বিয়ের আসর থেকে পালিয়ে বিদ্যালয়ে কিশোরী

বাল্যবিবাহফাইল ছবি: রয়টার্স

মেয়েটির বয়স ১৩। রাজশাহীর আলোর পাঠশালায় অষ্টম শ্রেণিতে পড়ে। গতকাল শনিবার রাতে তাকে বিয়ের ক্ষীর খাওয়ানো হয়। সকালে বরপক্ষ আসে বিয়ের জন্য। মেয়েটি কৌশল করে মাকে বলে, ‘বিয়ে যখন হচ্ছে স্কুলে গিয়ে বিদায় নিয়ে আসি।’ বিদ্যালয়ে এসে শিক্ষকদের জানায়, ইচ্ছার বিরুদ্ধে মা জোর করে তাকে বিয়ে দিচ্ছে। এই বিয়ে বন্ধ করতে হবে। শিক্ষকেরা সব শুনে তার বিয়ে বন্ধের উদ্যোগ নেন।

রাজশাহীর আলোর পাঠশালার প্রধান শিক্ষক রেজিনা খাতুন বলেন, মেয়েটি তাঁদের বিদ্যালয়ের একজন ভালো ছাত্রী। পড়াশোনার প্রতি খুবই আগ্রহ। বাবা নেই। মা অন্যত্র আবার বিয়ে করেছেন। কয়েক দিন আগে মেয়েটি জানিয়েছিল, মা ও সৎবাবা তাকে বিয়ে দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছেন। তাঁরা যেকোনো সময় তার বিয়ে দিয়ে দেবেন। কিন্তু সে প্রাপ্তবয়স্ক না হওয়া পর্যন্ত বিয়ে করতে চায় না। যেভাবেই হোক বিয়ে ঠেকাতে হবে।

আজ রোববার সকাল সাড়ে আটটায় বিদ্যালয়ে এসে ওই কিশোরী শিক্ষকদের বিয়ের বিষয়টি জানায়। কৌশল করে সে বিদ্যালয়ে এসেছে। এদিকে মেয়ের ফিরতে দেরি হওয়া দেখে মা বাড়ির মালিককে বিদ্যালয়ে পাঠান। তিনি এসে বলেন, মেয়ে না যাওয়ায় মা অসুস্থ হয়ে পড়েছে। তাঁকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। অবশ্য শিক্ষকদের জেরার মুখে তিনি স্বীকার করেন, মেয়ের মা অসুস্থ হননি। অসুস্থতার কথা তাঁকে শিখিয়ে দেওয়া হয়েছে।

এ ঘটনার পর সকাল ১০টার দিকে আলোর পাঠশালার শিক্ষকেরা মেয়েটির বাসায় যান। তাঁরা মেয়েটির মাকে সব বুঝিয়ে বলার পর মেয়েকে বিয়ে দেবেন না বলে ওয়াদা করেন এবং বলেন, বরপক্ষের লোকজনকে তিনি বিদায় করে দিয়েছেন। এর মধ্যে মেয়েটি জানায়, বরপক্ষের লোকজনকে পাশের বাড়িতে লুকিয়ে রাখা হয়েছে। শিক্ষকেরা চলে গেলেই তাকে বিয়ের পিঁড়িতে বসানো হবে। শিক্ষকেরা পাশের বাড়িতে গিয়ে দেখেন, বরপক্ষ সেখানে বসে আছে। তাঁদের বাড়ি নওগাঁর আত্রাইয়ে। শিক্ষকেরা বোঝালে তাঁরাও বোঝেন। বিয়ে না করে ফিরে যেতে সম্মত হন।

শিক্ষকেরা চলে আসার পর বরপক্ষের লোকজন ফোন করে প্রধান শিক্ষক রেজিনা খাতুনকে জানান, বিয়ে করতে না দিলে তাঁদের যাতায়াতের খরচ দিতে হবে। এ অবস্থা দেখে প্রধান শিক্ষক মহিলা অধিদপ্তরের উপপরিচালককে ফোন করেন। তিনি এসে মেয়ের মায়ের কাছ থেকে মুচলেকা নেন এবং অঙ্গীকার করান প্রাপ্তবয়স্ক না হওয়া পর্যন্ত তিনি মেয়েকে বিয়ে দেবেন না।

সবাই চলে যাওয়ার পর মেয়ের মা প্রধান শিক্ষককে ফোন করে বলেন, ‘সরকারের ঘরে যখন আমার নাম গেছে, আমার যখন এতই দোষ, এখন এই মেয়ের দায়দায়িত্ব আমি আর বহন করতে পারব না।’ এ অবস্থায় রোববার বিকেলে রেজিনা খাতুন ওই মেয়ের সব দায়দায়িত্ব নেওয়ার ঘোষণা দেন। প্রধান শিক্ষক জানান, এ ঘোষণা দেওয়ার পর রাতে কী হয়, তিনি বলতে পারছেন না। তাঁরা সতর্ক আছেন।