সরকার নির্ধারিত মুনাফার তিন গুণ বেশিতে বিক্রি 

পাইকারি পর্যায় থেকে কেনার পর খুচরা বাজারে সবজি বিক্রি হচ্ছে অন্তত ১১৩ শতাংশ বাড়তি দামে। 

চট্টগ্রাম নগরে খুচরা বিক্রেতারা সরকার নির্ধারিত যৌক্তিক মুনাফার তিনগুণ বেশি দামে বিক্রি করেন সবজি। নগরের কাজির দেউড়ী বাজারফাইল ছবি

চট্টগ্রাম নগরের খুচরা ও পাইকারি পর্যায়ে সবজির দামের পার্থক্য দুই থেকে আড়াই গুণ। পাইকারি পর্যায় থেকে কেনার পর খুচরা বাজারে সবজি বিক্রি হচ্ছে অন্তত ১১৩ শতাংশ বাড়তি দামে। অথচ সরকারি হিসেবে যৌক্তিক মুনাফা সর্বোচ্চ ৩০ শতাংশ। তবে নগরের খুচরা বাজারে সবজির দামের পার্থক্য সরকারি মুনাফার হার থেকেও তিন গুণের বেশি।

২০২১ সালের কৃষি বিপণন বিধিমালা অনুযায়ী, আলুসহ সব ধরনের শাকসবজির ক্ষেত্রে খুচরা পর্যায়ে সর্বোচ্চ মুনাফার পরিমাণ ৩০ শতাংশ। অর্থাৎ পাইকারি পর্যায়ে কোনো সবজির দাম ১০ টাকা হলে খুচরা পর্যায়ে তা সর্বোচ্চ ১৩ টাকা পর্যন্ত বিক্রি করা যাবে। কিন্তু এই হারে নগরে সবজি পাওয়া যাচ্ছে না। 

নগরের বহদ্দারহাট কাঁচাবাজার, কর্ণফুলী কমপ্লেক্স বাজার, কর্ণফুলী মার্কেট বাজার, চকবাজার ও কাজীর দেউড়ী বাজারে খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, বেগুন, পটোল, করলা, ঝিঙে, চিচিঙ্গা, ধুন্দুল ও ঢ্যাঁড়স—এই সাত সবজির ক্ষেত্রেও দামের পার্থক্য দুই থেকে আড়াই গুণ। গড়ে এই সাত সবজির দাম প্রায় ৩২ টাকা বেশি, যা প্রায় ১১৩ শতাংশ বেশি। অর্থাৎ সরকারি মুনাফার সঙ্গে পার্থক্য তিন গুণের বেশি।

সাত সবজিতে দাম বেশি

চট্টগ্রাম নগরের সবজির বৃহত্তর পাইকারি আড়ত রিয়াজউদ্দিন বাজার। গতকাল শুক্রবার সকালে এই বাজারের আড়তে প্রতি কেজি বেগুন বিক্রি হয়েছে ২৫ থেকে ২৬ টাকায়। তবে এদিন নগরের অন্যান্য খুচরা বাজারে একই বেগুন বিক্রি হয়েছে ৫০ থেকে ৬০ টাকা কেজি দরে। অর্থাৎ পাইকারি ও খুচরায় বেগুনের দামের পার্থক্য দ্বিগুণের বেশি।

২০২১ সালের কৃষি বিপণন বিধিমালা অনুযায়ী, আলুসহ সব ধরনের শাকসবজির ক্ষেত্রে খুচরা পর্যায়ে সর্বোচ্চ মুনাফার পরিমাণ ৩০ শতাংশ।

গতকাল খুচরা বাজারে প্রতি কেজি পটোল বিক্রি হচ্ছে ৪৫ থেকে ৫০ টাকায়। তবে পাইকারি আড়তে পটোলের দাম প্রতি কেজি ২২ থেকে ২৩ টাকা। খুচরা পর্যায়ে দাম প্রায় ১১৬ শতাংশ বেশি। একইভাবে করলাতে ১৭৫ শতাংশ ও ঢ্যাঁড়সে দামে পার্থক্য ১৬২ শতাংশ। ঝিঙে, চিচিঙ্গা ও ধুন্দুল পার্থক্য ১৫০ শতাংশ। পাইকারি পর্যায়ে এসব সবজির দাম ২০ থেকে ২৫ টাকার মধ্যে।

সরকারি মুনাফার হার ধরলে খুচরায় এসব সবজির দাম সর্বোচ্চ ২৬ থেকে ৩৩ টাকা হওয়ার কথা। তবে খুচরায় দাম ৪৫ থেকে ৬৫ টাকা। খুচরা ব্যবসায়ীরা বলছেন, আড়ত থেকে খুচরা বাজারে আনার সময় খরচ বেশি বর্তমানে। আড়তদারি খরচ, পরিবহন ও সবজি নষ্ট হওয়ার কারণে দামে প্রভাব পড়ে। তবে আড়তদারেরা বলছেন এই খরচ সর্বোচ্চ দেড় টাকার বেশি হওয়ার কথা নয়। 

রিয়াজউদ্দিন বাজার আড়তদার কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক ফারুক শিবলী প্রথম আলোকে বলেন, সব মিলিয়ে আড়তে দামের সঙ্গে দেড় টাকা যোগ হতে পারে, এর বেশি না। বর্তমানে কাঁকরোল ও কাঁচা মরিচ ছাড়া সব সবজির দাম ৯ থেকে ২৫ টাকার মধ্যে। 

খরচ আসলে কত হয়

রিয়াজউদ্দিন বাজারে আড়তগুলোয় কমিশন ভিত্তিতে সবজি বিক্রি হয়। খুচরা ব্যবসায়ীরা আড়ত থেকে সবজি কেনার পর প্রতি ১০০ টাকায় ৬ টাকা ২৫ পয়সা কমিশন যোগ হয়। এর বাইরে প্রতি ৫০ থেকে ৫৫ কেজির একটি বস্তা পরিবহনে মজুরি খরচ ৩০ থেকে ৩৫ টাকা। সব মিলিয়ে প্রতি কেজিতে আড়তের দামের সঙ্গে এক থেকে দুই টাকা আনুষঙ্গিক খরচ যোগ হয়। অথচ খুচরা বাজারে এসব সবজিই দুই থেকে আড়াই গুণ বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে।

খুচরা বাজারের বিক্রেতাদের দাবি, প্রতিটি বস্তায় পচা, নষ্ট বা নিম্নমানের সবজি থাকে। এসব সবজি ফেলে দিতে হয়। এসবের দাম যোগ করে নতুন দামে সবজি বিক্রি করতে হয় তাঁদের। কর্ণফুলী কমপ্লেক্স বাজারের সবজি বিক্রেতা মো. ইব্রাহিম নামের এক বিক্রেতার দাবি, প্রতিটি সবজির বস্তা ৫০ কেজি। এর মধ্যে ৫ কেজির মতো সবজি বাদ পড়ে। যদি দাম সমন্বয় না করা হয়, তাহলে লোকসান গুনতে হবে তাঁদের। 

জানতে চাইলে চট্টগ্রাম জেলা কৃষি বিপণন সমন্বয় কমিটির সভাপতি ও জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, অনেক ব্যবসায়ীই জানেন না যে এ ধরনের বিধিমালা রয়েছে। ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বৈঠকে বিষয়গুলো জানানো হচ্ছে। এরপর তাঁরা যদি বিধিমালা না মানে, তাহলে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হবে।