পানি বিক্রির টাকা দিয়ে সংসার চালাতে কষ্ট হয় সাইফুল ইসলামের

সিলেট নগরের বারুতখানা এলাকায় বিক্রির জন্য ঠেলাগাড়িতে থাকা টিনে পানি ভরছেন সাইফুল ইসলামছবি: প্রথম আলো

প্রায় ৪৫ বছর আগে জামালপুরের সরিষাবাড়ীর মাজালিয়া গ্রাম থেকে সিলেট শহরে এসেছিলেন সাইফুল ইসলাম (৭০)। জীবিকার জন্য পেশা হিসেবে বেছে নেন ঘরে ও বিভিন্ন হোটেল, রেস্তোরাঁয় খাওয়ার পানি সরবরাহকে। শুরুতে নিজের কাঁধে করে পানি পৌঁছে দিতেন গন্তব্যে। এখন দেন ঠেলাগাড়িতে করে। যা আয় হয়, তা দিয়েই চলে সংসার।

গত বুধবার সকালে সিলেট নগরের বারুতখানা এলাকায় সাইফুল ইসলামের সঙ্গে কথা হয়। তিনি বলেন, ৪৫ বছর আগে টিনে ভর্তি ১৫ লিটার খাওয়ার পানি বিক্রি করতেন ২৫ পয়সায়। এখন গন্তব্য অনুযায়ী ১০ টাকা থেকে শুরু করে ৪০ টাকা পর্যন্ত নেন। তাঁর মতে, তখনকার সেই ২৫ পয়সার মূল্যমান এখনকার ৪০ টাকার চেয়ে বেশি ছিল।

বারুতখানা এলাকার এক বাসিন্দার বাড়ি থেকে সাইফুল ইসলাম এই পানি সংগ্রহ করেন। তাঁর মতো আরও ১২-১৫ জন পানি সংগ্রহ করে ঠেলাগাড়িতে করে নগরের বিভিন্ন এলাকায় বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করেন। প্রতিদিন ভোর থেকে দুপুর পর্যন্ত তাঁরা পানি সংগ্রহ করে নগরের বিভিন্ন এলাকার হোটেল, রেস্তোরাঁসহ বাসাবাড়ি এবং অফিসে পৌঁছে দেন। এই দলের সবার চেয়ে বয়োজ্যেষ্ঠ সাইফুল। অন্যরা তাঁকে ‘ওস্তাদ’ মানেন। তাঁর সঙ্গে পানি বিক্রি করা অনেকেই মারা গেছেন অথবা বয়সের কারণে কাজ ছেড়ে দিয়েছেন। কিন্তু সাইফুল ইসলাম এখনো পানি টেনে যাচ্ছেন।

আফজাল হোসেন (৪৫) নামের একজন পানি বিক্রেতা বলেন, সাইফুল ইসলামের সঙ্গে তাঁর বাবাও পানি সংগ্রহ করে বিক্রি করতেন। বাবার হাত ধরে তিনিও এ পেশায় যোগ দেন। প্রায় ২৫ বছর ধরে তিনিও ঠেলায় করে পানি টেনে সংসার চালাচ্ছেন। তিনি বলেন, গরমের সময়ে পানির চাহিদা বেশি থাকে। শীতের সময় চাহিদা কমে। এ সময় কিছুটা কষ্ট হয় তাঁদের। শীতের সময় ঠান্ডা পানি নিয়ে নাড়াচাড়া করতে হয়।

আরও পড়ুন

পানি বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তাঁদের নির্দিষ্ট স্থায়ী গ্রাহক থাকে। এর বাইরে রাস্তাঘাটে পানি বিক্রি করেন। যে বিক্রেতার স্থায়ী গ্রাহক বেশি, তাঁর আয়ও বেশি। অন্যের বাড়ি থেকে পানি কিনে বিক্রি করতে হয় তাঁদের। এতে আয়ের একটি অংশ দিয়ে দিতে হয়। সরকারিভাবে তাঁদের নির্দিষ্ট একটি গভীর নলকূপ ও পাম্পের ব্যবস্থা করে দিলে আয় থেকে কিছু টাকা অন্তত জমানোর ব্যবস্থা করা যেত।

আরও পড়ুন

সাইফুল ইসলামের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তাঁর এক মেয়ে আছে। মেয়ের বিয়ে দিয়েছেন নিজের জমানো টাকা দিয়ে। এখন স্ত্রী আছেদা বেগমকে (৫৫) নিয়েই তাঁর সংসার। স্ত্রী গ্রামের বাড়িতে থাকেন। তিনি থাকেন সিলেটে। তবে মাসে কিংবা দুই মাসে বাড়িতে গিয়ে স্ত্রীকে দেখে আসেন। পানি বিক্রি করে প্রতিদিন ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা আয় করতে পারেন। তিনি বলেন, আগে নলকূপ চেপে বালতি ভরে কাঁধে করে পানি বয়ে নিয়ে বিক্রি করতেন। এ জন্য পরিশ্রম বেশি ছিল। তবে কম বয়স হওয়ায় তেমন গায়ে লাগেনি। এখন গভীর নলকূপে পাম্পে সুইচ টিপলে পানি পড়ে। সেই পানি পাইপ দিয়ে ঠেলায় থাকা পাত্রে ভরে নিতে হয়। কষ্ট কমে আয় বেড়েছে। কিন্তু বর্তমানে নিত্যপণ্যের যে দাম, তা দিয়ে কুলানো বেশ কষ্টের।