কুমিল্লায় বার্ডের গাছে গাছে কাঁঠাল, ম-ম ঘ্রাণ

কুমিল্লার কোটবাড়ীর বার্ড ক্যাম্পাসে ঢুকতেই নাকে ভেসে আসে পাকা কাঁঠালের ম-ম ঘ্রাণছবি: প্রথম আলো

কুমিল্লার কোটবাড়ী এলাকায় অবস্থিত বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন একাডেমি (বার্ড) ক্যাম্পাস। লালমাই-ময়নামতি পাহাড় ও পাহাড়ের কোলে প্রাকৃতিক পরিবেশে প্রতিষ্ঠিত বার্ড ক্যাম্পাসে ঢুকতেই নাকে ভেসে আসে পাকা কাঁঠালের ম-ম ঘ্রাণ। পুরো বার্ড ক্যাম্পাসেই এখন কাঁঠালের সমাহার। গাছে গাছে ঝুলে আছে কয়েক হাজার কাঁঠাল। শত শত গাছের মধ্যে কোনো কোনো গাছে ৪০ থেকে ৫০টি কাঁঠালও ধরেছে। বার্ডের এই কাঁঠাল সুমিষ্ট ও রসালো, তাই সবার কাছে বেশ চাহিদাও আছে।

বার্ডের বাগান শাখায় কর্মরতদের ভাষ্য, দীর্ঘদিন ধরে কাঁঠালের মৌসুম এলে নিলামের মাধ্যমে বার্ডের কাঁঠালগাছে গুনে গুনে সংখ্যা নির্ধারণের পর বিক্রি করা হয়। তবে এ বছর ‘সিন্ডিকেট’ করে দাম একেবারে কমিয়ে নিলামে নিতে চেয়েছিল একটি চক্র। এ কারণে শেষ পর্যন্ত বার্ড কাঁঠাল নিলামে বিক্রি করেনি। বার্ডের বাগান শাখার ব্যবস্থাপনায় এ বছর কাঁঠাল বিক্রি হচ্ছে। এতে নিলামের চেয়ে অনেক বেশি দরে বিক্রি করা সম্ভব হচ্ছে।

কুমিল্লা নগর থেকে প্রায় ৮ কিলোমিটার এবং ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কোটবাড়ী এলাকার নন্দনপুর থেকে ৩ কিলোমিটার পশ্চিমে বার্ডের অবস্থান। ১৯৫৯ সালের ২৭ মে সমাজবিজ্ঞানী আখতার হামিদ খান বার্ড প্রতিষ্ঠা করেন। লালমাই-ময়নামতি পাহাড় ও পাহাড়ের পাদদেশে ১৫৬ একর জায়গা নিয়ে বার্ড ক্যাম্পাস। বার্ড স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় বিভাগের অধীন একটি স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান।

সম্প্রতি সরেজমিন দেখা গেছে, বার্ড ক্যাম্পাসজুড়ে থাকা অন্তত ৬০০ গাছে ধরে আছে কয়েক হাজার কাঁঠাল। একেবারে ছোট থেকে বড় আকারের কাঁঠাল আছে। তবে মাঝারি ও ছোট আকৃতির কাঁঠালের সংখ্যা বেশি। কোনো কোনো গাছে একসঙ্গে ৪০ থেকে ৫০টি কাঁঠালও ধরেছে। কোথাও কোথাও গাছে পেকে থাকা কাঁঠাল সুবাস ছড়াচ্ছে। পাকা কাঁঠালের ঘ্রাণে ম-ম করছে বার্ড এলাকা। বার্ড ক্যাম্পাসে থাকা উঁচু-নিচু টিলা, সমতল, বাগান, পুকুরপাড়, একাডেমি,  প্রশিক্ষণসহ বিভিন্ন ভবনের পাশ, ক্রীড়া ও বিনোদন এলাকা, অফিস এলাকা ও অডিটরিয়ামের পাশের গাছগুলোয় এখন কাঁঠালের মেলা।

বার্ডের নীলাচল পাহাড়ের পাদদেশে দেখা গেছে, বাগান শাখার কর্মীরা গাছ থেকে কাঁঠাল নামাচ্ছেন। বিভিন্ন গাছ থেকে নামানোর পর কাঁঠালগুলো একটি স্থানে প্রথমে স্তূপ করে রাখা হচ্ছে। পরে সেখান থেকে ভ্যানে করে বার্ডের সামনেসহ কয়েকটি স্থানে বিক্রি করা হচ্ছে। তবে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই বার্ডের ভেতরে এসে ছোট ছোট পাইকার কাঁঠাল পিস হিসাবে কিনে ভ্যানে করে নিয়ে যাচ্ছেন। আকারভেদে ৩০ থেকে ৫০ টাকার মধ্যে প্রতিটি কাঁঠাল পাইকারি বিক্রি হচ্ছে।

বার্ডের কর্মচারী ইউনিয়নের সভাপতি মো.জাকির হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, পাহাড়ের কোলে প্রতিষ্ঠিত বার্ডের গাছগুলোয় প্রতিবছরই ভালো কাঁঠাল ধরে। এ বছরও কাঁঠালের বাম্পার ফলন হয়েছে। জ্যৈষ্ঠের শুরু থেকেই গাছ থেকে কাঁঠাল নামানো শুরু হয়। প্রতিষ্ঠার পর থেকেই নিলামের মাধ্যমে বার্ডের কাঁঠাল বেশি বিক্রি হয়েছে। তবে মাঝেমধ্যে বিভিন্ন বছরে প্রদর্শনীসহ বিভিন্ন কারণে নিলামে কাঁঠাল বিক্রি হয়নি। সর্বশেষ প্রায় ১২ বছর পর এবার কাঁঠাল নিলামে বিক্রি করা হয়নি।

বার্ডের বাগান শাখায় কর্মরত বাবর আলী নীলাচল পাহাড়ের পাদদেশে গাছ থেকে কাঁঠাল নামানোর কাজ করছিলেন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, এ বছর বার্ডের বিক্রিযোগ্য কাঁঠালের পরিমাণ ৬ হাজার ৭৭৬টি। এর মধ্যে প্রায় ৩ হাজারের মতো কাঁঠালগাছ থেকে কেটে বিক্রি করা হয়েছে। অন্যগুলো সপ্তাহখানেকের মধ্যে বিক্রি হয়ে যাবে বলে তাঁর আশা।

বার্ডের মহাপরিচালক সাইফ উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘আমরা এ বছরও চেয়েছিলাম নিলামেই কাঁঠাল বিক্রি করতে। দুই দফা নিলাম ডাকা হয়েছিল। কিন্তু যখন দেখলাম সিন্ডিকেট করে মাত্র ৭ টাকা দরে প্রতি পিস কাঁঠাল নিলামে নেওয়ার চেষ্টা চলছে, তখন আমরা সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করেছি। তাই বাগান শাখার ব্যবস্থাপনায় কাঁঠাল বিক্রি চলছে। এরই মধ্যে অর্ধেক কাঁঠাল বিক্রি শেষ হয়ে গেছে। এতেই নিলামের চেয়ে বেশি অর্থ পাওয়া গেছে। নিজেরা বিক্রি করাতে বার্ড লাভবান হয়েছে।’

কুমিল্লা সদর দক্ষিণ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা জোনায়েদ কবির খান বলেন, কুমিল্লা অঞ্চলে কাঁঠালের জন্য বার্ড ক্যাম্পাসের খ্যাতি আছে। বার্ডে প্রতিবছরই কাঁঠালের বাম্পার ফলন হয়। এর মূল কারণ হচ্ছে পাহাড়ি এলাকার লাল মাটি। এই লাল মাটিতে প্রচুর কাঁঠাল ধরে। এসব কাঁঠাল অতি সুস্বাদু ও রসে ভরা।