কুমিল্লায় ভরাসার বহুমুখী উচ্চবিদ্যালয়ের শতবর্ষ উদ্‌যাপন

ভরাসার বহুমুখী উচ্চবিদ্যালয়ের শতবর্ষ পূর্তি উপলক্ষে ১০০ পাউন্ডের কেক কাটা হয়। আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে কুমিল্লার বুড়িচং উপজেলায়ছবি: প্রথম আলো

আজ বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে আটটা; শীতের সকাল, চারদিক কুয়াশায় আচ্ছন্ন। এমন সময় দলে দলে কুমিল্লার বুড়িচং উপজেলার ভরাসার বহুমুখী উচ্চবিদ্যালয় প্রাঙ্গণে ছুটছেন নানা বয়সের মানুষ। তাঁদের পদচারণে মুখর হয়ে ওঠে বিদ্যালয় প্রাঙ্গণ। সবাই প্রতিষ্ঠানটির প্রাক্তন শিক্ষার্থী। তাঁরা এই বিদ্যালয়ের শতবর্ষ পূর্তি অনুষ্ঠান উদ্‌যাপন করতে এসেছেন।

বিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ১৯২৬ সালে বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠা করেন ভরাসার গ্রামের বরম উদ্দিনের ছেলে আফসার উদ্দিন। প্রতিষ্ঠার পর থেকে প্রতিষ্ঠানটি আলো ছড়িয়ে যাচ্ছে। প্রতিষ্ঠানটির প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা দেশ-বিদেশের বিভিন্ন ক্ষেত্রে নেতৃত্ব দিচ্ছেন। আজ দিনব্যাপী নানা আয়োজনের মধ্য দিয়ে বিদ্যালয়ের শতবর্ষ উদ্‌যাপন করা হয়। এতে প্রায় পাঁচ হাজার প্রাক্তন শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করেন।

সকালে জাতীয় পতাকা উত্তোলনের মধ্য দিয়ে আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়। পরে বেলুন উড়িয়ে উদ্বোধন করেন অনুষ্ঠানের আহ্বায়ক এয়ার ভাইস মার্শাল মোহাম্মদ আবুল বাশার। পরে অনুষ্ঠিত হয় পদযাত্রা। দুপুরে বিদ্যালয়ের শতবর্ষ উপলক্ষে ১০০ পাউন্ডের কেক কাটা হয়। দুপুরের পর ‘সোনালি সোপান’ ম্যাগাজিনের মোড়ক উন্মোচন করেন আহ্বায়ক ও অতিথিরা। বিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষার্থী প্রকৌশলী শাহেদুজ্জামান ও চিকিৎসক রবিউল হাসানের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন উদ্‌যাপন কমিটির সদস্যসচিব শামসুল হুদা ও বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মনিরুল ইসলাম।

বিদ্যালয়টির প্রাক্তন শিক্ষার্থী আবদুল মালেক আখন্দের বয়স এখন প্রায় ১০০। তিনি ১৯৪৫ সালে এসএসসি পাস করেছেন। নিজের বিদ্যাপীঠের শতবর্ষ উদ্‌যাপন অনুষ্ঠান বিদ্যালয়ের মাঠে বসেই দেখছিলেন তিনি। সঙ্গে আছেন তাঁর সন্তানেরাও। আবদুল মালেকের পাঁচ ছেলে ও চার মেয়ে। সবাই পড়েছেন এই বিদ্যালয়ে। শুধু সন্তানেরাই নন, তাঁর নাতি-নাতনিদের অনেকেও এই প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী। তাঁরাও এসেছেন শতবর্ষ উদ্‌যাপন অনুষ্ঠানে।

আবদুল মালেক আখন্দ প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমাদের সময় বিদ্যালয়ে ভাঙাচোরা টিনের ঘর ছিল। এমন বড় দালান, পড়ালেখার এত সুবিধা তখন আমরা স্বপ্নেও চিন্তা করতে পারিনি। আমার ব্যাচের কোনো বন্ধু বেঁচে আছে কি না, জানি না। আমার বয়সও এখন শত বছর। বলতে গেলে আমার বয়স আর স্কুলের বয়স প্রায় সমান। দোয়া করি, এই প্রতিষ্ঠান যেন হাজার বছর ধরে শিক্ষার আলো ছড়িয়ে যায়।’

সরেজমিনে দেখা গেছে, বিদ্যালয়ের মাঠ, শ্রেণিকক্ষসহ বিভিন্ন স্থানে দলে দলে বিভক্ত হয়ে আড্ডা দিচ্ছেন প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা। অনেকে পুরোনো সহপাঠীদের কাছে পেয়ে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়ছেন। প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের কেউ একা, আবার কেউ এসেছেন পরিবার নিয়ে। বিভিন্ন বয়সের শিক্ষার্থীরা একে অপরের সঙ্গে কুশল বিনিময় করছেন। পুরো বিদ্যালয় প্রাঙ্গণেই তাঁদের আনন্দ–উল্লাস দেখা গেছে। কেউ কেউ পুরোনো বন্ধুদের নিয়ে ছবি তোলা ও ভিডিও ধারণে ব্যস্ত ছিলেন। কেউ কেউ মঞ্চে গিয়ে গানও গেয়েছেন।

১৯৮৩ ব্যাচের শিক্ষার্থী মোসা. শাহানা আক্তার এখন গৃহিণী। তিনি বিদ্যালয়ে এসে পুরোনো দিনের স্মৃতিচারণা করে বলেন, ‘আমাদের ব্যাচে ১০৩ জন এসএসসি পরীক্ষা দিয়েছিল। আজকে এখানে এসে ৩০ জন বন্ধুর সঙ্গে দেখা হয়েছে। কী যে ভালো লেগেছে, বোঝাতে পারব না! মনে হচ্ছিল, পুরোনো দিনে ফিরে গেছি। বারবার মনে হয়, সেই সময়টায় যদি আরেকবার যেতে পারতাম!’

১৯৮৩ ব্যাচের প্রাক্তন শিক্ষার্থী মোসলেহ উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, ‘অনেক দিন পর বন্ধুদের কাছে পেলাম। দেখা হলো বড় ভাই ও ছোট ভাইদের সঙ্গে। এ আনন্দ ভাষায় প্রকাশ করে শেষ করা যাবে না। সহপাঠীদের কাছে পেয়ে পুরোনো দিনে ফিরে গেছি। আজকের দিনটি স্মরণীয় হয়ে থাকবে।’