চলা সড়কের এই অংশে সম্প্রতি সড়ক বিভাজক তৈরির কাজ শুরু হয়েছে। অন্যদিকে পিপলস গোল চত্বর থেকে খালিশপুর নিউমার্কেট পর্যন্ত সড়কের এক পাশ ঘিরে রেখে চলছে কার্পেটিংয়ের কাজ।

নতুন রাস্তার মোড় থেকে পিপলস গোল চত্বর পর্যন্ত প্রায় এক কিলোমিটার সড়কে বিভাজক তৈরির পরিকল্পনা ছিল না। সড়কের এই অংশ চওড়া এবং গাড়ির চাপ বেশি থাকায় সড়ক বিভাজক তৈরির বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। ব্যস্ত এ সড়কের মধ্যে শ্রমিকেরা লোহার রডের খাঁচা বেঁধে বিভাজক তৈরির কাজ করছেন। সড়কটি একেবারে ভাঙাচোরা। সড়কের মাঝবরাবর খালের মতো গর্ত হয়ে আছে। ভাঙাচোরা সড়কে হেলেদুলে চলছে যানবাহন।

স্থানীয় বাসিন্দারা বলেন, দীর্ঘদিন ধরে চলা সড়কটির সংস্কারকাজ শেষ হয়ে এলেও নতুন রাস্তা থেকে পিপলস গোল চত্বর পর্যন্ত অংশে কাজের গতি নেই। সড়কের ওই অংশে নতুন করে সড়ক বিভাজক তৈরির কাজ শুরু হওয়ায় শিগগিরই তাঁদের ভোগান্তি শেষ হচ্ছে না। কর্তৃপক্ষ বলছে, বাস্তবতার নিরিখে নকশায় নতুন করে সড়ক বিভাজক সংযোজন করা হয়েছে। কাজ শুরু হয়েছে। তিন-চার মাসের মধ্যে সব কাজ শেষ হয়ে যাবে।

সম্প্রতি নতুন রাস্তার মোড় থেকে পিপলস গোল চত্বর পর্যন্ত এক কিলোমিটার সড়কে বিভাজক তৈরির কাজ শুরু হয়েছে।

সিটি করপোরেশন ও স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, খালিশপুর শিল্পাঞ্চলের প্রাণ বিআইডিসি সড়ক। ১৯৬০–এর দশকে সড়কটি নির্মাণ করে বাংলাদেশ জুট মিল করপোরেশন। খুলনা সিটি করপোরেশনের সাতটি ওয়ার্ডের সীমানা পড়েছে সড়কের দুই পাশে। ২০১৯ সালে সড়কে গ্যাসের পাইপলাইন বসানোর কাজ শুরু হয়। এতে ক্ষতবিক্ষত হয় সড়কটি। এ ছাড়া কয়েক দশক আগে নির্মিত সড়কের নালাও ছিল ভাঙাচোরা। এমন পরিস্থিতিতে সড়কটি প্রশস্ত করা ও নতুন নালা নির্মাণের উদ্যোগ নেয় সিটি করপোরেশন। কিন্তু প্রায় সাড়ে চার কিলোমিটার দীর্ঘ সড়কের পাশে দোকানপাট ও স্থাপনা সরানো চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়ায়। পরে জনপ্রতিনিধি ও ব্যবসায়ীনেতাদের মাধ্যমে সমস্যার সমাধান করে ২০২১ সালে সড়কে আগের বিদ্যুতের খুঁটি ও সড়কবাতি রেখেই কাজ শুরু হয়। ঢিমেতালে কাজ করে বর্তমানে দুই-তৃতীয়াংশের বেশি অংশ চলাচলের উপযোগী হয়েছে। কিন্তু পিপলস গোল চত্বরের পরের অংশে কাজে গতি নেই।

খুলনা সিটি করপোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী মশিউজ্জামান খান প্রথম আলোকে বলেন, পরিকল্পনায় প্রথমে সড়ক বিভাজক তৈরির পরিকল্পনা ছিল না। সড়কের নতুন রাস্তা থেকে পিপলস গোল চত্বর পর্যন্ত অংশ অনেক চওড়া, গাড়ির চাপও বেশি। তাই বাস্তবতার নিরিখে নকশায় নতুন করে সড়ক বিভাজক সংযোজন করা হয়েছে। কাজ শুরু হয়েছে। মাস তিন-চারেকের মধ্যে সড়কটির সব কাজ শেষ হয়ে যাবে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, খালিশপুর অঞ্চলের বড় বড় ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান সড়কের এ অংশে অবস্থিত। চারটি পাটকল, নিউজপ্রিন্ট কারখানাসহ বিভিন্ন কলকারখানা, বিদ্যুৎকেন্দ্র, অফিস, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ ব্যবসা-বাণিজ্যের মূল কেন্দ্র সড়কের পাশেই। প্রতিদিন সড়ক দিয়ে শিল্পাঞ্চলের শ্রমিকসহ সাধারণ পথচারীরা যাতায়াত করেন। সড়কের এ অংশ চওড়া হওয়ায় হকাররা রাস্তার প্রায় মাঝবরাবর পর্যন্ত চলে আসায় যানজট হতো। নানা উদ্যোগ নিলেও কাজে আসেনি। সড়ক বিভাজক হলে হকাররা সড়ক দখল করতে পারবেন না ভেবে সংস্কারকাজের সময় বিভাজক তৈরির বিষয়টি যুক্ত করা হয়। এতে ব্যবসায়ীরা খুশি হলেও হকাররা নাখোশ। সড়ক বিভাজক নিয়ে ওয়ার্ড কাউন্সিলরদের কেউ কেউ বিপক্ষেও মত দেন।

খালিশপুর বণিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ও ৮ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মো. সাহিদুর রহমান বলেন, সড়ক বিভাজক পরে যোগ করা হয়েছে। এ জন্য প্রায় ৭৮ লাখ টাকা খরচ হবে। এ বিষয়ে জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে কখনো আলোচনা করা হয়নি। খালিশপুর এখন আর জমজমাট নেই। আগের মতো মিল-কারখানার সম্ভাবনাও নেই। মার্কেট বলতে সড়কের দুই পাশে দোকান। লোকজন সহজভাবে রাস্তা পারাপার না হতে পারলে ব্যবসার ক্ষতি হবে।

তবে বিআইডিসি সড়কের ব্যবসায়ী নাসির চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, সড়ক সংস্কারে দেরি হওয়ায় মানুষের কষ্ট হচ্ছে। তবে সড়কের মধ্যে বিভাজক তৈরি হওয়ায় সড়ক দখল করে এখন ব্যবসা করা সম্ভব হবে না। এতে সাধারণ ব্যবসায়ীরা উপকৃত হবেন।

সরেজমিনে দেখা গেছে, সড়কের কদমতলা থেকে খালিশপুর নিউমার্কেটের ফটক পর্যন্ত সড়কটির কাজ শেষ। সেখান থেকে পিপলস গোল চত্বর পর্যন্ত সড়কের এক পাশে কার্পেটিং শেষ হয়েছে। অন্য পাশ ঘিরে কার্পেটিংয়ের কাজ চলছে। তবে পিপলস গোল চত্বর থেকে নতুন রাস্তার মোড় পর্যন্ত সড়কটি ব্যাপক ভাঙাচোরা। সড়কের মধ্যে লোহার রডের খাঁচা তৈরি করে বিভাজকের কাজ করছেন শ্রমিকেরা। ওই অংশের সড়কের মধ্যে কোথাও গর্ত হয়ে আছে, কোথাও জমে আছে পানি। ভাঙাচোরা সড়কে ধুলাবালুর মধ্যে হেলেদুলে চলছে যানবাহন।

সড়কের পাশের বাসিন্দা আবদুর রাজ্জাক বলেন, ‘খালিশপুরবাসীর কষ্টের আরেক নাম বিআইডিসি রোড। দীর্ঘদিন ধরে রাস্তাটি একদম ভাঙাচোরা। প্রতিদিন যে কী কষ্ট হয়, বোঝাতে পারব না। কিছু অংশে কার্পেটিংয়ের কাজ শেষের দিকে। কিন্তু খালিশপুরের মূল ব্যবসা-বাণিজ্য যে অঞ্চল ঘিরে, সেই পিপলস গোল চত্বর থেকে ট্যাংকলরি সড়কের মাথা পর্যন্ত অংশ খুবই খারাপ। কবে ঠিক হবে, তা–ও কেউ জানে না।’ ট্যাংকলরি শ্রমিক মো. শাহাজালাল বলেন, বৃষ্টি হলেই কাদাপানিতে রাস্তা একাকার হয়ে যায়। অনেক সময় ভারী ট্রাক কাদায় আটকে কাত হয়ে যায়।

সড়কের পাওয়ার হাউস গেটে দাঁড়িয়ে ছিলেন ব্যাটারিচালিত ইজিবাইকচালক মাসুদ রানা। পাঁচ বছর ধরে তিনি এ সড়কে ইজিবাইক চালান। তিনি বলেন, এই রাস্তা কোনো দিন ভালো ছিল না। ভীষণ কষ্ট করে যাত্রী নিয়ে তাঁদের চলতে হয়। সবকিছু এখন গা–সওয়া হয়ে গেছে।