বিশ্বজিৎ হত্যা মামলার যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত আসামি বগুড়া থেকে গ্রেপ্তার

২০১২ সালের ৯ ডিসেম্বর বিশ্বজিৎ দাসকে কুপিয়ে ও পিটিয়ে হত্যা করেন ছাত্রলীগের একদল কর্মী
ফাইল ছবি

আলোচিত বিশ্বজিৎ দাস হত্যা মামলার যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত আসামি মোহাম্মদ আলাউদ্দিনকে (৩৫) বগুড়ার মোকামতলা বন্দর থেকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। আজ শুক্রবার ভোর চারটার দিকে গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে শিবগঞ্জ থানা–পুলিশ অভিযান চালিয়ে আলাউদ্দিনকে গ্রেপ্তার করে।

আলাউদ্দিন পঞ্চগড় জেলার আটোয়ারী উপজেলার ছোটধাপ গ্রামের হবিবুর রহমানের ছেলে। শিবগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) দীপক কুমার দাস প্রথম আলোকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

ওসি দীপক কুমার দাস প্রথম আলোকে বলেন, ২০১২ সালে বিশ্বজিৎ হত্যাকাণ্ডের পর মোহাম্মদ আলাউদ্দিন ‘আত্মগোপন’ করেন। পুলিশের নথিতে ‘পলাতক’ আলাউদ্দিন তাঁর স্ত্রীসহ ৭ জুলাই ঈদের ছুটিতে মোকামতলা বন্দরে শ্বশুরবাড়িতে বেড়াতে আসেন। গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে আজ ভোরে আলাউদ্দিনের শ্বশুরবাড়িতে অভিযান চালিয়ে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়।

পুলিশ জানিয়েছে, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে মোহাম্মদ আলাউদ্দিন জানিয়েছেন, আজ রাতে বাসেই তাঁর কক্সবাজার জেলার টেকনাফের উদ্দেশে রওনা দেওয়ার কথা ছিল। আলাউদ্দিন ও তাঁর স্ত্রী নাহিদ ফেরদৌস টেকনাফে আলাদা দুটি বেসরকারি সংস্থায় চাকরি করেন। বিশ্বজিৎ হত্যাকাণ্ডের আগে থেকেই আলাউদ্দিন ও নাহিদার পরিচয় ছিল। ২০১৬ সালে তাঁরা বিয়ে করেন। বিশ্বজিৎ হত্যাকাণ্ডের পর মোহাম্মদ আলাউদ্দিন গা ঢাকা দেন। পরে পরিচয় গোপন করে প্রথমে তিনি গাজীপুরে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি নেন। আলাউদ্দিন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেছেন এবং সেখানে ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন।

২০১২ সালের ৯ ডিসেম্বর বিরোধী দলের অবরোধ কর্মসূচি চলাকালে বাহাদুর শাহ পার্কের কাছে পথচারী বিশ্বজিৎ দাসকে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখা বাংলাদেশ ছাত্রলীগের কর্মীরা নির্মমভাবে পেটান ও কোপান। বাঁচার জন্য দৌড় দিলে তিনি শাঁখারীবাজারের রাস্তার মুখে পড়ে যান। রিকশাচালক রিপন তাঁকে রিকশায় তুলে মিটফোর্ড হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানে চিকিৎসক বিশ্বজিৎকে মৃত ঘোষণা করেন। ঘটনার সময় বিশ্বজিৎ লক্ষ্মীবাজারের বাসা থেকে শাঁখারীবাজারে নিজের দোকানে যাচ্ছিলেন।

বিশ্বজিৎ শরীয়তপুরের নড়িয়া উপজেলার ভোজেশ্বর গ্রামের দাসপাড়া মহল্লার বাসিন্দা অনন্ত দাসের ছেলে। এ ঘটনায় ওই দিনই সূত্রাপুর থানায় মামলা হয়। মামলাটি পরে দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে স্থানান্তর করা হয়।

এরপর ২০১৩ সালের ৮ ডিসেম্বর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-৪-এর বিচারক এ বি এম নিজামুল হক এ মামলায় রায় দেন। রায়ে ২১ আসামির মধ্যে ৮ জনকে মৃত্যুদণ্ড ও ১৩ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়। নিম্ন আদালতে আদেশের বিরুদ্ধে আপিল করা হলে মৃত্যুদণ্ড পাওয়া আট আসামির মধ্যে দুজনের মৃত্যুদণ্ড বহাল, চারজনের মৃত্যুদণ্ড পরিবর্তন করে যাবজ্জীবন এবং অপর দুজনকে খালাস দিয়ে ২০১৭ সালের ৬ আগস্ট রায় দেন হাইকোর্ট। এ ছাড়া যাবজ্জীবন কারাদণ্ড পাওয়া ১৩ আসামির মধ্যে যে দুজন আপিল করেন, তাঁরা খালাস পেয়েছিলেন।

শিবগঞ্জ থানার ওসি বলেন, বিশ্বজিৎ হত্যা মামলার এজাহারে ৪ নম্বর আসামি ছিলেন মোহাম্মদ আলাউদ্দিন। এ মামলার রায়ে আলাউদ্দিনের যাবজ্জীবন সাজা হয়। তাঁর বিরুদ্ধে বিশ্বজিৎ হত্যা মামলায় পঞ্চগড়ের আটোয়ারী থানায় গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি রয়েছে। এ কারণে গ্রেপ্তার আলাউদ্দিনকে আটোয়ারী থানা–পুলিশের কাছে হস্তান্তর করার প্রক্রিয়া চলছে।