নতুন উপাচার্য না আসা পর্যন্ত কুয়েটে ক্লাস নয়: শিক্ষক সমিতি
খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (কুয়েট) নতুন উপাচার্য নিয়োগ না হওয়া পর্যন্ত ক্লাস শুরু হবে না বলে জানিয়েছেন শিক্ষকেরা। আজ সোমবার দুপুরে শিক্ষক সমিতির জরুরি সাধারণ সভার পর এ কথা জানান শিক্ষকনেতারা। তাঁরা বলেন, উপাচার্য ছাড়া অচলাবস্থা কাটবে না। তাঁর দায়িত্ব নেওয়ার পরই সব কার্যক্রম শুরু হবে।
এর আগে আজ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের সভাকক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের চলমান পরিস্থিতিতে করণীয় নির্ধারণ প্রসঙ্গে ওই সভার আহ্বান করা হয়।
কুয়েট শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ফারুক হোসেন বলেন, ‘উপাচার্য এসে উদ্যোগ নিলেই সেদিন থেকে সব কার্যক্রম শুরু হবে। এই দাবি আমরা আগেও লিখিতভাবে জানিয়েছি। আবারও সম্মিলিতভাবে জানাতে আগামীকাল মঙ্গলবার সকাল ১১টায় মানববন্ধনের আয়োজন করছি। সেখানে ছাত্র, শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারী, অভিভাবক—সবার উপস্থিতি থাকবে।’
শিক্ষক সমিতির আন্দোলন কর্মসূচি স্থগিত হয়েছে কি না—এমন প্রশ্নের জবাবে ফারুক হোসেন বলেন, ‘যখন থেকে উপাচার্য নেই, তখন থেকেই কার্যত আন্দোলন কর্মসূচি কার্যকর নেই। আমাদের কর্মসূচির মাঝে উপাচার্য চলে গেছেন। দাবিটা ছিল তাঁর কাছে। সুতরাং এটার কার্যকারিতা হারিয়ে গেছে।’
তিনি আরও বলেন, ’অনেকটা সময় পেরিয়ে গেছে। এখন ক্লাস শুরুর জন্য ছাত্র-শিক্ষক সবাই এক জায়গায় আছি। কিন্তু টেকনিক্যাল কারণে উপাচার্য ছাড়া ক্লাস শুরু করা সম্ভব হচ্ছে না। আমাদের আগের দাবি ছিল বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশৃঙ্খলার জন্য দায়ীদের চিহ্নিত করে বিচার করতে হবে। এটাতো সবার দাবি। এটার সঙ্গে কোনো বিরোধ নেই। কিন্তু ক্লাস চালুর জন্য উপাচার্য লাগবে। উপাচার্যের অনুপস্থিতিতে একাডেমিক ও প্রশাসনিক কার্যক্রম চালানো যাচ্ছে না। এখন প্রধান দাবি হলো দ্রুত উপাচার্য নিয়োগ।’
তবে সভায় উপস্থিত একজন জ্যেষ্ঠ অধ্যাপক প্রথম আলোকে বলেন, কোনো সুস্পষ্ট সমাধান ছাড়াই সভা শেষ হয়েছে বরং সমিতির অভ্যন্তরীণ মতানৈক্য আরও প্রকটভাবে সামনে এসেছে। আন্দোলন স্থগিত কি না, সেটাও স্পষ্ট করা হয়নি। সব মিলিয়ে মনে হচ্ছে কুয়েট শিক্ষক সমিতি একটি একক ও সমন্বিত সিদ্ধান্ত গ্রহণে ব্যর্থ হচ্ছে। এই অভ্যন্তরীণ বিভক্তি উপাচার্য নিয়োগের দাবি এবং চলমান সংকট নিরসনের প্রক্রিয়াকে আরও দীর্ঘায়িত করতে পারে বলে আশঙ্কা হচ্ছে।
দ্বিতীয় দিনের মতো শ্রেণিকক্ষে শিক্ষার্থীরা
আজ সোমবার দ্বিতীয় দিনের মতো শিক্ষার্থীরা শ্রেণিকক্ষে উপস্থিত হলেও কোনো শিক্ষক সেখানে যাননি। তড়িৎ ও ইলেকট্রনিক কৌশল (ইইই) বিভাগের ২১ ব্যাচের এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘আমরা ক্লাসে আসা অব্যাহত রাখতে চাই। আজও শিক্ষকদের সঙ্গে আমাদের কথা হয়েছে। তাঁরা জানিয়েছেন, উপাচার্য ছাড়া একাডেমিক কাউন্সিল দেওয়া সম্ভব নয়। এখন আমাদেরও চাওয়া, দ্রুত একজন উপাচার্য নিয়োগ দেওয়া হোক। শুধু ক্লাস শুরু করাই নয়, আমাদের নিরাপত্তা নিয়েও আমরা উদ্বিগ্ন।’
সংকট নিরসনে তদন্ত কমিটি
খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুয়েট) ‘শিক্ষা কার্যক্রম ব্যাহত ও সৃষ্ট অস্বাভাবিক পরিস্থিতির’ কারণ অনুসন্ধানে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। গতকাল রোববার শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের বৃত্তি ও প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সিনিয়র সহকারী সচিব এ এস এম কাসেমের সই করা এক প্রজ্ঞাপনে এ কমিটি গঠনের কথা জানানো হয়।
কমিটিতে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সাবেক চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ আবদুল মজিদকে আহ্বায়ক করা হয়েছে। এ ছাড়া সদস্য করা হয়েছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং বিভাগের অধ্যাপক এ কে এম গোলাম রব্বানী মণ্ডল এবং বুয়েটের কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং (সিএসই) বিভাগের অধ্যাপক মাসরুর আলীকে।
কমিটিকে ফেব্রুয়ারিতে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার ঘটনাকে কেন্দ্র করে উদ্ভূত পরিস্থিতির জন্য দায়ী ব্যক্তিদের চিহ্নিত করা, শিক্ষা কার্যক্রম ব্যাহত হওয়ার কারণ উদ্ঘাটন, সংশ্লিষ্টদের ভূমিকা নিরূপণ, উপাচার্যের অনুপস্থিতিতে আর্থিক কার্যক্রম সম্পাদন হয়ে থাকলে এর আইনগত বৈধতা যাচাই এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাবমূর্তি পুনরুদ্ধার ও সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে নিরবচ্ছিন্ন শিক্ষা কার্যক্রম চালু রাখতে সুপারিশ করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। আগামী দুই মাসের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়েছে।
গত ১৮ ফেব্রুয়ারি ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধের দাবিকে কেন্দ্র করে কুয়েটে সংঘর্ষে শতাধিক ব্যক্তি আহত হন। পরে আন্দোলনের মুখে উপাচার্য ও সহ–উপাচার্যকে অপসারণ করে সরকার। ১ মে চুয়েটের অধ্যাপক হজরত আলীকে অন্তর্বর্তী উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হলেও শিক্ষকদের বিরোধিতার মুখে ২২ মে তিনি পদত্যাগ করেন। ১০ জুন উপাচার্য নিয়োগের জন্য বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হলেও নিয়োগপ্রক্রিয়া অগ্রসর হয়নি।