কামড় খেয়ে সাপের ভিডিও ধারণ করা তরুণ ২২ দিন পর মারা গেছেন

মরদেহ উদ্ধার
প্রতীকী ছবি

রাতে নিজ ঘরে শুয়ে ছিলেন আসাদ আলম (২২)। ভোররাতে হঠাৎ হাতে তীব্র ব্যথায় ঘুম ভেঙে যায়। সাপে কেটেছে টের পেয়ে তাৎক্ষণিক তিনি তাঁর মুঠোফোন নিয়ে সাপটির গতিবিধি ভিডিও করেন। এমনকি নিজের হাতের ক্ষতস্থানের ছবিও তোলেন। ক্ষতস্থান থেকে রক্ত ঝরতে শুরু করলে তিনি মাকে ডেকে তুলে ঘটনার বর্ণনাও দেন। মা-বাবা ছেলেকে চিকিৎসার জন্য ওই দিনই রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করেন। সেখানে ২২ দিন চিকিৎসার পর আজ সোমবার সকালে তাঁর মৃত্যু হয়।

আসাদ আলম নাটোরের নলডাঙ্গা উপজেলার ব্রহ্মপুর ইউনিয়নের বাড়িয়াহাটি গ্রামের আবদুর রহমানের ছেলে। গত ২১ আগস্ট ভোর চারটার দিকে তাঁকে সাপে দংশন করে। মারা যান আজ সোমবার সকাল পৌনে ছয়টার দিকে। আসাদের বাবা আবদুর রহমান বলেন, ‘ছেলেকে বাঁচানোর সব চেষ্টাই করেছি। চিকিৎসককে ভিডিও থেকে সাপের ছবি দেখিয়েছি। সাপ শনাক্ত করে ওষুধ দেওয়া হয়েছে। মাঝে কিছুটা সুস্থ হয়ে উঠেছিল। কিন্তু ২২ দিন চিকিৎসা শেষে আজ সকালে হঠাৎ সে মারা যায়।’

শোকাহত পরিবারের সদস্যদের বরাত দিয়ে আজ বিকেলে প্রথম আলোর কাছে মর্মান্তিক এই ঘটনার বর্ণনা তুলে ধরেন ব্রহ্মপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এস এম আসরাফুজ্জামান। তিনি জানান, প্রতিদিনের মতো গত ২১ আগস্ট রাতে আসাদ আলম খাওয়া শেষে নিজের মাটির ছাপরা ঘরের খাটে শুয়ে পড়েন। ভোরের দিকে হঠাৎ তিনি ডান হাতের কবজিতে ব্যথা অনুভব করেন। চোখ মেলে দেখেন একটি সাপ তাঁর বিছানা দিয়ে নিচে নেমে যাচ্ছে। আসাদ তাৎক্ষণিক তাঁর কাছে থাকা মুঠোফোন দিয়ে সাপটির গতিবিধি ভিডিও করেন।

ইউপি চেয়ারম্যান জানান, সাপটি চলে যাওয়ার পর আসাদ চিৎকার দিলে পাশের ঘর থেকে মা উঠে আসেন। মুঠোফোনে সাপের কাটা স্থানের ছবিও তোলেন। কিছুক্ষণের মধ্যে শরীরে বিষক্রিয়া দেখা দিলে তাঁকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানেই তিনি মারা যান। দুপুরে আসাদের মরদেহ গ্রামের বাড়িতে এনে জানাজা শেষে দাফন করা হয়।

আসাদ আলমের মরদেহ গ্রামে পৌঁছালে শোকের ছায়া নেমে আসে। দলে দলে লোকজন তাঁকে একনজর দেখতে ছুটে আসেন। সাংসারিক কাজকর্মের পাশাপাশি স্থানীয় পরিবেশবাদী স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের হয়ে কাজ করতেন তিনি।

বাংলাদেশ জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ ফেডারেশনের প্রচার সম্পাদক ফজলে রাব্বী বলেন, আসাদ একজন পরিবেশপ্রেমী ছিলেন। তিনি ইচ্ছা করলে তাঁকে কামড় দেওয়া সাপটিকে মেরে ফেলতে পারতেন। কিন্তু না মেরে সাপটি শনাক্ত করার জন্য নিজ হাতে ভিডিও করে রেখেছেন। ভিডিও দেখে বোঝা যায় সাপটি গোখরা প্রজাতির বিষধর সাপ। উন্নত চিকিৎসা দেওয়ার পরও তাঁকে বাঁচানো যায়নি। তাঁর মৃত্যুতে এলাকার সবাই কষ্ট পেয়েছে।