মুকসুদপুরে স্বতন্ত্র প্রার্থীর গাড়ি ও নির্বাচনী ক্যাম্পে হামলা-ভাঙচুর, আটক ১

গোপালগঞ্জের মুকসুদপুর উপজেলায় স্বতন্ত্র প্রার্থীর গাড়িতে হামলার ঘটনা ঘটে। বৃহস্পতিবার বিকেলে মুকসুদপুর কলেজ মাঠের পাশেছবি: সংগৃহীত

গোপালগঞ্জের মুকসুদপুর উপজেলায় ছাত্রলীগ ও যুবলীগের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে গোপালগঞ্জ-১ (মুকসুদপুর-কাশিয়ানী একাংশ) আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. কাবির মিয়ার গাড়ি ও নির্বাচনী ক্যাম্প ভাঙচুরের অভিযোগ উঠেছে। আজ বৃহস্পতিবার বিকেল চারটার দিকে উপজেলার মুকসুদপুর কলেজ মাঠে এ ঘটনা ঘটে।

হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনায় স্বতন্ত্র প্রার্থীর দুজন কর্মী ও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে গিয়ে ইটপাটকেলের আঘাতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কয়েকজন সদস্য আহত হয়েছেন বলে খবর পাওয়া গেছে। আহত ব্যক্তিদের মধ্যে শরিফুল ইসলাম (২৮) নামের এক তরুণকে মুকসুদপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে। এ ঘটনায় উপজেলা যুবলীগের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য উজ্জ্বল আহমেদকে আটক করা হয়েছে।

সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা ও মুকসুদপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এস এম ইমাম রাজি টুলু বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণার শেষ দিনে আজ মুকসুদপুর কলেজ মাঠে জনসভা করতে রিটার্নিং কর্মকর্তা বরাবর আবেদন করেছিলেন স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. কাবির মিয়া (ঈগল)। রিটার্নিং কর্মকর্তা জনসভার অনুমোদন দেন। অন্যদিকে আজ ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী ছিল। মুকসুদপুর কলেজ মাঠে জনসভা থাকায় তিনি ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের সেখানে কোনো কর্মসূচি না করার অনুরোধ করেছিলেন। কিন্তু অনুরোধ উপেক্ষা করে সেখানে কর্মসূচি করায় স্বতন্ত্র প্রার্থীর কর্মী-সমর্থকদের সঙ্গে ঝামেলা হয়।

প্রত্যক্ষদর্শী কয়েকজন জানান, আজ দুপুরে মুকসুদপুর কলেজ মাঠে জড়ো হয়ে মিছিল করেন ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা। বেলা একটার দিকে তাঁরা কলেজের মাঠ থেকে বের হচ্ছিলেন, তখন স্বতন্ত্র প্রার্থী কাবির মিয়ার কর্মী-সমর্থকেরা কলেজের মাঠে প্রবেশ করছিলেন। এ সময় ছাত্রলীগ-যুবলীগের নেতা-কর্মীরা কলেজে প্রবেশের রাস্তা আটকে মিছিল করছিলেন। তখন স্বতন্ত্র প্রার্থী কাবির মিয়া কাশিয়ানী থেকে গাড়িতে মুকসুদপুর কলেজ মাঠে আসছিলেন। ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা ওই সময় স্বতন্ত্র প্রার্থীর গাড়ি ভাঙচুর করেন। পরে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা এগিয়ে এসে কাবির মিয়াকে সভাস্থলে পৌঁছে দেন। তখন ছাত্রলীগ-যুবলীগের ইটপাটকেলের আঘাতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যসহ কয়েকজন আহত হন। এ সময় যুবলীগ নেতা উজ্জ্বল আহমেদকে আটক করে র‍্যাব।

এ ঘটনার পর মুকসুদপুর কলেজের পাশে স্বতন্ত্র প্রার্থীর একটি নির্বাচনী ক্যাম্প ও কয়েকটি দোকান ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। স্বতন্ত্র প্রার্থীর কর্মী-সমর্থকদের অভিযোগ, আওয়ামী লীগের প্রার্থী মুহাম্মদ ফারুক খানের কর্মীরা এ হামলা ও ভাঙচুর করেছেন। অভিযোগের বিষয়ে নৌকার প্রার্থী মুহাম্মদ ফারুক খান, মুকসুদপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি রবিউল আলম সিকদার, সাধারণ সম্পাদক সাইদুর রহমানের মুঠোফোন নম্বরে একাধিকবার কল করা হলেও তাঁরা ধরেননি।

স্বতন্ত্র প্রার্থী কাবির মিয়া প্রথম আলোকে বলেন, কলেজ মাঠে জনসভা করতে গেলে তাঁর কর্মী-সমর্থকদের বাধা দেন নৌকা প্রতীকের সমর্থকেরা। এমনকি তাঁকেও কলেজে ঢুকতে বাধা দেন এবং তাঁর গাড়ি ভাঙচুর করেন। নৌকার লোকজন হামলা করে নেতা-কর্মীদের আহত করেন এবং কলেজ মোড়ের চন্ডিবরদী ও পশারগাতিতে তাঁর তিনটি নির্বাচনী ক্যাম্পে ভাঙচুর করেন। জনসভা করতে না দিতে এ হামলা। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী দায়িত্ব পালন না করলে আজ তিনি নেতা-কর্মীদের নিয়ে বড় ধরনের ক্ষতি হতে পারত।

অভিযোগের বিষয়ে মুকসুদপুর উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি মো. নিভেল মোল্লা বলেন, মূলত কলেজের মাঠে অনুষ্ঠান করা নিয়েই সমস্যা হয়। ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে তাঁরা অনুষ্ঠান শুরু করেন। কিছুক্ষণ পর নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এনে আধা ঘণ্টার মধ্যে কলেজ ক্যাম্পাস ত্যাগ করতে বলেন। এ নিয়ে প্রশাসনের সঙ্গে বাগ্‌বিতণ্ডা হয়। তখন নেতা-কর্মীরা কলেজের ফটকে অবস্থান নেন। ওই সময় স্বতন্ত্র প্রার্থীর কর্মীরা গাড়ি নিয়ে আসেন।

নিভেল মোল্লা দাবি করেন, স্বতন্ত্র প্রার্থীর গাড়ি ভাঙা হয়নি। ঝামেলা শুরু হলে উত্তেজিত জনতা সামনে যা পেয়েছে, আক্রমণ করেছে। সংঘর্ষ শুরুর পর ইটপাটকেলের আঘাতে গাড়ির গ্লাস ভেঙে যায়। কলেজ থেকে বাসস্ট্যান্ডের দিকে যাওয়ার সময় উত্তেজনাবশত স্বতন্ত্র প্রার্থীর নির্বাচনী ক্যাম্পে হামলা করেন কেউ কেউ। হামলা-সংঘর্ষে ছাত্রলীগের কয়েকজন আহত হয়েছেন বলে দাবি করেন তিনি।

মুকসুদপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আশরাফুল আলম প্রথম আলোকে বলেন, জনসভাকে কেন্দ্র করে বিক্ষিপ্ত ঘটনা ঘটেছে। এখন পরিবেশ শান্ত আছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় তিন-চারটি বাহিনী কাজ করেছে। যুবলীগের কোনো নেতাকে আটক করা হয়েছে কি না, তিনি নিশ্চিত নন। তবে ইউএনও ইমাম রাজি একজনকে আটকের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

গোপালগঞ্জ-১ আসনে আওয়ামী লীগ থেকে নির্বাচন করছেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কর্নেল (অব.) মুহাম্মাদ ফারুক খান। তাঁর বিরুদ্ধে মুকসুদপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের পদ ছেড়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে ঈগল প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করছেন মো. কাবির মিয়া। তাঁরা দুজন ছাড়াও এই আসনে জাতীয় পার্টির সহিদুল ইসলাম মোল্যা (লাঙ্গল), ন্যাশনাল পিপলস পার্টির (এনপিপি) শেখ মো. আবদুল্লাহ (আম) ও তৃণমূল বিএনপির মো. জাহিদুল ইসলাম (সোনালী আঁশ)। এ আসনে মোট ভোটার ৩ লাখ ৭৩ হাজার ১০০।