আত্মহত্যার আগে ফেসবুকে পোস্ট ‘আমি নাস্তিক নই, গ্রামের সবাই আমাকে নাস্তিক বলছে’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের শিক্ষার্থী শাকিল আহমেদছবি: শাকিলের ফেসবুক আইডি থেকে নেওয়া

মানিকগঞ্জের সিঙ্গাইর উপজেলায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) চারুকলা অনুষদের শিক্ষার্থী শাকিল আহমেদ (২৪) আত্মহত্যা করেছেন বলে তাঁর পরিবার জানিয়েছে। আজ মঙ্গলবার সকালে উপজেলার দক্ষিণ জামশা গ্রামের নিজ বাড়ি থেকে তাঁর লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।

শাকিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের শেষ বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন। তিনি দক্ষিণ জামশা গ্রামের নাসিরুদ্দিন আহমেদের ছেলে।

স্বজনেরা জানিয়েছেন, ফেসবুকে মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)–কে নিয়ে এক ব্যক্তির পোস্টে মন্তব্য করেছিলেন শাকিল। পরে সেটি ঘিরে স্থানীয় কিছু লোক তাঁকে হুমকি দেন। বাড়িতে গিয়েও বিভিন্নজন তাঁকে ও তাঁর পরিবারকে ভয়ভীতি দেখান। এ পরিস্থিতির কারণেই তিনি আত্মহত্যা করেছেন।

তবে পুলিশ বলছে, শাকিল ফেসবুকে কটূক্তিমূলক মন্তব্য করেছিলেন। পরে সেটি ভাইরাল হলে পারিবারিক মানসম্মান ও আত্মোপলব্ধির কারণে আত্মহত্যা করেছেন।

সিঙ্গাইর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তৌফিক আজম বলেন, ওই শিক্ষার্থী তাঁর নিজ ফেসবুক আইডি থেকে হজরত মুহাম্মদ (সা.) ও তাঁর স্ত্রীদের নিয়ে কটূক্তিমূলক মন্তব্য করেন। পুরোনো ওই মন্তব্য সম্প্রতি ভাইরাল হয়। প্রাথমিক তদন্তে দেখা গেছে, তিনি আত্মোপলব্ধি ও পারিবারিক মানসম্মানের কারণে আত্মহত্যা করেছেন। ওসি জানান, আজ সকালে তাঁর লাশ উদ্ধার করে মানিকগঞ্জ মেডিকেল কলেজের মর্গে পাঠানো হয়েছে। এ ঘটনায় একটি অপমৃত্যুর মামলা হয়েছে।

আত্মহত্যার আগে গতকাল সোমবার রাতে ফেসবুকে চারটি পোস্ট দিয়েছিলেন শাকিল। সর্বশেষ পোস্টে তিনি লেখেন, ‘আমি নাস্তিক নই, গ্রামের সবাই আমাকে নাস্তিক বলছে। আমি জানি আর আমার আল্লাহ জানে, আমি নবী মুহাম্মদকে কোনো কটূক্তি করিনি। আমাকে নিয়ে আমার বাবা অনেক গর্ব করত, গ্রামের সবাই আমাকে অনেক সম্মান করত। আজ আমি আমার নিজের আপন মানুষের কাছে আমার সম্মান হারিয়েছি। আগামীকাল আমার বাবাকে সবাই গালি দিবে, আমার মাকে সবাই অসম্মান করবে, এই লজ্জা আমি কখনো সহ্য করতে পারব না। একটা ছেলে হয়ে নিজের বাবা–মায়ের মানসম্মান আমি এভাবে নষ্ট করে দুনিয়ায় বেঁচে থাকতে পারব না। কোনো দিন আমি গ্রামে মাথা তুলে চলতে পারব না। আত্মহত্যা মহাপাপ আমি জানি। আমি অনেক পাপ করেছি, আজ আর একটা শেষ পাপের জন্য প্রস্তুত হচ্ছি।’

সিঙ্গাইর থানা ও স্থানীয় সূত্র জানায়, সাত-আট মাস আগে শাকিল ওই মন্তব্য করেন। পরে তা মুছে ফেলেন। গতকাল রাতে সেটি আবার ভাইরাল হয়। এরপর রাতে আশপাশের এলাকার কয়েকজন তাঁর বাড়িতে গিয়ে তাঁকে ও পরিবারকে হুমকি দেন। এরপর দিবাগত রাত দুইটার দিকে নিজ ঘরে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেন শাকিল।

দক্ষিণ জামশা বাজারের দোকানি ও শাকিলের প্রতিবেশী দিদার আলী বলেন, দীর্ঘদিন আগে মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)–কে নিয়ে শাকিল কটূক্তিমূলক মন্তব্য করেন। তবে ভুল বুঝতে পেরে কিছুদিন পর তা মুছে ফেলেন। পরে ফেসবুকে তাঁর এক বন্ধু ওই মন্তব্য আবার ভাইরাল করে দেন। এতে লোকজন তাঁদের হুমকি দিচ্ছিলেন।

ঘটনার বিষয়ে জানতে আজ দুপুরে শাকিলের বাবা নাসিরুদ্দিন আহমেদের মুঠোফোন নম্বরে কল করা হলে তা ধরেন শাকিলের খালাতো বোন মুক্তা আক্তার। তিনি বলেন, গতকাল রাত ৯টার দিকে ফেসবুকের ওই কমেন্টকে কেন্দ্র করে দক্ষিণ জামশা গ্রামসহ আশপাশের গ্রামের কয়েক শ লোক শাকিলদের বাড়িতে গিয়ে পরিবারের সদস্যদের বিভিন্ন হুমকি দেন। এরপর রাত দুইটার দিকে বাড়িতে নিজ ঘরের ভেতর ফাঁস নিয়ে শাকিল আত্মহত্যা করেন।