‘সিল মারবেন কাপড়ের মধ্যে, ব্যালট ভাঁজ করবেন এজেন্টের সামনে’

নাটোরের সিংড়া উপজেলায় এজেন্টের সামনে ব্যালট ভাঁজ করার নির্দেশদাতা প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহ্‌মেদ পলকের নির্বাচনী এজেন্ট মাহাবুর রহমান
ছবি: সংগৃহীত

নাটোর-৩ (সিংড়া) আসনের নৌকার প্রার্থী জুনাইদ আহ্‌মেদ পলকের নির্বাচনী এজেন্ট ও আওয়ামী লীগ নেতা মাহাবুর রহমান বলেছেন, ‘সিল মারবেন কাপড়ের মধ্যে, ব্যালট ভাঁজ করবেন এজেন্টের সামনে, এজেন্ট যেন বুঝতে পারে আপনি কাকে ভোট দিলেন। এই কাজটা করলে আমাদের বিজয় নিশ্চিত।’

গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় সিংড়া উপজেলার শুকাস ইউনিয়নের শুকাস বাজারে নৌকার উঠান বৈঠকে মাহাবুর রহমান এই বক্তব্য দেন। বক্তব্যের একটি অডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। মাহাবুর ওই ইউনিয়ন পরিষদের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য ও ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি। উঠান বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন শুকাস ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান আজাহারুল ইসলাম।

পথসভায় বক্তব্য দেওয়ার বিষয়টি সত্য বলে জানিয়েছেন নৌকার প্রার্থীর এজেন্ট মাহাবুর রহমান। তবে তাঁর দাবি, তাঁর বক্তব্যের কিছু অংশ সঠিকভাবে বলা হয়নি। আজ দুপুরে তিনি মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি সুষ্ঠুভাবে, আইন অনুসারে ভোট দিতে বলেছি। ভোটারদের কেন্দ্রে আনার কথা বলেছি। কিন্তু এজেন্টের সামনে ব্যালট ভাঁজ করতে বলিনি বা কেন্দ্রে ঈগলের এজেন্টকে আসতে নিষেধ করিনি।’

নাটোর-৩ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনীত নৌকার প্রার্থী তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহ্‌মেদ পলক। আর প্রতিদ্বন্দ্বী স্বতন্ত্র প্রার্থী (ঈগল) সিংড়া উপজেলা পরিষদের দুইবারের সাবেক চেয়ারম্যান শফিকুল ইসলাম।

উঠান বৈঠকে উপস্থিত ভোটারদের উদ্দেশে নৌকার প্রার্থীর এজেন্ট মাহাবুর রহমান বলেন, ‘যে ব্যক্তি রুমের মধ্যে ব্যালট ভাঁজাবে আমরা বুঝে নিব সে আমাদের ভোট দিচ্ছে না। আমরা বুঝে নিব সে নৌকায় ভোট দিবে না। নৌকাকে যদি বিজয়ী লাভ করাতে চান, তাহলে তেইশ শ ভোটারের (শুকাশ কেন্দ্রে) কাছে আমার এই মেসেজ পৌঁছে দিবেন। যারা নৌকায় ভোট দিতে দ্বিধাবোধ করবেন, তাঁরা সেন্টারে আসেন না।’ তিনি বলেন, ‘এই এলাকায় তো আমরা বসবাস করব। আগামী রোববার যেন কোন চিল (ঈগল) পাখির এজেন্ট সেন্টারে না আসে। আরও বলে দিবেন ৭ তারিখের পর কিন্তু ৮ তারিখ সকাল হবে।’

ভোটারদের উদ্দেশে আওয়ামী লীগ নেতা মাহাবুর রহমান বলেন, ‘ব্যালটে কাকে সিল মারবেন, এটা যেন এজেন্ট বুঝতে পারেন, আপনি কাকে সিল মারলেন। এটা দেখার জন্য কিন্তু মিন্টু থাকবে এক রুমে আর আমি থাকব আরেক রুমে। আর মহিলা রুমে আমার বউ ও ভাগিনি থাকবে। কে কোথায় ভোট দিচ্ছেন, ব্যালটটা বাক্সের কাছে যখন ভাঁজাবে, তখন তোমরা দেখে নিবে। এটা কিন্তু করতে হবে নৌকাকে বিজয় লাভ করাতে হলে এবং সফলতা আনতে হলে। নয়তো আমরা পরিশ্রমই করলাম, কিন্তু কাজের বেলায় গিয়ে হবে ঠনঠনাঠন।’

এমন বক্তব্যের জন্য মাহাবুর রহমানের শাস্তি হওয়া দরকার বলে মনে করেন ঈগল প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী শফিকুল ইসলাম। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘ভাইরাল হওয়া অডিওর সম্পূর্ণটাই মাহাবুর রহমানের কণ্ঠের। তিনি উঠান বৈঠকে প্রকাশ্যে ভোটারদের এজেন্টের সামনে ব্যালট ভাঁজ করার কথা বলে নির্বাচনী আইন লঙ্ঘন করেছেন। নিরপেক্ষ ভোট গ্রহণ হওয়া নিয়ে সন্দেহের সৃষ্টি করেছেন। একই সঙ্গে তিনি আমার এজেন্টদের কেন্দ্রে না যেতে বলে অন্যায় করেছেন। এর জন্য তাঁর শাস্তি হওয়া দরকার।’