জামালপুরে প্রখর রোদ ও লোডশেডিং, শুকিয়ে যাচ্ছে বোরো খেত

তীব্র তাপপ্রবাহ ও পানির অভাবে বেশির ভাগ খেতে ফাটল ধরেছে। সেচপাম্পগুলো নিরবচ্ছিন্ন চালাতে না পারায় এ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে।

পানির অভাবে বোরো ধানগাছের গোড়া শুকিয়ে যাচ্ছে। গতকাল সকালে জামালপুরের মেলান্দহ উপজেলার ঘোষেরপাড়া ইউনিয়নের ছবিলাপুর এলাকায়ছবি: প্রথম আলো

যেদিকে চোখ যায়, মাঠজুড়ে সবুজ ধানখেত। বাতাসে দুলছে বোরো ধানের গাছগুলো। এ রকম বেড়ে ওঠা ধানগাছে কৃষকের মন ভরে ওঠার কথা। কিন্তু মন ভালো নেই কৃষকের। উদ্বেগ–উৎকণ্ঠায় দিন কাটছে তাঁদের। তীব্র তাপপ্রবাহে পানির অভাবে বোরো ধানের খেতের মাটি শুকিয়ে যাচ্ছে। তীব্র তাপপ্রবাহ ও লোডশেডিংয়ের কারণে পর্যন্ত পানিও দেওয়া যাচ্ছে না। এতে অনেক জমিরই মাটি শুকিয়ে ফেটে যাচ্ছে। দ্রুত পর্যাপ্ত পানির ব্যবস্থা করা না গেলে ধানগাছের ক্ষতির আশঙ্কা করছেন কৃষকেরা।

জামালপুরের মেলান্দহ সদর উপজেলার ঘোষেরপাড়া ইউনিয়নের ছবিলাপুর এলাকার ধানখেতগুলোয় পানির এ সংকট দেখা দিয়েছে। ওই এলাকায় অর্ধশত কৃষকের ধানের খেত রয়েছে। তীব্র তাপপ্রবাহ ও পানির অভাবে বেশির ভাগ খেতে ফাটল ধরেছে। সেচপাম্পগুলো নিরবচ্ছিন্ন চালাতে না পারায় এ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে।

সব ধানগাছ থেকে শিষ বের হচ্ছে। এই সময় পানি নাই খেতে। এখন যদি পানি না থাকে, তাহলে বেশির ভাগ ধান চিটা হয়ে যাবে।
আলতাফুর রহমান, কৃষক

মেলান্দহ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আবদুল্লাহ আল ফয়সাল প্রথম আলোকে বলেন, এ সংকট মোকাবিলায় আরও ২০ দিন আগে থেকে কৃষকদের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। প্রত্যেকটি এলাকাভিত্তিক মসজিদ ও স্কুলের মাধ্যমেও কৃষকদের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। ইতিমধ্যে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির সঙ্গেও আলোচনা হয়েছে। প্রতিদিন দিবাগত রাত ১২টার পর থেকে নিরবচ্ছিন্ন টানা চার ঘণ্টা বিদ্যুৎ যাতে থাকে, যাতে কৃষক তাঁদের খেতে পরিমাণমতো সেচ দিতে পারেন। তিনি আরও বলেন, পর্যাপ্ত পানি না দেওয়া গেলে, যেসব ধানের গাছে পরাগায়ন হয়নি, সেসব খেতের ধানগাছের সমস্যা হতে পারে। ধানে চিটা বেশি হতে পারে।

এ ছাড়া কয়েকজন কৃষকের সঙ্গে কথা হয়। তাঁরা জানান, দুই সপ্তাহ ধরে তাপমাত্রা বেড়েছে। সেই সঙ্গে হচ্ছে তীব্র লোডশেডিং। ঘন ঘন লোডশেডিং হওয়ার কারণে বোরো ধানখেতে সেচ দেওয়া যাচ্ছে না। দিন-রাত ২৪ ঘণ্টার মধ্যে কয়েক ঘণ্টা বিদ্যুৎ থাকে। সেচের অভাবে চার-পাঁচ দিন আগেই ধানখেতগুলো শুকিয়ে গেছে। তাপমাত্রা বেশি থাকায় এখন খেতগুলোর মাটি ফাটল ধরেছে। প্রায় খেতে ধানের শীষ (ফুল) বের হচ্ছে। এ সময় খেতে পর্যাপ্ত সেচ দিতে না পারলে, ধানগুলো চিটা হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তিন থেকে চার ঘণ্টা টানা বিদ্যুৎ থাকলে এ সমস্যা হতো না।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, উপজেলায় বোরো ধান চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা ছিল ২০ হাজার ২৫০ হেক্টর। বোরো ধান চাষ হয়েছে ২০ হাজার ১৫০ হেক্টর জমিতে। লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণের চেয়ে ১০০ হেক্টর জমিতে বোরো ধান চাষ কম হয়েছে।

ছবিলাপুর এলাকার কৃষক জহুরুল ইসলাম বলেন, ২৪ ঘণ্টার মধ্যে সর্বোচ্চ চার থেকে তিন ঘণ্টা বিদ্যুৎ থাকছে। দিনের বেলায় সর্বোচ্চ ১ ঘণ্টা, রাতের বেলায় দুই থেকে তিন ঘণ্টা বিদ্যুৎ থাকে। যে পরিমাণ সময় বিদ্যুৎ থাকে, সেই সময়ে সর্বোচ্চ দুই বিঘা জমিতে পানি দেওয়া যায়। আর বাকি জমিতে পানি দেওয়া যাচ্ছে না। এতে ধানখেত শুকিয়ে যাচ্ছে। ভালো ফলন নিয়ে শঙ্কা দেখা দিয়েছে।

একই এলাকার কৃষক আলতাফুর রহমান বলেন, ‘সব ধানগাছ থেকে শীষ বের হচ্ছে। এই সময় পানি নাই খেতে। এখন যদি পানি না থাকে, তাহলে বেশির ভাগ ধান চিটা হয়ে যাবে। বিদ্যুৎ না থাকায় খেতে পানি দিতে পারছি না। সব খেত শুকিয়ে গেছে। অনেক খেত ফাটল ধরেছে।’

জামালপুরের পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির উপমহাব্যবস্থাপক (ডিজিএম-কারিগরি) প্রকৌশলী মাহমুদুল হাসান জানান, তাঁদের এ মুহূর্তে ১৪৪ মেগাওয়াট বিদ্যুতের চাহিদা রয়েছে। কিন্তু পাওয়া যাচ্ছে চাহিদার অর্ধেক বিদ্যুৎ। ফলে লোডশেডিংয়ের পরিমাণ কিছুটা বেড়েছে। যেসব এলাকায় কৃষিজমি বেশি। সেসব এলাকায় টানা ৩ ঘণ্টা বিদ্যুৎ রাখার পরিকল্পনা করা হচ্ছে।