দীঘিনালায় জেএসএস (সন্তু লারমা) সমর্থককে গুলি করে হত্যা

হত্যা
প্রতীকী ছবি

খাগড়াছড়ির দীঘিনালার ভারত সীমান্তবর্তী দুর্গম নাড়াইছড়িতে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি (জেএসএস, সন্তু লারমা) পক্ষের সমর্থক দর্পণ চাকমাকে (৩২) দুর্বৃত্তরা গুলি করে হত্যা করেছে। আজ সোমবার সকালে নাড়াইছড়ি বাজার এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।

ঘটনার জন্য জেএসএস (সন্তু লারমা) পক্ষ ইউনাইটেড ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপডিএফ, প্রসীত খীসা) পক্ষকে দায়ী করেছে। তবে ইউপিডিএফ (প্রসীত খীসা) পক্ষ দাবি করেছে, জেএসএসের (সন্তু লারমা) দুটি পক্ষের অভ্যন্তরীণ কোন্দলের কারণে এ হত্যাকাণ্ড ঘটেছে।

নিহত দর্পণ চাকমার বাড়ি কেউ জানিয়েছেন বান্দরবান, কেউ কেউ বলছেন তিনি নাড়াইছড়ির বাসিন্দা। তবে তাঁর সংগঠন জেএসএস (সন্তু লারমা) পক্ষের লোকজন এ বিষয়ে নিশ্চিত তথ্য জানাতে পারেননি।

স্থানীয় একাধিক সূত্রে জানা যায়, আজ সকালে দর্পণ চাকমা ৫ নম্বর বাবুছড়া ইউনিয়নের ভারত সীমান্তবর্তী দুর্গম নাড়াইছড়ি বাজারে দোকানে বসে ছিলেন। এ সময় ৮-১০ জনের একটি সশস্ত্র দল তাঁকে দোকান থেকে ধরে নিয়ে মাইনী নদীর পাড়ে গুলি করেন। ঘটনাস্থলেই দর্পণ চাকমা মারা যান।

২০২০ সালের ২০ অক্টোবর ১১৫ জন কারবারি (গ্রামপ্রধান) যৌথ বিবৃতি দিয়ে ভ্রাতৃঘাতী সংঘাত বন্ধ ও ২০১৮ সালের সমঝোতা চুক্তি মেনে চলার জন্য দুই সংগঠনের প্রতি আহ্বান জানান।

জেএসএস (সন্তু লারমা) বাঘাইছড়ি থানা কমিটির সাধারণ সম্পাদক ত্রিদিব চাকমা প্রথম আলোকে বলেন, ‘নিহত দর্পণ চাকমা আমাদের সংগঠনের সমর্থক ছিলেন। তিনি পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়নের পক্ষে কথা বলতেন। এ কারণে আজ সকালে ইউপিডিএফ (প্রসীত খীসা) পক্ষের অস্ত্রধারীরা তাঁকে দোকান থেকে ধরে নিয়ে গুলি করে হত্যা করেছে।’ তিনি দাবি করেন, ‘ইউপিডিএফ (প্রসীত খীসা) পক্ষ যে অভিযোগ তুলেছেন তা সত্য নয়। আমাদের সংগঠনে কোনো বিরোধ বা কোন্দল নেই। আমাদের সংগঠন ঐক্যবদ্ধভাবে পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়নে গণতান্ত্রিকভাবে আন্দোলন করে।’

ইউপিডিএফ (প্রসীত খীসা) দীঘিনালা উপজেলা সংগঠক সজীব চাকমা প্রথম আলোকে বলেন, ‘দর্পণ চাকমা হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে আমাদের সংগঠনের কোনো সম্পৃক্ততা নেই। নাড়াইছড়ি এলাকায় আমাদের কোনো সাংগঠনিক কার্যক্রমও নেই। আমরা জানতে পেরেছি, জেএসএস (সন্তু লারমা) পক্ষের একটি পক্ষ ভ্রাতৃঘাতী সংঘাত বন্ধ চায়, আরেকটি পক্ষ সংঘাত চায়। দুই পক্ষের অভ্যন্তরীণ কোন্দলের কারণে দর্পণ চাকমা মারা গেছেন।’

দীঘিনালা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা কে এম পেয়ার আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘নাড়াইছড়ি এলাকায় একজনকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে বলে শুনেছি। ওখানে নেটওয়ার্ক না থাকায় বিস্তারিত জানা সম্ভব হয়নি।’

প্রথম আলোর তথ্যানুসন্ধানে জানা যায়, ২০১৮ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি জেএসএস (সন্তু লারমা) ও ইউপিডিএফ (প্রসীত খীসা) দুই দলের উচ্চ পর্যায়ের নেতাদের মধ্যে আলোচনার মাধ্যমে সমঝোতা চুক্তি হয়। ২০২০ সাল থেকে সাংগঠনিক এলাকায় অবস্থান নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে মতবিরোধ দেখা দেয়। এ নিয়ে ২০২০ সালের ২০ অক্টোবর ১১৫ জন কারবারি (গ্রামপ্রধান) যৌথ বিবৃতি দিয়ে ভ্রাতৃঘাতী সংঘাত বন্ধ ও ২০১৮ সালের সমঝোতা চুক্তি মেনে চলার জন্য দুই সংগঠনের প্রতি আহ্বান জানান। অপরদিকে ইউপিডিএফের সঙ্গে সরকারের সংলাপ প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে মধ্যস্থতাকারীর মাধ্যমে চলতি বছরের ৯ জুন ইউপিডিএফ সরকারের কাছে একটি দাবিনামা পেশ করে। দাবিনামা পেশ করার এক দিন পরেই জেএসএস ও ইউপিডিএফের মধ্যে বিরোধ প্রকাশ্যে রূপ নেয়। ১১ জুন থেকে দুটি সংগঠনের আধিপত্য বিস্তার নিয়ে কয়েক দফা বন্দুকযুদ্ধ হয়। ১২ জুলাই ইউপিডিএফের সংগঠক জীবন ত্রিপুরা (২৬) এবং ১৮ জুলাই শরৎজ্যোতি চাকমা (১৯) নামে ইউপিডিএফের এক কর্মীকে গুলি করে হত্যা করা হয়।