ব্যানারে ঢাকা পড়ে আছে ভাস্কর্য

প্রাঙ্গণটির ঠিক সামনে বিশাল ব্যানার। বন্ধ হয়ে গেছে প্রবেশপথ। ভেতরে জমেছে ময়লা-আবর্জনা। ফিরে যাচ্ছেন অনেক দর্শনার্থী।

ঐতিহ্য প্রাঙ্গণের সামনে বিশাল ব্যানার বোর্ড। ঢাকা পড়েছে ভাস্কর্য। আসছেন না দর্শনার্থী। গতকাল দুপুরে গাজীপুর জেলা প্রশাসকের কার্যালয় চত্বরে
প্রথম আলো

ভাওয়াল রাজা প্রায়ই বৈকালিক ভ্রমণে বের হতেন। বাহন হিসেবে থাকত হাতি বা ঘোড়ার গাড়ি। রাজ্য বিস্তারে কখনো অন্য রাজ্য আক্রমণ করতেন। অবসরে যেতেন গভীর বনে শিকার। আর সেই শিকারের প্রতিকৃতি শোভা পেত রাজদরবারে।

ভাওয়াল পরগনার এমন ইতিহাস অবলম্বনে গাজীপুর জেলা প্রশাসক কার্যালয় চত্বরে নির্মাণ করা হয় এক দৃষ্টিনন্দন ভাস্কর্য। নাম দেওয়া হয় ‘ভাওয়াল ঐতিহ্য প্রাঙ্গণ’। কিন্তু প্রাঙ্গণটি এখন অযত্ন-অবহেলার শিকার। প্রাঙ্গণটির প্রবেশপথে স্থাপন করা হয়েছে বিশাল ব্যানার বোর্ড। এতে ঢাকা পড়েছে ভাস্কর্য। ভেতরে জমেছে ময়লা-আবর্জনা। বিরক্তি নিয়ে ফিরে যাচ্ছেন দর্শনার্থীরা।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ঐতিহ্য প্রাঙ্গণটির দুটি অংশ। এক পাশে ফুটে উঠেছে ভাওয়াল পরগনার ঐতিহ্য, অন্য পাশে গাজীপুরে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস। ভাস্কর্যের ডান পাশে প্রথমেই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তাজউদ্দীন আহমদের প্রতিকৃতি। এরপর বাংলাদেশের মানচিত্র ও গাজীপুরের ইতিহাসের খণ্ডচিত্র। ২০১৮ সালের ১৬ ডিসেম্বর তৎকালীন জেলা প্রশাসক দেওয়ান মুহাম্মদ হুমায়ূন কবির ভাস্কর্যটির উদ্বোধন করেন। ভাস্কর কুয়াশা বিন্দু। মোট নির্মাণ ব্যয় ১০ লাখ টাকা।

গতকাল শনিবার দুপুরে সরেজমিনে দেখা যায়, প্রাঙ্গণটির ঠিক সামনে স্থাপন করা হয়েছে কাঠের তৈরি বিশাল ব্যানার বোর্ড। এতে লাগানো হয়েছে জাতীয় স্থানীয় সরকার দিবস ২০২৩-এর ব্যানার। এতে বন্ধ হয়ে গেছে প্রাঙ্গণটির প্রবেশপথ। ঢাকা পড়েছে ভাস্কর্য। ভেতরে যত্রতত্র পড়ে আছে গাছের পাতা ও পাখির বিষ্ঠা। প্রাঙ্গণটি ঘিরে চার–পাঁচজন দর্শনার্থীর জটলা। ভেতরে প্রবেশ করতে না পেরে কেউ চলে যাচ্ছেন। কেউবা ভেতরে প্রবেশ করছেন প্রাচীর ডিঙিয়ে। গত ১২ সেপ্টেম্বর দুপুরেও ছিল একই চিত্র।

কার্যালয় ফটকের নিরাপত্তাকর্মী মো. রাসেল জানান, দীর্ঘদিন ধরেই প্রাঙ্গণটির সামনে এই ব্যানার বোর্ড স্থাপন করা হয়েছে। এটি নির্মাণ করেছে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়। বিভিন্ন দিবস বা অনুষ্ঠানের ব্যানার লাগানো হয়। অনুষ্ঠান বা দিবস শেষে ব্যানার উঠিয়ে পুনরায় নতুন ব্যানার লাগানো হয়।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে আরেকজন নিরাপত্তাকর্মী বলেন, নির্মাণের পর থেকেই ভাস্কর্যটি ঘিরে মানুষের ভিড় বাড়তে থাকে। প্রতিদিনই মানুষজন এখানে ঘুরতে আসেন। বিশেষ করে বিকেলে আশপাশের বাসিন্দারা শিশুদের নিয়ে ঘুরতে আসেন। কিন্তু এখন পুরো প্রাঙ্গণটিই রয়েছে অযত্ন-অবহেলায়। আর এসব কারণে আগের মতো মানুষজনও আসেন না।

প্রাঙ্গণটিতে ঘুরতে এসেছিলেন দক্ষিণ ছায়াবীথির বাসিন্দা রাকিবুল রায়হান। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, আগে জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের মূল ফটকে এলেই সবার আগে ভাস্কর্যটি চোখে পড়ত। ঐতিহ্য প্রাঙ্গণটি দেখেই মন জুড়িয়ে যেত। কিন্তু এখন সবার আগে চোখে পড়ে বিজ্ঞাপনী ব্যানার। ব্যানারে ভাস্কর্যই দেখা যায় না। এটা খুবই দৃষ্টিকটু।

একইভাবে আক্ষেপ করলেন ভাস্কর কুয়াশা বিন্দু। তিনি বলেন, ‘এটি একটি ঐতিহ্য প্রাঙ্গণ। এখানে মানুষজন মুঠোফোনে ছবি ধারণ, গল্প-গুজবসহ নানাভাবে অবসর উপভোগ করেন। কিন্তু এখন দিনের পর দিন ব্যানার লাগিয়ে রাখা হচ্ছে। এটা খুবই অস্বস্তিকর। যেহেতু আমি এটার ভাস্কর, তাই পরিচিত অনেকেই ফোন দিয়ে দুঃখ প্রকাশ করেন। কিন্তু আমি তাঁদের কিছুই বলতে পারি না।’

জানতে চাইলে গাজীপুর জেলা প্রশাসক আবুল ফাতে মোহাম্মদ সফিকুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘ভাস্কর্য ঢাকা পড়েনি। মূলত বিভিন্ন দিবস উপলক্ষে এখানে ব্যানার লাগানো হয়। আমি এখানে যোগদানের আগে থেকেই এভাবে ছিল। তারপরও আমি খোঁজ নিয়ে দেখি। যদি কারও কোনো অসুবিধা হয় বা দর্শনার্থী সমস্যায় পড়েন, তবে প্রয়োজনে ব্যানারটি সরিয়ে নেওয়া হবে।’