নাটোরে জলসার নামে চাঁদা তোলা নিয়ে ব্যবসায়ীকে মারধর, মহাসড়ক অবরোধ

ব্যবসায়ীকে মারধরের পর সব দোকান বন্ধ করে ব্যবসায়ীরা নাটোর-পাবনা মহাসড়ক অবরোধ করেন। শনিবার দুপুরে নাটোরের বড়াইগ্রাম উপজেলার বনপাড়া বাজারেছবি: সংগৃহীত

নাটোরের বড়াইগ্রাম উপজেলায় ইসলামি জলসার নামে চাঁদা তোলাকে কেন্দ্র করে নাজমুল হোসেন (৪০) নামের এক ব্যবসায়ীকে মারধরের ঘটনা ঘটেছে। আজ শনিবার দুপুর ১২টার দিকে উপজেলার বনপাড়া বাজারে এ ঘটনা ঘটে। আহত ব্যবসায়ীকে স্থানীয় একটি ক্লিনিকে ভর্তি করা হয়েছে।

এ ঘটনার পর ব্যবসায়ীরা ঐক্যবদ্ধ হয়ে সব দোকান বন্ধ করে নাটোর-পাবনা মহাসড়ক অবরোধ করেন। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে বিচারের আশ্বাস দিলে ব্যবসায়ীরা অবরোধ তুলে নেন। ব্যবসায়ীরা আধা ঘণ্টার বেশি সময় সড়ক অবরোধ করে রেখেছিলেন।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, বনপাড়া পৌরসভার মহিষভাঙ্গা দক্ষিণপাড়া এলাকায় একটি ইসলামি জলসার জন্য বনপাড়া বাজারের বিভিন্ন দোকান থেকে কয়েক দিন ধরে চাঁদা তুলছিলেন মহিষভাঙ্গা ও মালিপাড়া এলাকার কয়েকজন যুবক। তাঁরা লিফলেটও বিতরণ করছিলেন। জলসা আয়োজনের বিষয়টি ভুয়া উল্লেখ করে মালিপাড়ার কয়েকজন এর প্রতিবাদ করেন। এ নিয়ে এক যুবক ভিডিও করে চাঁদা তোলা যুবকের ছবিসহ ফেসবুকে পোস্ট করেন। ওই ভিডিও শেয়ার করেন বনপাড়া হীরা মার্কেটের কাপড় ব্যবসায়ী নাজমুল হোসেন। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে মহিষভাঙ্গার শাকিব, নাজমুলসহ কয়েকজন দুপুরে নাজমুলকে দোকান থেকে মালিপাড়া রাস্তায় ডাকেন। তাঁরা তাঁকে লাঠি ও রড দিয়ে এলোপাতাড়ি পেটান। বিষয়টি জানতে পেরে ব্যবসায়ীরা এগিয়ে গেলে হামলাকারীরা পালিয়ে যান।

প্রত্যক্ষদর্শী কয়েকজন জানান, মারধরের পর ওই ব্যবসায়ীকে স্থানীয় একটি ক্লিনিকে ভর্তি করা হয়। এরপর বাজারের ব্যবসায়ীরা ঐক্যবদ্ধ হয়ে দোকান বন্ধ করে নাটোর-পাবনা মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু করেন। খবর পেয়ে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (বড়াইগ্রাম সার্কেল) শরীফ আল রাজীব, থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শফিউল আজমসহ পুলিশ সদস্যেরা ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন। এ সময় ব্যবসায়ীদের পক্ষ থেকে উপজেলা বণিক সমিতির সভাপতি ফজলুর রহমান, সাধারণ সম্পাদক খলিলুর রহমান গাজী, ব্যবসায়ী হায়দার আলী, সাইফুল ইসলাম দ্রুত হামলাকারীদের গ্রেপ্তারের দাবি জানান।

ব্যবসায়ীকে মারধরের খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে ছুটে আসেন স্থানীয় সংসদ সদস্য সিদ্দিকুর রহমান পাটোয়ারী। তিনি ব্যবসায়ীদের সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করে ঘটনার জন্য বনপাড়া পৌরসভার মেয়র কে এম জাকির হোসেনকে অভিযুক্ত করেন। একই সঙ্গে দোষী ব্যক্তিদের দ্রুত গ্রেপ্তারের দাবি জানান।

মেয়র কে এম জাকির হোসেনের বাড়ি মহিষভাঙ্গা এলাকায়। অভিযুক্ত ব্যক্তিদের বাড়িও ওই এলাকায়। এ বিষয়ে তাঁদের বক্তব্য পাওয়া যায়নি। মেয়র জাকির হোসেন সংসদ সদস্যের অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘অপরাধী যে–ই হোক, পুলিশকে তাঁকে আইনের আওতায় আনার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সংসদ সদস্য জনশূন্য রাজনৈতিক ব্যক্তি। তাই এ ঘটনায় আমাকে জড়িয়ে সস্তা রাজনীতির চেষ্টা করছেন।’

অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শরীফ আল রাজীব প্রথম আলোকে বলেন, এ ঘটনায় ব্যবসায়ীদের অভিযোগ দিতে বলা হয়েছে। ইতিমধ্যে পুলিশ তদন্ত শুরু করেছে। অভিযোগের ভিত্তিতে আরও তদন্ত করে চূড়ান্ত আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এখন সার্বিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক আছে।