পাহাড়ের ঢালে আশ্রয়ণ প্রকল্প, হাতির ভয়

সরকারের ১ একর ৬১ শতক জমিতে আশ্রয়ণ প্রকল্পে ৩৫টি পরিবারের বসতি। সেখানে বিদ্যুৎ না থাকায় রাতে বন্য হাতির ভয়ে থাকেন সবাই।

পাহাড়ের ঢালে আশ্রয়ণ প্রকল্প। বিদ্যুৎ না থাকায় বন্য হাতির ভয় ও আতঙ্কে রাত কাটান সেখানকার বাসিন্দারা। গতকাল শেরপুরের নালিতাবাড়ী উপজেলার বরুঙ্গা গ্রামে।
ছবি: প্রথম আলো

শেরপুরের নালিতাবাড়ী উপজেলার বরুঙ্গা পাহাড়ের ঢালে আশ্রয়ণ প্রকল্পের উপকারভোগী শেফালী বেগম (৫০)। বিদ্যুৎ না থাকায় বন্য হাতির ভয়ে আছেন তিনি। শুধু শেফালী নন, তাঁর মতো আশ্রয়ণ প্রকল্পের ৩৫টি পরিবারের দেড় শতাধিক উপকারভোগী একই ভয় ও আতঙ্কে থাকেন।

গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে শেফালী বেগম বলেন, ‘ঈদের পরে রাইত দরজা খুইলা দেহি সামনে আত্তি (হাতি) খাড়াইয়া রইছে। আরও ২০-২৫টা আত্তি ঘরের পিছনে খাড়াইয়া রইছে। লগে লগে দরজা বন্ধ কইরা দিছি। পরে স্বামী-পোলাপান লইয়া ডরে (ভয়ে) সারা রাইত চৌকির ওপর বইয়া রইছি। ফজরের আজানের পরে আত্তি সরছে। পরে হুনি সবাই আত্তির ভয়ে রাইত জাইগা কাডাইছে।’

উপজেলা প্রশাসন ও উপকারভোগী পরিবার সূত্রে জানা যায়, ২০১৮ সালে উপজেলার বরুঙ্গা পাহাড়ের ঢালে সরকারের ১ একর ৬১ শতক জমিতে আশ্রয়ণ প্রকল্প নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়। প্রতিটি ঘর নির্মাণে ব্যয় ধরা হয়েছে ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা। এতে মোট খরচ হয়েছে ৫২ লাখ টাকা। ঘরের সামনে ছোট্ট এক পাশে বারান্দা ও পেছনে একটি শৌচাগার। ৩৫ পরিবারের দেড় শতাধিক মানুষের জন্য আছে একটি নলকূপ।

আশ্রয়ণ প্রকল্পের বাসিন্দা গৃহবধূ রিনা বেগম বলেন, ‘সরকার ঘর দিছে। অহন যদি কারেন্টের একটা ব্যবস্থা কইরা দিত, তাইলে আমগরে নিরাপত্তার ব্যবস্থা অইতো।’

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) হেলেনা পারভীন বলেন, উপকারভোগীদের কবুলিয়ত দলিল হয়ে গেছে। দ্রুত কাগজপত্র বিদ্যুৎ বিভাগে পাঠানো হবে। আশা করা হচ্ছে, এক সপ্তাহের মধ্যে বিদ্যুৎ-সংযোগ দেওয়া সম্ভব হবে। নলকূপের বিষয়ে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলী অধিদপ্তরকে জানানো হয়েছে।

উপকারভোগীরা জানান, টিনের ঘরে কোনো জানালা নেই। শুধু একটা দরজা। প্রচণ্ড রোদে ঘরে থাকা যায় না। তখন ছোট ছোট বাচ্চা নিয়ে ঘর থেকে বাইরে গাছের নিচে আশ্রয় নিতে হয়। আর বিদ্যুৎ না থাকায় ঘরে রাতে ঠিকমতো ঘুমানো যায় না।

গতকাল সরেজমিনে দেখা যায়, বরুঙ্গা পাহাড়ের ঢালে আশ্রয়ণ প্রকল্পের পাশ দিয়ে চেল্লাখালি নদী বয়ে গেছে। ঘরের ওপর দিয়ে পল্লী বিদ্যুতের লাইন আছে। আশ্রয়ণ প্রকল্পের দুই পাশে সুউচ্চ পাহাড়। প্রকল্পের আঙিনায় মাটি ভরাট না করায় ছোট-বড় গর্ত তৈরি হয়েছে।

উপকারভোগী দিনমজুর আবুল কাশেম বলেন, ‘সন্ধ্যার পর ঘুটঘুটে অন্ধকার অইয়া যায়। প্রায়ই বন্য হাতি আহে। তহন সবাই জেগে ভয়ে রাইত পার করি। যদি আরও কয়েকটা নলকূপ ও বিদ্যুতের ব্যবস্থা অইত, তাইলে আমগর বিরাট উপকার অইত।’

উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা আবদুল হান্নান বলেন, উপকারভোগীদের জমির দলিল রেজিস্ট্রেশনের কিছুটা বিলম্ব হওয়ায় বিদ্যুৎ দেওয়া সম্ভব হয়নি। দলিলের কাজ শেষ হলেই তাঁরা বিদ্যুৎ পেয়ে যাবেন।