মাথা গোঁজার ঠাঁই হারিয়ে নিঃস্ব সোনাগাজীর রাসেল

ফেনীর সোনাগাজীতে ঘূর্ণিঝড় রিমালের তাণ্ডবে বসতঘর হারিয়ে নিঃস্ব দিনমজুর রাসেল। ছবিটি গতকাল বিকেলে উপজেলার দক্ষিণ চর চান্দিয়া এলাকা থেকে তোলা হয়প্রথম আলো

ফেনীর সোনাগাজী উপজেলার চর চান্দিয়া ইউনিয়নের বর্গাচাষি মো. রাসেল (৩৮) কয়েক বছর আগে রাস্তার পাশে খালপাড়ে ঋণ করে একটি টিনের ঘর নির্মাণ করেছিলেন। ৪০ শতক জমি বর্গা চাষ করে কোনো রকমে চলছিল তাঁর পাঁচ সদস্যের সংসার। গতকাল সোমবার ঘূর্ণিঝড় রিমালের প্রভাবে ঝোড়ো বাতাস ও ভারী বৃষ্টিতে বিধ্বস্ত হয়েছে দক্ষিণ চর চান্দিয়া এলাকায় অবস্থিত তাঁর সাজানো ঘর। এতে নিঃস্ব হয়ে গেছেন তিনি। ঝড়ে মাথা গোঁজার ঠাঁই হারিয়ে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন রাসেল।

উপজেলার দক্ষিণ চর চান্দিয়া এলাকার বাসিন্দা মো. রাসেল বলেন, মা, বোন, স্ত্রী ও এক সন্তান নিয়ে সরকারি জায়গায় একটি ঘর নির্মাণ করে বসবাস করছিলেন তিনি। সেটি এখন নেই। ঘর ভেঙে পড়ার পর ভারী বৃষ্টি ও ঝোড়ো বাতাস থেকে রক্ষা পেতে পরিবারের সবাইকে আপাতত শ্বশুরবাড়িতে পাঠিয়ে দিয়েছেন। এখন পরিবারের পাঁচ সদস্যের আশ্রয় নিয়ে তিনি দুশ্চিন্তায় রয়েছেন। মাথা গোঁজার ঠাঁই না থাকায় কোথায় থাকবেন জানেন না।

রাসেল বলেন, জমিজমা না থাকায় স্থানীয় এক চাষির কাছ থেকে ৪০ শতক জমি বর্গা নিয়ে চাষ করেছেন। পাশাপাশি দিনমজুরি করেও সংসার চালান। তাঁর আশ্রয়ের শেষ সম্বল ঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।  

এদিকে ঘূর্ণিঝড় রিমালের প্রভাবে সোনাগাজীর উপকূলীয় এলাকায় ঝোড়ো বাতাস ও ভারী বৃষ্টি অব্যাহত রয়েছে। সোমবার দুপুরে হঠাৎ জোয়ারের পানির তোড়ে উপজেলার চর খোন্দকার, জেলেপাড়া ও দক্ষিণ–পূর্ব চর চান্দিয়া এবং সাত নম্বর স্লুইসগেট এলাকায় বেড়িবাঁধ ও গ্রামীণ সড়ক ভেঙে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়। এতে লোকালয়ে জোয়ারের লবণাক্ত পানি ঢুকে গেছে। ভেসে গেছে উপকূলীয় এলাকার শত শত পুকুর ও খামারের মাছ। গাছপালা পড়ে তার ছিঁড়ে ও খুঁটি ভেঙে রোববার মধ্যরাত থেকে পুরো উপজেলায় বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রয়েছে। তবে ২০ ঘণ্টা পর সোমবার রাত ৯টা ১০ মিনিটের মাথায় পৌরসভা এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ চালু করা হলেও ঝোড়ো বাতাসে তা বিঘ্ন ঘটছে। একই সঙ্গে মোবাইল নেটওয়ার্কেও সমস্যা দেখা দিয়েছে।

উপজেলার চর চান্দিয়া ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মো. মোশাররফ হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ঘূর্ণিঝড় রিমালের প্রভাবে তীব্র বাতাসে দক্ষিণ চর চান্দিয়া এলাকাসহ তাঁর ইউনিয়নে অন্তত ২০টি ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। গাছপালা উপড়ে পড়ে কিছু ঘর ভেঙে গেছে। এখনো বৃষ্টি অব্যাহত থাকায় এবং বিদ্যুৎ–সংযোগ না থাকায় ক্ষতির সঠিক তথ্য জানা সম্ভব হচ্ছে না। বৈরী আবহাওয়া অনুকূলে এলে সরেজমিনে গিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের খোঁজখবর নিয়ে তালিকা তৈরি করে সহযোগিতার জন্য সংশ্লিষ্ট দপ্তরে পাঠানো হবে।

পল্লী বিদ্যুৎ সোনাগাজী জোনাল অফিসের ডিজিএম বলাই মিত্র বলেন, রোববার মধ্যরাতে ভারী বৃষ্টি ও ঝোড়ো বাতাসে বেশ কিছু এলাকায় গাছপালা পড়ে তার ও বিদ্যুতের খুঁটি ভেঙে যাওয়ায় পুরো উপজেলায় বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রয়েছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে মেরামতের পর বিদ্যুৎ সরবরাহ চালু করা হবে। তবে পুরো উপজেলায় বিদ্যুৎ পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে একটু সময় লাগবে। ঝোড়ো বাতাস ও ভারী বৃষ্টির মধ্যে তারা মাঠে কাজ করে বিদ্যুৎ পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে চেষ্টা করছেন।

জানতে চাইলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) কামরুল হাসান বলেন, ঘূর্ণিঝড় রিমালের প্রভাবে উপজেলায় বড় ধরনের কোনো ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। তবে ঝোড়ো বাতাসে বেশ কিছু কাঁচা ও টিনের ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। উপজেলার সব কটি ইউপি চেয়ারম্যানকে সংশ্লিষ্ট এলাকার ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণের তালিকা তৈরি করতে বলা হয়েছে। তাঁরা বৈরী আবহাওয়ার কারণে তাৎক্ষণিক তথ্য দিতে পারেননি। উপজেলায় কী পরিমাণ ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, তা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে সরেজমিনে পরিদর্শন করে নিরূপণ করা হবে।