প্রান্তিক মানুষের স্বপ্নপূরণের মাধ্যমেই বাংলাদেশের স্বপ্নপূরণ হবে

শেভরন ও আইডিই বাংলাদেশের যৌথ উদ্যোগে দক্ষিণ সুরমার ফিরোজপুর এলাকায় একটি কমিউনিটি সেন্টারের মিলনায়তনে দিনব্যাপী এ মেলা অনুষ্ঠিত হয়
ছবি: আনিস মাহমুদ

প্রান্তিক মানুষের স্বপ্নপূরণের মাধ্যমেই বাংলাদেশের স্বপ্নপূরণ হবে। একেকজন উদ্যোক্তাই এক টুকরা বাংলাদেশ। দেশের ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তারাই বাংলাদেশের অর্থনীতির মূল শক্তি। পরিশ্রম, সততা ও আদর্শ নিয়ে ব্যবসা করলে সাফল্য আসবে। লক্ষ্য নিয়ে এগিয়ে গেলে উদ্যোক্তারা সফল হবেন। এতে উদ্যোক্তারা লাভবান হওয়ার পাশাপাশি বিভিন্ন পর্যায়ের মানুষের কর্মসংস্থান হবে।

সিলেটে শেভরন ও আইডিই বাংলাদেশের যৌথ উদ্যোগে উদ্যোক্তা মেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তারা এসব কথা বলেন। আজ শনিবার সিলেটের দক্ষিণ সুরমার ফিরোজপুর এলাকায় একটি কমিউনিটি সেন্টারের মিলনায়তনে দিনব্যাপী এ মেলা অনুষ্ঠিত হয়।

মেলার উদ্বোধন শেষে প্রধান অতিথির বক্তব্যে সিলেটের জেলা প্রশাসক মো. মজিবুর রহমান বলেন, নিজে উদ্যোগ নিয়ে নিজের ভাগ্য উন্নয়ন করেছেন—এ রকম মানুষ এই মেলায় নিজের পণ্য নিয়ে এসেছেন। এসব উদ্যোক্তা নিজের সফলতার গল্প অন্যদের শোনাচ্ছেন। তাঁদের উৎপাদিত পণ্যের প্রচার, প্রসার, বিক্রয় ও ক্রেতা-বিক্রেতার সংযোগ স্থাপনের লক্ষ্যেই মেলার আয়োজন। মেলায় আসা সাধারণ মানুষও উৎসাহ পেয়ে নিজে স্বাবলম্বী হওয়ার চেষ্টা করবেন।

মেলায় স্টল নিয়ে আসা উদ্যোক্তরা তাঁদের কাজের শুরু ও বর্তমান সফলতার গল্প তুলে ধরেন। উদ্যোক্তাদের মধ্যে কেউ তথ্যপ্রযুক্তির প্রতিষ্ঠান করেছেন। কেউ পোশাক তৈরির প্রতিষ্ঠান করেছেন। আবার কেউ কৃষি, মৎস্য, গরু ও হাঁসের খামার করেছেন।

মেলার স্টলগুলোতে নারী ও পুরুষ উদ্যোক্তারা তাঁদের পণ্য প্রদর্শন করেন
ছবি: আনিস মাহমুদ

মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল উপজেলার সদর ইউনিয়নের ডলুছড়া এলাকার স্বপ্না দে বর্মণ (৩৫) বলেন, তাঁর দিনমজুর স্বামীর রোজগারে সংসার চলত না। তাই সংসারে অভাব লেগেই ছিল। দুই বছর আগে তিনি ডলুছাড়া গ্রাম উন্নয়ন সমবায় সমিতির মাধ্যমে তিনি সেলাই ও তাঁতের শাড়ি বুননের প্রশিক্ষণ নেন। প্রশিক্ষণের পর তিনি মণিপুরি ও দেশীয় বিভিন্ন প্রকারের শাড়ি, ওড়না, চাদর, মাফলার প্রস্তুত করে ডলুছড়া সমবায় সমিতির কাছে বিক্রি করেন। এক বছর ধরে তিনি প্রতি মাসে ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকা আয় করছেন।

সিলেট সদর উপজেলার খাদিম পাড়া ইউনিয়নের ধনুকান্দি গ্রামের রিপা বেগম (৪০) বলেন, ‘২০০৭ সালে এনজিও থেকে চড়া সুদে ঋণ নিয়ে তিনটি গরু কিনে খামার করেছিলাম। সারা বছর গরু পালন করে যে টাকা পেতাম, তা দিয়ে ঋণ শোধ করতে পারিনি। আর্থিকভাবে দেউলিয়া হয়ে যাই। এরপর আইডিইয়ের মাধ্যমে ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে আবার খামার শুরু করি। এখন প্রতিবছরই কোরবানির ঈদে গরু বিক্রি করে লাভ করছি। আমাকে পেছনে ফিরে থাকাতে হয়নি। বর্তমানে আমার খামারে ১২টি গরু আছে।’

মেলায় অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন সিলেটের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মোবারক হোসেন, সিলেট জেলা কৃষি কর্মকর্তা ফারুক হোসেন, প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা শহীদুল ইসলাম, শেভরন বাংলাদেশের সোশ্যাল ইনভেস্টমেন্ট ব্যবস্থাপক তুষারুজ্জামান খন্দকার, জালালাবাদ গ্যাস লিমিটেডের কর্মকর্তা শলীল বরণ দাস, আলিম ইন্ডাস্ট্রির পরিচালক আলীমুস সাদাত চৌধুরী প্রমুখ।

আয়োজকেরা জানান, মেলায় ২৬টি স্টলে উদ্যোক্তারা তাঁদের পণ্য প্রদর্শন করেন। সিলেট, মৌলভীবাজার ও হবিগঞ্জ জেলায় শেভরন ও আইডিই বাংলাদেশের আর্থিক সহযোগিতায় ১১০টি সমিতির মাধ্যমে ১ হাজার ১০০ জন উদ্যোক্তা বর্তমানে ব্যবসা করছেন।