শেরপুরে এক রাতে অর্ধশত বিয়ে

১৪২৯ বাংলা বছরের বিয়ের শেষ শুভ দিনে একটি বিয়ের অনুষ্ঠানে বর-কনে। বৃহস্পতিবার দিবাগত গভীর রাতে শেরপুর শহরের তেরাবাজার এলাকায়
ছবি: দেবাশীষ সাহা রায়

হিন্দু পঞ্জিকা অনুযায়ী, ১৬ মার্চ থেকে শুরু হচ্ছে বাংলা ১৪২৯ সনের চৈত্র মাস। সাধারণত চৈত্র মাসে হিন্দু সম্প্রদায়ের ছেলেমেয়েদের বিয়ে হয় না। তাই ২৪ ফাল্গুন গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে শেরপুর জেলা শহরে প্রায় অর্ধশত হিন্দু বিয়ে অনুষ্ঠিত হয়েছে। একই দিনে একসঙ্গে এত বিয়ে অনুষ্ঠিত হওয়ায় পুরোহিত–সংকট দেখা দেয়। পাশাপাশি বাদ্যযন্ত্রীদেরও চাহিদা বেড়ে যায়।

পুরোহিত ও সংশ্লিষ্ট পরিবার সূত্রে যায়, হিন্দুধর্মীয় শাস্ত্র অনুযায়ী, চৈত্র মাসে বিয়ের অনুষ্ঠান হয় না। ফলে ২৪ ফাল্গুন (গতকাল বৃহস্পতিবার) ছিল বাংলা ১৪২৯ সনের হিন্দু সম্প্রদায়ের ছেলেমেয়েদের বিয়ের শেষ শুভদিন। এদিন বিয়ে না হলে বিয়ের পরবর্তী দিনক্ষণের জন্য ১৪৩০ সালের বৈশাখ মাস পর্যন্ত অর্থাৎ আরও প্রায় দেড় মাস অপেক্ষা করতে হবে। তাই অভিভাবকেরা নিজ সন্তানদের চলতি ফাল্গুন মাসের শেষ শুভ দিনে বিয়ের আয়োজন করেন।

শেরপুর শহরের তেরাবাজার এলাকার একটি বিয়েবাড়িতে বরযাত্রী হয়ে আসেন জামালপুরের বকশীগঞ্জ উপজেলার বাবন কুমার সাহাব। তিনি আজ শুক্রবার সকালে প্রথম আলোকে বলেন, মাত্র ১৫ দিন আগে তাঁর শ্যালকের বিয়ে ঠিক হয়েছিল। বৃহস্পতিবার চলতি বাংলা বছরের বিয়ের শেষ দিন হওয়ায় অল্প সময়ের মধ্যেই তাঁর শ্যালকের বিয়ের কাজ সম্পন্ন করেছেন। বিয়েতে এসে তিনি খুব আনন্দিত।

বিয়ের ধুম পাড়ায় বিয়েবাড়ি ও কমিউনিটি সেন্টারগুলো বাদ্য বাজনায় মুখর ছিল। পাশাপাশি শহরে বিপুলসংখ্যক বরযাত্রীর আগমন ঘটে। দূরদূরান্ত থেকে আসা বরযাত্রীদের রাত যাপনের জন্য শহরের আবাসিক হোটেলগুলো ছিল পরিপূর্ণ। একদিনে অনেকগুলো বিয়ে অনুষ্ঠিত হওয়ায় বাদ্যযন্ত্রীদের ব্যাপক চাহিদা বেড়ে যায়। এ সুযোগে তাঁরা স্বাভাবিক পারিশ্রমিকের চেয়ে পাত্র-পাত্রীর অভিভাবকদের কাছ থেকে বেশি টাকা আদায় করেন।

শহরের মুন্সিবাজার এলাকার ব্যবসায়ী রবীন্দ্র চন্দ্র দে বলেন, আর মাত্র এক সপ্তাহ পরেই চৈত্র মাস। চৈত্র মাসে কোনো বিয়ে হবে না। তাই তড়িঘড়ি করে ফাল্গুন মাসের বিয়ের শেষ দিনটিতে তাঁর মেয়ের বিয়ে দিলেন।

শেরপুরের বিশিষ্ট পুরোহিত বাবলু গোস্বামী শুক্রবার দুপুরে প্রথম আলোকে বলেন, কথায় আছে, ‘শুভ কাজে বিলম্ব করতে নেই।’ চৈত্র মাসে হিন্দুদের বিয়ে হয় না। আর ফাল্গুন মাসের শেষ দিনটিতে বিয়ে না হলে ছেলেমেয়ের অভিভাবকদের প্রায় দেড় মাস অপেক্ষা করতে হবে। এতে অনেক সময় নানা ধরনের বাধাবিপত্তি আসতে পারে। তাই এ চিন্তা মাথায় রেখে ছেলেমেয়ের অভিভাবকেরা বৃহস্পতিবারের শুভ দিনটিকে কাজে লাগিয়েছেন।