স্বতন্ত্র প্রার্থীই নৌকার জন্য বড় বাধা 

রাজবাড়ী–১ আসনে নৌকার প্রার্থীর সঙ্গে স্বতন্ত্র প্রার্থী ইমদাদুল হকের প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে। নদীভাঙনের বিষয়টি নির্বাচনের ফলাফলে প্রভাব ফেলবে।

কাজী কেরামত আলী ও ইমদাদুল হক বিশ্বাস

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আর মাত্র দুই দিন বাকি। রাজবাড়ী-১ আসনের প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী ও তাঁদের কর্মী–সমর্থকেরা শেষ মুহূর্তের প্রচার-প্রচারণায় ব্যস্ত সময় পার করছেন। এ আসনে ছয় প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এর মধ্যে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী কাজী কেরামত আলী এবং আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. ইমদাদুল হক বিশ্বাসের মধ্যে হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের আভাস পাওয়া যাচ্ছে। এ আসনের ভোটাররাও সুষ্ঠু পরিবেশ থাকলে কেন্দ্রে গিয়ে ভোট দেওয়ার বিষয়ে আগ্রহের কথা জানিয়েছেন।

রাজবাড়ী সদর এবং গোয়ালন্দ উপজেলা নিয়ে রাজবাড়ী-১ আসন। এ আসনের ছয় প্রার্থী হলেন রাজবাড়ী জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ও বর্তমান সংসদ সদস্য কাজী কেরামত আলী, রাজবাড়ী জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাহিত্য ও সংস্কৃতিবিষয়ক সম্পাদক রাজবাড়ী সদর উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ইমদাদুল হক বিশ্বাস (ট্রাক), জাতীয় পার্টির প্রার্থী জেলা কমিটির সভাপতি খোন্দকার হাবিবুর রহমান (লাঙ্গল), তৃণমূল বিএনপির প্রার্থী ডি এম মজিবর রহমান (সোনালী আঁশ) এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে স্বপন কুমার সরকার (ঈগল) ও আবদুল মান্নান মুসল্লী (ঢেঁকি)।

তফসিল ঘোষণার পর ৪ ডিসেম্বর মনোয়নপত্র যাচাই-বাছাইয়ে তথ্যে গরমিল পাওয়ায় স্বতন্ত্র প্রার্থী ইমদাদুল হক বিশ্বাসের মনোনয়নপত্র বাতিল ঘোষণা করেন জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসক আবু কায়সার খান। প্রার্থিতা ফিরে পেতে ইমদাদুল হক বিশ্বাস নির্বাচন কমিশনে আপিল করলে ১১ ডিসেম্বর শুনানি শেষে তিনি প্রার্থিতা ফিরে পান। ১৮ ডিসেম্বর প্রতীক বরাদ্দের পর নেমে পড়েন প্রচার-প্রচারণায়।

দলীয় প্রতীক বরাদ্দের আগ পর্যন্ত রাজবাড়ী-১ আসনে দলীয় নেতা–কর্মীরা বিভক্ত ছিলেন। জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি বর্তমান সংসদ সদস্য কাজী কেরামত আলী এবং তাঁর ছোট ভাই জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক কাজী ইরাদত আলী পৃথক বলয়ে চলতেন। নৌকার মনোনয়ন পেতে দুই ভাই কেন্দ্রীয় পর্যায়ে সর্বোচ্চ চেষ্টা চালান। অবশেষে কাজী কেরামতকে নৌকা প্রতীক বরাদ্দ দেওয়া হয়। নৌকা পাওয়ার পর এলাকায় ফিরলে দৌলতদিয়া ঘাটে কাজী কেরামত আলীকে সংবর্ধনা দেওয়া হয়। এখানে কাজী ইরাদত আলীর কোনো নেতা–কর্মীকে পাওয়া যায়নি। পারিবারিকভাবে বসে দুই ভাই একত্র হয়ে নৌকাকে বিজয়ী করতে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে দলের নেতা–কর্মীদের নির্দেশনা প্রদানের পর থেকে নেতা–কর্মীরা মাঠে সক্রিয় হতে শুরু করেন।

আওয়ামী লীগের স্থানীয় কয়েকজন নেতা বলেন, আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থী ইমদাদুল হক বিশ্বাস নির্বাচনে আসায় অনেকে গোপনে সমর্থন দিলেও প্রকাশ্যে ভোট চাইছেন না। এ কারণে নৌকা প্রতীকের প্রার্থীর জন্য চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছেন ইমদাদুল হক। এ ছাড়া গোয়ালন্দ এবং রাজবাড়ী সদর উপজেলার নদীভাঙন এলাকার সাধারণ মানুষের দীর্ঘদিনের দাবি নদী শাসনের কাজ না হওয়ার বিষয়টি ভোটের ফলাফলে প্রভাব সৃষ্টি করতে পারে।

দৌলতদিয়া মজিদ শেখের পাড়ার বাসিন্দা মো. চান্দু মোল্যা বলেন, ‘জাতীয় পার্টির সমর্থক হলেও স্বতন্ত্র প্রার্থীকে ভোট দেব। আওয়ামী লীগের দীর্ঘদিনের এমপি হলেও নদীভাঙা মানুষের জন্য তেমন কিছুই করেননি। তাঁর কাছের কিছু নেতা–কর্মীর ভাগ্যের উন্নয়ন হয়েছে। নদীভাঙা মানুষের কোনো উন্নয়ন হয়নি। তিনি ইচ্ছা করলে একটি গ্রাম করে সেখানে নদীভাঙা মানুষের বসতি গড়ে দিতে পারতেন।’

গোয়ালন্দ উপজেলা জাতীয় পার্টির সদ্য অব্যাহতি পাওয়া সভাপতি হামিদুল হক ববলেন, নৌকা এবং ট্রাক প্রতীকের প্রার্থীর মধ্যে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হবে। আওয়ামী লীগের কাজী কেরামত আলী পাঁচবারের সংসদ সদস্য। অপর দিকে আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থী ইমদাদ বিশ্বাস চারবারের নির্বাচিত জনপ্রিয় উপজেলা চেয়ারম্যান। এ ছাড়া উন্নয়নবঞ্চিত মানুষ এখন পরিবর্তন চায়।

গোয়ালন্দ পৌরসভার মেয়র ও পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. নজরুল ইসলাম বলেন, ‘রাজবাড়ী-১ আসনে বিজয়ী করতে গোয়ালন্দের ভোট একটি বড় ভূমিকা রাখে। দলের মধ্যে কোন্দল থাকলেও তা জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের উদ্যোগে শেষ হয়েছে। আমরা এখন থেকে সবাই ঐক্যবদ্ধভাবে নৌকাকে বিজয়ী করতে কাজ করে যাচ্ছি।’

স্বতন্ত্র প্রার্থী ইমদাদুল হক বিশ্বাস বলেন, ‘নৌকার প্রার্থীকেই মূল প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী মনে করলেও বিপুল ভোটে আমি বিজয়ী হব। ১৯৮৫, ১৯৯০, ২০০৯ এবং ২০১৯ সালে রাজবাড়ী সদর উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছি। ভোটাররা কাজী পরিবার থেকে বের হতে চায়। কাজী পরিবার শুধু দলের মধ্যে বিভেদ তৈরি করতে পারে। তারা নদীভাঙা মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করেছে। দীর্ঘদিনেও কোনো পদক্ষেপ নেয়নি।’

এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের প্রার্থী কাজী কেরামত আলী বলেন, ‘স্বতন্ত্র প্রার্থীর ব্যাপারে আমি কোনো মন্তব্য করব না। আল্লাহপাক দয়া করলে ইনশা আল্লাহ ৭ জানুয়ারি বিপুল ভোটে বিজয়ী হব।’

নদীভাঙনের বিষয়ে জানতে চাইলে কাজী কেরামত আলী বলেন, ‘দৌলতদিয়া ঘাটের নদী শাসনের বিষয়ে ইতিমধ্যে ১ হাজার ৪০০ কোটি টাকা একনেকে পাস হয়েছে। আমি প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে যোগাযোগ করে দ্রুত নদী শাসনের কাজ শুরু করব।’