বরিশাল বিভাগ
কম বৃষ্টি ও বেশি তাপে আমন আবাদ ব্যাহত
গতকাল পর্যন্ত ৩৬ হাজার ৮৮৪ হেক্টরে আবাদ হয়েছে, যা লক্ষ্যমাত্রার ৫ দশমিক ৩০ শতাংশ।
বরিশালসহ দক্ষিণাঞ্চলে এবার বর্ষা মৌসুমে স্বাভাবিকের চেয়ে কম বৃষ্টিপাত হয়েছে। এতে আমনের আবাদ ব্যাহত হচ্ছে। এপ্রিলের শুরু থেকেই এ অঞ্চলে তাপমাত্রাও অপেক্ষাকৃত বেশি। বর্ষাকালেও পরিস্থিতির খুব একটা হেরফের হয়নি।
বরিশাল বিভাগীয় কৃষি অধিদপ্তর বলছে, এবার বিভাগের ৬ জেলায় আমন আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ৬ লাখ ৯৪ হাজার ৯৬৩ হেক্টর। গতকাল সোমবার পর্যন্ত ৩৬ হাজার ৮৮৪ হেক্টরে আবাদ হয়েছে, যা লক্ষ্যমাত্রার ৫ দশমিক ৩০ শতাংশ। নিচু জমিতে জুলাইয়ের মাঝামাঝি ও উঁচু জমিতে সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝিতে আমনের চারা রোপণ করা যাবে।
বৃষ্টির অভাবে জমি চাষ ও ধানের চারা রোপণ করতে পারছেন না কৃষকেরা। অনেক কৃষকের আমনের বীজতলা নষ্ট হয়ে গেছে কয়েক দফা। বরিশালের উজিরপুরের ধামুরা এলাকায় কৃষক সিরাজুল ইসলাম গত রোববার বলেন, সাড়ে তিন একর জমিতে আমন আবাদের প্রস্তুতি নিয়েছেন। কিন্তু বৃষ্টি না হওয়ায় আড়াই একর জমিতে ধান রোপণ করতে পারেননি। এদিকে বীজতলা নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।
বাকেরগঞ্জের কৃষ্ণকাঠি গ্রামের কৃষক জালাল গাজী, জাহাঙ্গীর হাওলাদার ও আহমেদ শিকদার বলেন, তাঁরা প্রত্যেকে আড়াই থেকে তিন একর জমি দুইবার চাষ দিয়ে রেখেছেন। কিন্তু পানির অভাবে চারা রোপণ করতে পারছেন না। ৮-১০ দিনের মধ্যে বৃষ্টি না হলে এবার আমন চাষ করতে পারবেন না।
একই রকম শঙ্কায় আছেন বরগুনা সদর উপজেলার হেউলিবুনিয়া এলাকার কৃষক নজরুল ইসলাম। তিনি বলেন, বলেন, আষাঢ়-শ্রাবণ মাসে এই রকম খরা আর দেখেননি। এবার আমনের আবাদ করতে পারবেন কি না, তা নিয়ে বেশ দুশ্চিন্তায় আছেন।
আবহাওয়া বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দীর্ঘমেয়াদি তাপপ্রবাহের ফলে বর্ষা মৌসুমে মৌসুমি বায়ু বঙ্গোপসাগর থেকে দেশের অভ্যন্তরে প্রবেশ করলেও জমাট বাঁধতে পারছে না। এতে বর্ষা মৌসুমে কম বৃষ্টি ঝরেছে।
ফেব্রুয়ারি থেকে সদ্য সমাপ্ত জুলাই পর্যন্ত তাপমাত্রা ৩২-৩৬ ডিগ্রির মধ্যে ওঠানামা করেছে। এ ক্ষেত্রে অনুভূত তাপমাত্রা ৪৪-৪৬ ডিগ্রি।
আবহাওয়া বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, বরিশাল বিভাগে জানুয়ারিতে স্বাভাবিক বৃষ্টিপাত হওয়ার কথা ছিল ৮ দশমিক ৯ মিলিমিটার, সেখানে বৃষ্টি হয়েছে ৪ দশমিক ৩। ফেব্রুয়ারিতে বিভাগে স্বাভাবিকের চেয়ে কিছুটা বেশি বৃষ্টিপাত হয়। ২৭ মিলিমিটার বৃষ্টি হওয়ার কথা থাকলেও হয়েছিল ৩৬ দশমিক ৪। তবে মার্চে ৫৭ দশমিক ১ মিলিমিটার বৃষ্টি হওয়ার কথা থাকলেও বৃষ্টি হয়নি এক ফোঁটাও। এপ্রিলে স্বাভাবিক বৃষ্টিপাত হওয়ার কথা ছিল ১৩৫ দশমিক ৫ মিলিমিটার, সেখানে মাত্র ৬ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। আর মে মাসে ২৩২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হওয়ার কথা, সেখানে ২০০ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়। আবার জুনে ৪০৮ দশমিক ৪ মিলিমিটার বৃষ্টি হওয়ার কথা থাকলেও হয়েছে ৩১৪ মিলিমিটার এবং জুলাইতে ৪০৭ মিলিমিটার বৃষ্টির কথা থাকলেও হয়েছে ১৯৪ মিলিমিটার।
বরিশাল আবহাওয়া কার্যালয়ের জ্যেষ্ঠ পর্যবেক্ষক মাসুদ রানা বলেন, এবার জানুয়ারি থেকে তাপমাত্রার ঊর্ধ্বগতি লক্ষ করা যাচ্ছে। সেই সঙ্গে বৃষ্টিহীনতা তাপমাত্রাকে আরও অসহনীয় ও ঊর্ধ্বগামী করে তুলছে। জুন-জুলাই মূল বর্ষাকাল হলেও স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক কম বৃষ্টিপাত হয়েছে। মূলত অধিক তাপমাত্রার কারণেই এটা হয়েছে। তবে আগস্টে কাঙ্ক্ষিত বৃষ্টিপাতের আশা আছে। তবে তাপমাত্রা আগের মতোই অক্ষুণ্ন থাকবে বলে মনে হচ্ছে।
প্রয়োজনীয় বৃষ্টিপাত না হওয়ায় তাপমাত্রা বাড়ছে এবং ক্রমেই তা চরমভাবাপন্ন রূপ নিচ্ছে বলে মনে করেন বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপকূল শিক্ষা ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিভাগের চেয়ারম্যান হাফিজ আশরাফুল হক। তিনি বলেন, মূলত প্রকৃতির যে সিংকগুলো রয়েছে, যেমন মাটি, জলাধার, বনভূমি—এসব তাপ শোষণ করে তা সহনীয় পর্যায়ে নিয়ে অবমুক্ত করে। কিন্তু এসব প্রাকৃতিক সিংক সংকুচিত হওয়ায় এখন তাপ শোষণ করছে কংক্রিট। আর কংক্রিটের তাপ শোষণ করে সহনীয় পর্যায়ে নেওয়ার ক্ষমতা না থাকায় একই মাত্রায় তা অবমুক্ত করে। ফলে দিন-রাতের তাপমাত্রা খুব একটা পার্থক্য থাকে না। এর সঙ্গে বৈশ্বিক উষ্ণতারও হাত রয়েছে।
হাফিজ আশরাফুল হক আরও বলেন, ‘উষ্ণতা কমানোর ব্যাপারে এখন বিশ্বব্যাপী আলোচনা হচ্ছে। আমাদের এ ক্ষেত্রে প্রথম ও প্রধান কাজ হচ্ছে মাটি, জলাধার ও বনভূমিকে সুরক্ষা ও সম্প্রসারণ।’