উদ্ধারকারী জাহাজ ‘প্রত্যয়’ পৌঁছাতে দেরি, ইঞ্জিন মাস্টারের সন্ধানে অভিযান

উদ্ধারকারী জাহাজ হামজা দুর্ঘটনাস্থলে রাখা হয়েছে। তবে সক্ষমতা কম হওয়ায় এটি দিয়ে ফেরি উদ্ধার সম্ভব নয়। আজ শুক্রবার সকালে মানিকগঞ্জের পাটুরিয়ার ৫ নম্বর ঘাটের অদূরেছবি: আব্দুল মোমিন

মানিকগঞ্জের পাটুরিয়া ঘাটের অদূরে ডুবে যাওয়া ফেরি রজনীগন্ধা উদ্ধারের জন্য উদ্ধারকারী জাহাজ ‘প্রত্যয়’ আজ শুক্রবার সকাল ১০টা পর্যন্ত ঘটনাস্থলে এসে পৌঁছায়নি। ফলে ফেরির উদ্ধারকাজ এখনো শুরু হয়নি। কখন নাগাদ ডুবে যাওয়া ফেরির উদ্ধারকাজ শুরু হবে, তা নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে।

বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন সংস্থার (বিআইডব্লিউটিসি) চেয়ারম্যান এ কে এম মতিউর রহমান গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে সাংবাদিকদের বলেছিলেন, গতকাল রাত ১০টার মধ্যে উদ্ধারকারী জাহাজ প্রত্যয় দুর্ঘটনাস্থলে আসবে। আজ সকাল থেকে ফেরিটি উদ্ধারে কাজ শুরু হবে।

এদিকে আজ সকাল সাড়ে ১০টা পর্যন্ত নিখোঁজ ফেরির ইঞ্জিনের দ্বিতীয় মাস্টার হুমায়ুন কবিরের সন্ধান পাওয়া যায়নি। এ ব্যাপারে আরিচা স্থল কাম–নদী ফায়ার সার্ভিসের ওয়্যারহাউস ইন্সপেক্টর মজিবর রহমান বলেন, গতকাল সকাল থেকে ফায়ার সার্ভিসের ১১ সদস্যের ডুবুরি দল নিখোঁজ ব্যক্তির সন্ধানে কাজ শুরু করেছে। তবে গতকাল পর্যন্ত তাঁর কোনো খোঁজ পাওয়া যায়নি। আজ সকাল ১০টা থেকে ডুবুরি দল আবারও তাঁর সন্ধানে কাজ শুরু করেছে।

আরও পড়ুন

বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন সংস্থা (বিআইডব্লিউটিসি), মানিকগঞ্জ জেলা প্রশাসন ও প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা গেছে, গত মঙ্গলবার দিবাগত রাত ১২টার পর রাজবাড়ীর দৌলতদিয়া প্রান্ত থেকে পাটুরিয়ার উদ্দেশে ছেড়ে আসে ইউটিলিটি (ছোট) ফেরি রজনীগন্ধা। ফেরিতে ৯টি মালবাহী যানবাহন ছিল। রাত দেড়টার দিকে ঘন কুয়াশার কারণে পাটুরিয়ার ৫ নম্বর ঘাটের অদূরে পদ্মা নদীতে আটকে পড়ে ফেরিটি। এ সময় ঘন কুয়াশার কারণে পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌপথে ফেরি চলাচল বন্ধ থাকে। এরপর গত বুধবার সকাল আটটার দিকে ফেরিটি ডুবে যেতে থাকে। এ সময় যানবাহনের চালক, সহকারী ও ফেরিতে কর্মরত লোকজন নদীতে ঝাঁপ দেন। একপর্যায়ে সকাল সাড়ে আটটার দিকে ফেরিটি পুরোপুরি ডুবে যায়।

নিখোঁজ ইঞ্জিন মাস্টার হুমায়ুন কবিরের সন্ধানে ফায়ার সার্ভিসের সদস্যদের অভিযান। আজ শুক্রবার সকালে মানিকগঞ্জের পাটুরিয়ায়
ছবি: প্রথম আলো

খবর পেয়ে সকাল ৯টার দিকে বিআইডব্লিউটিএ, নৌ পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের উদ্ধারকারী দলের সদস্যরা স্পিডবোট ও ট্রলার নিয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছান। এ সময় নৌ পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা উদ্ধার অভিযান শুরু করেন। এরপর বুধবার দুটি ও গতকাল একটি পণ্যবাহী যান উদ্ধার করে। উদ্ধারকারী জাহাজ হামজা ও রুস্তম দিয়ে এ দুটি যান উদ্ধার করা হয়। তবে আজ সকাল পর্যন্ত ডুবে যাওয়া ছয়টি যান উদ্ধার করা যায়নি।

আজ সকালে বিআইডব্লিউটিসির আরিচা কার্যালয়ের উপমহাব্যবস্থাপক (বাণিজ্য) শাহ মোহাম্মদ খালেদ নেওয়াজ প্রথম আলোকে বলেন, কুয়াশার কারণে পথ দেখতে না পাওয়ায় উদ্ধারকারী জাহাজ প্রত্যয় ঘটনাস্থলে পৌঁছাতে বিলম্ব হয়েছে। আজ দুপুর ১২টার মধ্যে প্রত্যয় ঘটনাস্থলে এসে পৌঁছাবে বলে তিনি জানতে পেরেছেন। এরপর ফেরি উদ্ধারে অংশ নেবে।

আরও পড়ুন

এ দিকে ডুবে যাওয়া মালবাহী যানবাহন উদ্ধারে ধীরগতির জন্য অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন ট্রাক ও মালামালের মালিকেরা। দুর্ঘটনায় ফেরিতে কর্মরত লোকজনের গাফিলতি ছিল বলে অভিযোগ তাঁদের। ডুবে যাওয়া ফেরিতে থাকা একটি ট্রাকের মালিক চুয়াডাঙ্গার মজিবুল হক। তিনি বলেন, চুয়াডাঙ্গা থেকে নিজের দুটি ট্রাকে ৩২ টন ভুট্টা ঢাকায় পাঠাচ্ছিলেন। এসব ভুট্টাও তাঁর। দুটি ট্রাকে ১৪ লাখ টাকার ভুট্টা রয়েছে। এগুলো পঁচনশীল। এতে ভুট্টাগুলো নষ্ট হবে। তা ছাড়া দুটি ট্রাকেরও অনেক ক্ষতি হবে। আজ সকালেও তাঁর দুটি ট্রাক ও ভুট্টা উদ্ধার হয়নি।

পাটুরিয়া ঘাটের পন্টুনে রাখা হয়েছে উদ্ধারকারী জাহাজ রুস্তম। আজ শুক্রবার সকালে
ছবি: প্রথম আলো

কুষ্টিয়া থেকে আঁশতুলা বোঝাই করে নিজের একটি ও ভাড়া করা একটি ট্রাকে ময়মনসিংহের ভালুকায় পাঠাচ্ছিলেন কুষ্টিয়ার মিজানুর রহমান। তিনি বলেন, দুটি ট্রাকে ৮০ লাখ টাকার আঁশতুলা ছিল।

বিআইডব্লিউটিসির চেয়ারম্যান এ কে এম মতিউর রহমান বলেন, দুর্ঘটনাস্থলে উদ্ধারকারী জাহাজ হামজা ও রুস্তমের সক্ষমতা ৮০ থেকে ৯০ টন। এ দুটি জাহাজ দিয়ে ফেরি উদ্ধার সম্ভব নয়। এ কারণে প্রত্যয় দিয়ে ফেরির উদ্ধারকাজ চলবে। তবে হামজা ও রুস্তম দিয়ে ডুবে যাওয়া যানবাহন উদ্ধারকাজ অব্যাহত রয়েছে।

আরও পড়ুন