নওগাঁ
আমন চাষে খরচ বাড়ছে
আমন আবাদে জমি প্রস্তুত ও ধানের চারা বাঁচাতে এখন কৃষকদের ভরসা ভূগর্ভস্থ পানি।
বাংলা দিনপঞ্জির হিসাবে শ্রাবণ মাসের অর্ধেক পার হতে চলেছে। বঙ্গোপসাগরীয় অঞ্চলে সাধারণত আষাঢ়-শ্রাবণেই ভারী মৌসুমী বৃষ্টিপাত হয়। এই বর্ষাকালে নওগাঁয় স্বাভাবিক বৃষ্টিপাত হচ্ছে না। আমন আবাদে জমি প্রস্তুত ও ধানের চারা বাঁচাতে এখন কৃষকদের ভরসা ভূগর্ভস্থ পানি। এতে খরচ বাড়ছে কৃষকের।
জেলার ১১ উপজেলার কমবেশি সব এলাকাতেই এবার খরার কবলে পড়েছে আমন। এর মধ্যে নিয়ামতপুর, পোরশা, সাপাহার, পত্নীতলা ও মহাদেবপুর উপজেলার অবস্থা বেশি খারাপ। বৃষ্টিপাত না হওয়ায় মৌসুমের শুরু থেকেই কৃষকেরা গভীর-অগভীর সেচযন্ত্র চালু করে আমনের চারা লাগাচ্ছেন। এদিকে লোডশেডিংয়ের কারণে সেচ কাজও ব্যাহত হচ্ছে। সঠিক সময়ে জমিতে সেচ দিতে না পারায় আমনের খেত ফেটে যাচ্ছে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, বরেন্দ্র বহুমুখী কর্তৃপক্ষ ও পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি সূত্রে জানা যায়, জেলায় চলতি মৌসুমে ১ লাখ ৯৬ হাজার ৩০০ হেক্টর জমিতে আমন আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। ইতিমধ্যে ২০ শতাংশ জমিতে ধানের চারা লাগানো হয়েছে। সেচের জন্য মাঠে ৪ হাজার ৮৬৮টি গভীর নলকূপ, ৪৮ হাজার ৭৯টি অভীর নলকূপ ও ২ হাজার ২২৭টি এলএলপি (লো লিফট পাম্প) সেচযন্ত্র রয়েছে। সব মিলিয়ে জেলায় ৫৫ হাজার ১৭৪টি সেচযন্ত্র রয়েছে। এর মধ্যে ১৭ হাজার ৪৯৫টি বিদ্যুৎচালিত সেচযন্ত্র। বাকি ৩৭ হাজার ৬৭৯টি সেচযন্ত্র ডিজেলচালিত। খরা মোকাবিলায় বিদ্যুৎ ও ডিজেলচালিত সেচযন্ত্রের প্রায় সবগুলোই চালু রয়েছে।
কৃষি বিভাগের কর্মকর্তা ও কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এক বিঘা জমিতে বিদ্যুৎ ও ডিজেলচালিত সেচযন্ত্র দিয়ে সেচ দিতে বর্তমানে ৪০০ থেকে ৪৫০ টাকা পর্যন্ত খরচ পড়ছে। আমনের চারা লাগানোর জন্য জমি প্রস্তুত ও খরার কবলে পড়া আমনের চারা বাঁচাতে ইতিমধ্যে দুবার সেচ দিতে হয়েছে। এই মৌসুমে এভাবে অনিয়মিত বৃষ্টিপাত চললে কমপক্ষে আরও ছয়বার সেচ দিতে হবে। সেই হিসাবে জেলার ১ লাখ ৯৬ হাজার হেক্টর আমনের ফসল রক্ষায় এবার সেচের খরচ বাবদ ব্যয় হবে প্রায় ৪০০ কোটি টাকা।
নিয়ামতপুর উপজেলার গোবিন্দপুর গ্রামের কৃষক সেলিম রেজা বলেন, ১৫ দিন ধরে দিন ধরে এলাকায় একপশলা বৃষ্টিও হয়নি। খরার কারণে চারা লাগানোর জন্য প্রস্তুত করা জমির মাটি ফেটে চৌচির হয়ে যাচ্ছে। যেসব জমিতে চারা লাগানো হয়েছে, পানির অভাবে ওই সব চারা মরে যেতে বসেছে। খরার কারণে মাটি শুকনা কাঠের মতো হয়ে থাকায় সেচ দিয়ে মাটি ভেজাতে অনেক বেশি পানি লাগছে। একদিকে খরা, আরেক দিকে চলছে লোডশেডিং। এতে খরচ বেড়ে যাচ্ছে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর নওগাঁ কার্যালয়ের উপপরিচালক আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘আমনের মৌসুম কেবলই শুরু হয়েছে। আগস্ট মাসজুড়েই আমনের চারা লাগানো যাবে। ইতিমধ্যে ২০ শতাংশ জমিতে চারা লাগানো সম্পন্ন হয়েছে। আশা করছি, সঠিক সময়েই আমনের চারা লাগানো সম্পন্ন হবে। তবে যেসব কৃষক সেচ দিয়ে চাষাবাদ করছেন, তাঁদের খরচ বাড়বে। গত বছরেও মৌসুমের শুরুতে তেমন বৃষ্টি ছিল না। তবে শেষের দিকে পর্যাপ্ত বৃষ্টিপাত হয়েছিল।’