স্বামী–সন্তানকে মাদক সেবনে বাধা, মারধর, বাঁচতে পারলেন না পাপিয়া বেগম

জয়পুরহাটের কালাই উপজেলায় মাদক সেবন ও ব্যবসায় বাধা দেওয়ায় মাদকাসক্ত স্বামী ও সন্তানের মারধরে আহত পাপিয়া বেগম (৪৫) মারা গেছেন। গতকাল শুক্রবার রাতে বগুড়ার শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তাঁর মৃত্যু হয়।

পাপিয়া কালাই পৌরসভার মূলগ্রাম মধ্যপাড়া মহল্লার সেলিম হোসেনের স্ত্রী। এ ঘটনায় আজ শনিবার বেলা তিনটায় পাপিয়ার বোন পারভিন বেগম বাদী হয়ে কালাই থানায় একটি হত্যা মামলা করেছেন। মামলায় পাপিয়ার স্বামী, ছেলে ও ছেলের বউকে আসামি করা হয়েছে। অভিযুক্ত সেলিম মাদক মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে ইতিমধ্যে কারাগারে আছেন। তাঁকে হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হবে বলে জানিয়েছেন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ওয়াসিম আল-বারী।

মামলার সংক্ষিপ্ত এজাহার ও স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, পাপিয়ার স্বামী সেলিম হোসেন ও ছেলে রকসি মাদক ব্যবসা ও সেবন করতেন। স্বামী–সন্তানকে ওই কাজে বাধা দিতেন পাপিয়া। এ নিয়ে পাপিয়াকে প্রায় সময় নির্যাতন করতেন তাঁর স্বামী। কয়েক দিন আগে পাপিয়াকে মারধর করে গোয়ালঘরে আটকে রেখেছিলেন তিনি। ওই কাজে সেলিমকে সহায়তা করতেন ছেলে ও ছেলের বউ।

এলাকাবাসী ও স্বজনেরা জানান, মাদক সেবনে বাধা দেওয়ায় ১৩ মে পাপিয়াকে ব্যাপক মারধর করেন স্বামী-সন্তান। এতে গুরুতর আহত হলে স্বজনেরা তাঁকে উদ্ধার করে কালাই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করেন। পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাঁকে বগুড়ার শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গতকাল রাতে তিনি মারা যান। আজ ময়নাতদন্ত শেষে স্বজনদের কাছে পাপিয়ার লাশ হস্তান্তর করা হয়েছে।

কালাই পৌরসভার ৭ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মোহসীন আলী প্রথম আলোকে বলেন, পাপিয়া বেগমের স্বামী ও ছেলে মাদক বিক্রি ও সেবন করতেন। ওই কাজে তাঁদের বাধা দিতেন পাপিয়া। এ ঘটনায় ক্ষুব্ধ হয়ে বাবা-ছেলে মিলে পাপিয়াকে মারধর করেছিলেন। চিকিৎসাধীন অবস্থায় আজ পাপিয়া মারা গেছেন।

মামলার বাদী ও পাপিয়ার বোন পারভিন বেগম বলেন, ‘১৩ মে দুলাভাই, ভাগনে ও ভাগনের বউ আমার বোনকে প্রচণ্ড মারধর করেন। মারধরে আমার বোন পাপিয়ার মৃত্যু হয়েছে। আমি থানায় হত্যা মামলা করেছি।’

কালাই থানার ওসি ওয়াসিম আল-বারী প্রথম আলোকে বলেন, পাপিয়ার শরীরে আঘাতের চিহ্ন আছে। পারিবারিক কলহের জেরে পাপিয়াকে তাঁর স্বামী, পুত্র ও পুত্রবধূ মারধর করেছিলেন। এ ঘটনায় নিহত পাপিয়ার বোন বাদী হয়ে থানায় একটি হত্যা মামলা করেছেন। ২০ মে হত্যা মামলার আসামি পাপিয়ার স্বামী সেলিমকে মাদকসহ গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। হত্যা মামলায় তাঁকে গ্রেপ্তার দেখানো হবে।