অভিভাবকদের অভিযোগ, ঘাড়ে সমস্যা নিয়ে ভর্তি শিশুর তলপেটে অস্ত্রোপচার
বরিশালে শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে অভিভাবককে না জানিয়ে এক শিশুর (৬) তলপেটে অস্ত্রোপচার করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। অভিভাবকেরা বলছেন, তাঁদের সন্তানের ঘাড়ে সমস্যা ছিল। গত শনিবার তাকে ঘাড়ের অস্ত্রোপচারের জন্য ভর্তি করা হয়। কিন্তু তার তলপেটে অস্ত্রোপচার করা হয়েছে।
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছে, শিশুটি একই সঙ্গে ঘাড় ও হার্নিয়ার সমস্যায় ভুগছে। প্রথমে হার্নিয়ার অস্ত্রোপচার করা হয়েছে। পরে অন্যটি করা হবে। তবে এখানে নিয়মের যে ব্যত্যয় হয়েছে, সেটা হলো, অস্ত্রোপচারের আগে রোগী ও রোগীর স্বজনদের প্রয়োজনীয় তথ্য দেওয়া হয়নি।
বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন (বিএমএ) বরিশালের সভাপতি ইসতিয়াক হোসেন গতকাল সোমবার রাতে প্রথম আলোকে বলেন, আইন অনুযায়ী কোনো রোগী স্বাস্থ্যসেবাকেন্দ্রে গেলে তাঁর অস্ত্রোপচারের প্রয়োজন হলে প্রথমে রোগীকে জানাতে হবে কোন সমস্যার কারণে অস্ত্রোপচার দরকার এবং এতে কী সুবিধা হবে। মৌখিক সম্মতি দেওয়ার পর রোগীর কাছ থেকে লিখিত অনুমতি নিতে হবে। এ ক্ষেত্রে শিশু বা অপ্রকৃতিস্থ হলে অবশ্যই তাদের অভিভাবকের লিখিত সম্মতি লাগবে। এটা আইন, এটাই নিয়ম। এটা না করা অবশ্যই আইনের লঙ্ঘন।
শিশুটি বরিশাল নগরের নথুল্লাবাদ এলাকায় তার পরিবারের সঙ্গে থাকে। তার বাবা দিনমজুর। তার মা–বাবা বলেন, ঘাড়ের সমস্যার কারণে ১৬ জুলাই ওই শিশুকে শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের শিশু সার্জারি বিভাগে ভর্তি করা হয়। এরপর বেশ কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে তার ঘাড়ে অস্ত্রোপচারের দিন ধার্য করেন চিকিৎসকেরা। শনিবার তার অস্ত্রোপচার করা হয়। দেড় ঘণ্টা পর অস্ত্রোপচার কক্ষ থেকে যখন ওই শিশুকে বাইরে আনা হয়, তখন তার মা–বাবা দেখেন ঘাড়ে নয়, অস্ত্রোপচার করা হয়েছে তলপেটে।
সঙ্গে সঙ্গে শিশুটির মা-বাবা চিকিৎসকদের কাছে এর কারণ জানতে গেলে ওই বিভাগের দায়িত্বরত চিকিৎসক বলেন, শিশুটির হার্নিয়ার অস্ত্রোপচার করা হয়েছে। অস্ত্রোপচারের কথা কেন তাঁদের জানানো হয়নি, এমন প্রশ্ন তুললে চিকিৎসকেরা তাঁদের ভুল স্বীকার করেন। গতকাল সকালে শিশুটিকে হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র দেওয়া হয়।
শিশুর মা বলেন, ঘাড়ের সমস্যার কারণে প্রথমে তাঁর ছেলেকে হাসপাতালের বহির্বিভাগে নিয়ে চিকিৎসক দেখান। সেখানকার চিকিৎসকের পরামর্শে ছেলেকে হাসপাতালে ভর্তি করেন। পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে একজন চিকিৎসক বলেন, ঘাড়ের একপাশের কিছু মাংস বেড়েছে। এ জন্য অস্ত্রোপচার করা প্রয়োজন।
শিশুটির বাবা বলেন, ‘তলপেটে কী অপারেশন করা হলো আমরা এর কিছুই বুঝতে পারছি না। ছেলেটাকে নিয়ে খুব দুশ্চিন্তায় আছি। আমার সন্তানের ভবিষ্যতে যে ক্ষতি হবে না, সেই নিশ্চয়তা কে দেবে?’
বরিশালের শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সহকারী পরিচালক এস এম মনিরুজ্জামান গতকাল রাতে বলেন, তাঁদের কাছে কেউ কোনো অভিযোগ করেননি। তবে ঘটনাটি তাঁরা শুনেছেন। শিশুটি ঘাড় বাঁকা রোগ নিয়ে ভর্তি হওয়ার পর তার হার্নিয়াও ধরা পড়েছিল। ঘাড় বাঁকা রোগটি একটু জটিল, তা ছাড়া দুটি অস্ত্রোপচার একসঙ্গে করা যায় না। এ জন্য চিকিৎসক হার্নিয়ার অস্ত্রোপচার আগে করেছেন। পরে ঘাড়ে অস্ত্রোপচার হবে।
অভিভাবকদের না জানিয়ে এভাবে অস্ত্রোপচার করা বিধি মোতাবেক হয়েছে কি না, তা জানতে চাইলে এস এম মনিরুজ্জামান বলেন, ‘এখানে যেটা ভুল হয়েছে, সেটা হলো, রোগী ও চিকিৎসকের মধ্যে কাউন্সেলিং যথাযথভাবে হয়নি। এ জন্য এমন অভিযোগ উঠছে। তবে এ ঘটনায় কোনো লিখিত অভিযোগ আমরা পাইনি। পেলে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’