স্বার্থান্বেষী মহলকে দায়ী, তবে তারা কারা, জানায়নি মোংলা বন্দর

মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল মোহাম্মদ মুসা
ছবি: প্রথম আলো

দেশের দ্বিতীয় সমুদ্রবন্দর মোংলার পশুর নদ খননের মাটি তীরে ফেলার বিরোধিতার বিষয়ে সংবাদ সম্মেলন করেছে মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষ। আজ সোমবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে বন্দরের সভাকক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে মোংলা বন্দরের চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল মোহাম্মদ মুসা বলেন, ‘মোংলা বন্দরকে সচল ও গতিশীল রাখতে পশুর চ্যানেলের নাব্যতা বৃদ্ধি এবং সংরক্ষণের বিকল্প নেই। একটি স্বার্থন্বেষী মহল সরকারের উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত করতে মোংলা বন্দরের ইনার বার ড্রেজিং প্রকল্প বন্ধ করার পাঁয়তারা করছে।’

৭৯৩ কোটি ৭৩ লাখ টাকা ব্যয়ে বন্দর চ্যানেলের নাব্যতা বাড়াতে ২০২০ সালের জানুয়ারিতে ‘ইনার বার ড্রেজিং প্রকল্প’ হাতে নেয় মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষ। এর আওতায় পশুর নদের হারবাড়িয়া থেকে বন্দর জেটি পর্যন্ত ২৩ দশমিক ৪ কিলোমিটার খনন করা হচ্ছে। এই কাজ শেষ হলে চট্টগ্রাম বন্দরের মতো মোংলা বন্দর জেটিতেও সাড়ে ৯ মিটার গভীরতার জাহাজ ভিড়তে পারবে বলে দাবি বন্দর কর্তৃপক্ষের।  

তবে পশুর নদ খননের বালু তীরে ফেলার বিরোধিতা করে আসছেন স্থানীয় ব্যক্তিরা। জীবিকা হারানোর শঙ্কায় খুলনার দাকোপ উপজেলার বাণীশান্তা ইউনিয়নের হুকুমদখল করা ৩০০ একর জমিতে বালু ফেলা প্রতিহতের ঘোষণা দিয়েছেন স্থানীয় কৃষকেরা। দুই সপ্তাহের বেশি সময় ধরে চলা এই অবস্থার মাঝে আজ সংবাদ সম্মেলন করলেন মোংলা বন্দরের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ মুসা।

আরও পড়ুন

মোংলা বন্দরের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ মুসা বলেন, ‘ড্রেজিং এলাকার ৩ থেকে ৪ কিলোমিটার এলাকার মধ্যে মাটি ফেলতে হয়। আমরা জমির ক্ষতিপূরণ দিয়ে দুই বছরের জন্য হুকুমদখল নিচ্ছি। নিচু জমি ভরাট করে তাদের জমি আবার তাদের বুঝিয়ে দেওয়া হবে। এতে তাদের কোনো ক্ষতি হবে না। এটা পলিমাটি। জমিও উঁচু হবে। পলিমাটির কারণে ফসল আরও ভালো হবে।’ তাঁর দাবি, ‘একটি মহল চায় না মোংলা বন্দর কার্যকর হোক। রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্রের কাজ শুরুর সময়ও এমন কিছু মহল কাজ করেছিল। তারা সরকারের উন্নয়নকাজ বাধাগ্রস্ত করতে চায়। আমরা তাদের চিহ্নিত করেছি। আইন প্রয়োগকারী সংস্থা তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে।’

‘যারা আন্দোলন করছে, তারা কেউ জমির মালিক না’ উল্লেখ করে মোহাম্মদ মুসা বলেন, ‘কৃষককে ভুল বুঝিয়ে জমিতে মাটি ফেলতে বাধা দেওয়া হচ্ছে। বলা হচ্ছে, এগুলো তিন ফসলি জমি। সেখানে কোনো তিন ফসলি জমি নেই। আমরা খোঁজ নিয়ে দেখেছি, যারা কাজে বাধা দেওয়ার চেষ্টা করছে, তারা ভাড়াটে।’ তবে বন্দরের দৃষ্টিতে কারা সেই ‘স্বার্থান্বেষী মহল’ জানতে চাইলে ‘তদন্ত চলছে’ মন্তব্য করে এখনই তাদের নাম-পরিচয় প্রকাশ করতে চাননি তিনি।

সংবাদ সম্মেলনে ইনার বার ড্রেজিং প্রকল্পের পরিচালক শেখ শওকাত আলী বলেন, পশুর চ্যানেলের চলতি খননকাজের মাটি-বালু ফেলতে ১৫০০ একর জমির প্রয়োজন। এর মধ্যে বাগেরহাটের মোংলা উপজেলার চিলা-জয়মণি এলাকায় ৭০০ একর এবং বন্দরের নিজস্ব ১৫০ একর জমিতে মাটি ফেলা হচ্ছে। বাণীশান্তায় ৩০০ একর জামিতে বালুমাটি ফেলা হবে। বাণীশান্তার ৩০০ একরের মধ্যে ১৮৫ একর দুই ফসলি এবং ১১৫ একর এক ফসলি জমি।

এরই মধ্যে মোংলা অংশে হুকুমদখল নেওয়া ৭০০ একর জমিতে অধিক উঁচু করে বালু ফেলার বিষয়ে জানতে চাইলে সংবাদ সম্মেলনে মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের সদস্য (হারবার ও মেরিন) কমোডর মোহাম্মদ আবদুল ওয়াদুদ তরফদার বলেন, ১৪ ফিট উঁচু করে মাটি ফেলা হবে। এগুলো বালু না, নদীর পলি। কয়েক বছরের মধ্যে এখানে ফসল জন্মাবে। খননের পলি ফেললে জমির মালিকদেরও উপকার হবে। যাঁদের জমি হুকুমদখল নেওয়া হয়েছে, তাঁরা যেন দ্রুত টাকা পান, সে ব্যাপারে খুলনার জেলা প্রশাসনের সঙ্গে কথা হয়েছে।

এদিকে বাণীশান্তার কৃষিজমি রক্ষায় আজকেও বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করেছেন স্থানীয় ব্যক্তিরা। গত তিন দিনের মতো সেখানকার জমিতে আজকেও আমন ধানের চারা রোপণ করেছেন কৃষকেরা।

আরও পড়ুন