সাতক্ষীরার ভোমরা ইমিগ্রেশনের শূন্যরেখা; গতকাল বুধবার দুপুর সাড়ে ১২টা। বিজিবির উপস্থিতিতে একটি অ্যাম্বুলেন্স এসে থামল। ভেতরে আছিয়া বেগমের মরদেহ। মায়ের মরদেহ দেখার জন্য সীমান্তের ওপারে ভারতের ঘোঝাডাঙ্গা ইমিগ্রেশনে অপেক্ষা করছিলেন শরীফা বেগম। বিএসএফের সদস্যরা শরীফা বেগমকে অ্যাম্বুলেন্সের কাছে নিয়ে আসেন। মায়ের মুখ দেখে কান্নায় ভেঙে পড়েন শরীফা।
আছিয়া বেগম (৮০) দেবহাটা উপজেলা সদরের মৃত আহম্মদ আলীর স্ত্রী। গতকাল বুধবার ভোরে বার্ধক্যজনিত রোগে আছিয়া বেগমের মৃত্যু হয়। এ দম্পতির ছয় ছেলেমেয়ে। এর মধ্যে শরীফা বেগমের বিয়ে হয়েছে ভারতের বসিরহাট মহকুমার হরিপুর গ্রামে। তিনি এখন ওই দেশের নাগরিক। ভিসা না থাকায় মায়ের মৃত্যুর খবর শুনেও শরীফা বাংলাদেশে আসতে পারছিলেন না। পরে শরীফা ও তাঁর স্বজনদের আবেদনে সাড়া দেয় দুই দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিবি ও বিএসএফ। শেষবারের মতো মায়ের মুখ দেখার সুযোগ পান শরীফা।
আছিয়া বেগমের নাতি মেহেদি হাসান বলেন, তাঁর দাদি বেগম কয়েক মাস ধরে অসুস্থ ছিলেন। হঠাৎ মঙ্গলবার রাতে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন। গতকাল সকাল ছয়টার দিকে তিনি মারা যান। তাঁর ফুফু (শরীফা) ভারতের নাগরিক। তিনি তাঁর মাকে দেখার জন্য ভিসার আবেদন করেছিলেন। কিন্তু ভিসা পাওয়ার আগেই দাদি মারা গেলেন। তাঁর মৃত্যুর সংবাদ শুনে ফুফু কান্নাকাটি করতে করতে অসুস্থ হয়ে পড়েন। একবারের জন্য তিনি মায়ের মুখ দেখতে চেয়েছিলেন। পরে তিনি (মেহেদি) গতকাল সকাল নয়টার দিকে বিজিবির ভোমরা কোম্পানি কমান্ডার সুবেদার আফজাল হোসেন খানের কাছে এ বিষয়ে আবেদন জানান।
বিজিবি ও বিএসএফের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে মেহেদি হাসান বলেন, ‘দুই দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর এ উদ্যোগ সম্প্রীতির বড় উদাহরণ। এভাবে সম্প্রীতির মধ্য দিয়ে চলতে চায় সীমান্তের মানুষ। বাংলাদেশ ও ভারতের সীমান্তের লোকজনের উভয় দেশে আত্মীয়স্বজন আছে। মৃত্যুর মতো এ রকম পরিস্থিতি যদি ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষ কয়েক ঘণ্টার জন্য ভিসা কিংবা দেখা করার অনুমতির ব্যবস্থা করে, তাহলে সবার জন্য সুবিধা হয়।’
বিজিবির ভোমরা কোম্পানি কমান্ডার সুবেদার আফজাল হোসেন খান আজ বৃহস্পতিবার মুঠোফোনে বলেন, আছিয়া বেগম মারা যাওয়ার পর তাঁর নাতি মেহেদি হাসান একটি মানবিক আবেদন জানিয়েছিলেন। সেই পরিপ্রেক্ষিতে তিনি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলেন। তাদের নির্দেশনামতো ভারতের ঘোঝাডাঙ্গা কোম্পানি কমান্ডার এসি নবীন কুমারের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। দুই বাহিনীর মধ্যস্থতায় ভারতের নাগরিক শরীফা বেগম তাঁর মাকে শেষবারের মতো দেখতে পেলেন।
আফজাল হোসেন খান আরও বলেন, ‘এর আগে কখনো এমন ঘটনা ঘটেনি। এ মহতি উদ্যোগে শরিক হতে পেরে আমি আনন্দিত ও গর্বিত।’