কিশোরগঞ্জে স্ত্রীকে হত্যার দায়ে সাবেক কারারক্ষীর মৃত্যুদণ্ড

আদালত
প্রতীকী ছবি

কিশোরগঞ্জে যৌতুকের জন্য স্ত্রী রোমা আক্তারকে (২২) হত্যার দায়ে সাবেক কারারক্ষী স্বামী খাইরুল ইসলামের (২৮) মৃত্যুদণ্ড ও এক লাখ টাকা জরিমানা করেছেন আদালত। আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে কিশোরগঞ্জের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-১–এর বিচারক মুহাম্মদ হাবিবুল্লাহ এ রায় দেন। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন আদালতের সরকারি কৌঁসুলি এম এ আফজল।

রায় ঘোষণার সময় আসামি খাইরুল ইসলাম আদালতে উপস্থিত ছিলেন। তাঁর বাড়ি টাঙ্গাইলের ঘাটাইল উপজেলার বাইচাইল গ্রামে। তিনি কিশোরগঞ্জ জেলা কারাগারে কারারক্ষী হিসেবে কর্মরত ছিলেন। স্ত্রী হত্যা মামলায় অভিযোগ গঠনের পর তাঁকে বরখাস্ত করা হয়। নিহত রোমা আক্তার কিশোরগঞ্জের কটিয়াদী উপজেলার মানিকখালী গ্রামের দুবাইপ্রবাসী আবদুল মান্নানের মেয়ে।

মামলার সংক্ষিপ্ত বিবরণ থেকে জানা যায়, ২০১৯ সালের মাঝামাঝি সময়ে কিশোরগঞ্জ জেলা কারাগারের তৎকালীন কারারক্ষী খাইরুল ইসলামের (২৮) সঙ্গে রোমা আক্তারের বিয়ে হয়। বিয়ের পর থেকে খাইরুল স্ত্রীকে নিয়ে কিশোরগঞ্জ জেলা কারাগারের কোয়ার্টারে বসবাস করতেন। বিয়ের ছয় মাস পর খাইরুলকে শ্বশুরবাড়ি থেকে তিন লাখ টাকা যৌতুক হিসেবে দেওয়া হয়। কিন্তু এরপরও খাইরুল সন্তুষ্ট ছিলেন না। আবার মোটরসাইকেল কেনার কথা বলে ২ লাখ ৯০ হাজার টাকা যৌতুক দাবি করেন। সেই টাকা এনে দিতে স্ত্রী অপারগতা প্রকাশ করেন। এর পর থেকে প্রায়ই রোমার ওপর নির্যাতন করতেন খাইরুল।

২০২০ সালের ২২ ডিসেম্বর রাত দুইটার দিকে খাইরুল যৌতুকের দাবিতে স্ত্রীকে পিটিয়ে জখম করেন। এরপর খাইরুল রাত আড়াইটার দিকে শ্বশুরবাড়িতে খবর দেন যে রোমা অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। শ্বশুরবাড়ির লোকজন এসে রোমাকে গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় উদ্ধার করে কিশোরগঞ্জ ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করেন। সেখান থেকে রোমাকে মুমূর্ষু অবস্থায় বাজিতপুরের ভাগলপুর জহুরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। চিকিৎসা শেষে কিছুটা সুস্থ হলে একই বছরের ২৬ ডিসেম্বর কর্তব্যরত চিকিৎসক রোমাকে ছাড়পত্র দেন। পরে ২৯ ডিসেম্বর বেলা দেড়টার দিকে রোমা আক্তারের অবস্থার অবনতি হলে তাঁকে উন্নত চিকিৎসার জন্য অ্যাম্বুলেন্সে করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নেওয়ার পথে বিকেলে সাড়ে চারটার দিকে তিনি মারা যান।

এ ঘটনার পরদিন ৩১ ডিসেম্বর নিহত রোমার মা বাদী হয়ে কিশোরগঞ্জ সদর মডেল থানায় হত্যা মামলা করেন। মামলার তদন্ত শেষে ২০২১ সালের ৩১ জুলাই কিশোরগঞ্জ সদর মডেল থানার তৎকালীন পরিদর্শক জয়নাল আবেদীন আদালতে আসামি খাইরুল ইসলামের নামে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। সাক্ষ্যপ্রমাণ ও শুনানি শেষে আদালত এ রায় দেন।