ঠাকুরগাঁওয়ে পুলিশের বাধায় সড়কে দাঁড়াতে পারেনি বিএনপি

ঠাকুরগাঁওয়ের শহীদ মোহাম্মদ আলী সড়কে দলীয় কার্যালয়ের সামনে মানববন্ধন করতে চাইলে পুলিশ বিএনপির নেতা-কর্মীদের বাধা দেয়। রোববার সকালে
ছবি: প্রথম আলো

ঠাকুরগাঁওয়ে পুলিশের বাধায় সড়কে দাঁড়িয়ে মানববন্ধন করতে পারেননি মহিলা দলের নেতা-কর্মীরা। আজ রোববার আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবস উপলক্ষে গুম-খুনের শিকার নেতা-কর্মীদের পরিবারের সদস্যদের নিয়ে নেতা-কর্মীরা দলীয় কার্যালয়ের সামনে দাঁড়ালে পুলিশ কিছুক্ষণ পর তাঁদের কার্যালয়ের ভেতরে চলে যেতে বাধ্য করে। মানববন্ধন করতে না পেরে পুলিশকে ফাঁকি দিয়ে ঝটিকা মিছিল করেন মহিলা দলের নেতা-কর্মীরা।

কর্মসূচিতে বাধা দেওয়ার বিষয়ে সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ফিরোজ কবির বলেন, মানববন্ধনের অনুমতি নেই বলে বিএনপির নেতা-কর্মীদের সড়কে দাঁড়াতে দেওয়া হয়নি।

প্রত্যক্ষদর্শী ও বিএনপির নেতা-কর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আজ সকাল থেকে শহরের শহীদ মোহাম্মদ আলী সড়কে জেলা বিএনপির কার্যালয়ে মহিলা দলের নেতা-কর্মীরা জড়ো হতে থাকেন। বেলা সাড়ে ১০টার পর থেকে সেখানে থানা ও গোয়েন্দা পুলিশের ব্যাপক উপস্থিতি দেখা যায়। সোয়া ১১টার দিকে জেলা মহিলা দলের সভাপতি ফোরাতুন নাহার ও সাধারণ সম্পাদক নাজমা পারভীনের নেতৃত্বে ১৫ থেকে ২০ জন নেতা-কর্মী কার্যালয় থেকে বেরিয়ে আসেন। কিন্তু পুলিশ তাঁদের সড়কে দাঁড়াতে নিষেধ করে। এ সময় তাঁদের সঙ্গে পুলিশের বাগ্‌বিতণ্ডা হয়। একপর্যায়ে মহিলা দলের এক সদস্য কয়েকটি ব্যানার নিয়ে কার্যালয়ের দিকে এগিয়ে এলে পুলিশ সদস্যরা তাঁর কাছ থেকে ব্যানার কেড়ে নেন। পরে মহিলা দলের নেতা-কর্মীরা একটি ব্যানার নিয়ে সড়কে দাঁড়াতে চাইলে পুলিশ এগিয়ে এসে তাঁদের কার্যালয়ের দরজা বন্ধ করে দেয়।

ওই সময় পুলিশের উদ্দেশে জেলা মহিলা দলের সভাপতি ফোরাতুন নাহার বলতে থাকেন, ‘সরকারের নির্দেশে আপনারা আমাদের অধিকার কেড়ে নিয়েছেন। আমরা আমাদের কষ্টের কথা বলতে পারি না। আপনারা শুধু একবার সরে যান। আমরা দেখতে চাই, আওয়ামী লীগের কত বড় বুকের পাটা আছে, আমাদের সামনে আসুক। জীবন থাকতে আমরা এই নির্বাচন হতে দেব না।’

পুলিশের বাধায় সড়কে দাঁড়াতে না পেরে মহিলা দলের নেতা-কর্মীরা কার্যালয়ের ভেতরে অবস্থান নেন। একসময় পুলিশ তাঁদের কার্যালয় ছেড়ে চলে যেতে বলে। এর মিনিট দশেক পর ফোরাতুন নাহারের নেতৃত্বে একদল নারী কর্মী কার্যালয়ের ভেতর থেকে বেরিয়ে আসেন। পুলিশ তাঁদের বাধা দিলে বলেন, ‘আমরা বাড়ি ফিরে যাচ্ছি।’ এরপর নেতা-কর্মীরা স্লোগান দিতে শুরু করেন। মিছিল নিয়ে কিছু দুর যেতেই পুলিশ তাঁদের আবার গতি রোধ করে দলীয় কার্যালয়ে ফিরিয়ে দেয়।

এদিকে কার্যালয়ের সামনে মানববন্ধন করতে না পেরে শহরের তিতুমীর সড়কে (বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলামের বাড়ির সামনে) মানববন্ধন করেছেন বিএনপির নেতা-কর্মীরা। সেখানে পুলিশ উপস্থিত হলে তাঁরা সেখান থেকে সরে যান। মানববন্ধনে বক্তব্য দেন জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন, জেলা কৃষক দলের সভাপতি আনারুল ইসলাম, জেলা যুবদলের সাংগঠনিক সম্পাদক মো. জাহিদ প্রমুখ। মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, তাঁরা তাঁদের নেতা-কর্মীদের হত্যা, গুম ও নির্যাতনের বিচার চাইতে পারছেন না। এভাবে দমনপীড়ন করে সরকার বেশি দিন টিকে থাকতে পারবে না। রাজপথের আন্দোলনের মাধ্যমে এ সরকারের পতন হবে।

জেলা বিএনপির সহসভাপতি নুর করিম প্রথম আলোকে বলেন, সারা দেশে বিএনপির অসংখ্য নেতা-কর্মী হত্যা, গুম ও হয়রানির শিকার হয়েছেন। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবস উপলক্ষে নির্যাতিত নেতা-কর্মীদের পরিবারের সদস্যদের নিয়ে তাঁরা মানববন্ধন কর্মসূচির আয়োজন করেছিলেন। কিন্তু পুলিশের বাধায় তাঁরা দলীয় কার্যালয়ের সামনের সড়কেও দাঁড়াতে পারেননি। বিএনপির নেতা-কর্মীরা অন্য একটি সড়কে গিয়ে মানববন্ধনে দাঁড়ালে পুলিশ সেখান থেকেও তাঁদের সরিয়ে দেয়।

এ ব্যাপারে পুলিশ সুপার উত্তম প্রসাদ পাঠকের মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।