পাবনায় আওয়ামী লীগের ‘শান্তি’ সমাবেশ নিয়ে সভাপতি-সম্পাদকের ‘অশান্তি’

সুজানগর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুল ওয়াহাব (বাঁয়ে) ও সাধারণ সম্পাদক শাহিনুজ্জামান
ছবি: সংগৃহীত

পাবনার সুজানগর উপজেলায় আওয়ামী লীগের ‘শান্তি সমাবেশ’ নিয়ে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের মধ্যে ‘অশান্তি’ শুরু হয়েছে। উপজেলার নিজাম উদ্দিন আজগর আলী ডিগ্রি কলেজ মাঠে ২৯ জুলাই সভাপতি শান্তি সমাবেশের ডাক দিয়েছেন।

তবে সাধারণ সম্পাদক সেটি দলীয় সমাবেশ নয় উল্লেখ করে বিজ্ঞপ্তি দেন। পরে পাল্টা বিজ্ঞপ্তি দিয়ে শান্তি সমাবেশ করার ঘোষণা দিয়েছেন সভাপতি। এতে উভয় পক্ষের মধ্যে চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে।

দলীয় নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, দীর্ঘদিন ধরেই সুজানগর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবদুল ওহাব ও সাধারণ সম্পাদক শাহিনুজ্জামানের মধ্যে বিরোধ চলছে। কেউ কারও ছায়া মাড়ান না। এর মধ্যে সভাপতি আবদুল ওহাব ২২ জুলাই উপজেলার নিজাম উদ্দিন আজগর আলী ডিগ্রি কলেজ মাঠে ‘বিএনপি-জামায়াতের নৈরাজ্যের প্রতিবাদে শান্তি সমাবেশের’ ডাক দিয়েছেন। ওই দিন স্থানীয় সংসদ সদস্য আহম্মেদ ফিরোজ কবিরের পারিবারিক একটি অনুষ্ঠান থাকায় সমাবেশটি স্থগিত করা হয়। পরে তারিখ পরিবর্তন করে ২৯ জুলাই শান্তি সমাবেশের দিন ঠিক করা হয়। এর মধ্যে সাধারণ সম্পাদক শাহিনুজ্জামান সমাবেশের বিরোধিতা করে ২৪ জুলাই এক বিজ্ঞপ্তি দিয়ে জানান, সমাবেশটি উপজেলা আওয়ামী লীগের নয়।

বিজ্ঞপ্তিতে শাহিনুজ্জামান উল্লেখ করেন, নিজাম উদ্দিন ডিগ্রি কলেজ মাঠে উপজেলা আওয়ামী লীগের নামে যে শান্তি সমাবেশের আয়োজন করা হয়েছে, সেটির সঙ্গে সুজানগর উপজেলা আওয়ামী লীগের কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই। সমাবেশ আয়োজনের মধ্য দিয়ে একটি পক্ষ সুজানগর উপজেলা আওয়ামী লীগকে বিভক্ত করতে চায়।

আরও পড়ুন

এদিকে সাধারণ সম্পাদক বিজ্ঞপ্তি দেওয়ার পর আজ বৃহস্পতিবার পাল্টা বিজ্ঞপ্তি দেন সভাপতি আবদুল ওহাব। বিজ্ঞপ্তিতে তিনি উল্লেখ করেন, ২৯ জুলাই নিজাম উদ্দিন আজগর আলী ডিগ্রি কলেজ মাঠে উপজেলা আওয়ামী লীগের উদ্যোগে শান্তি সমাবেশ ও উন্নয়ন শোভাযাত্রার আয়োজন করা হয়েছে। উপজেলার ১০টি ইউনিয়ন ও একটি পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি, সাধারণ সম্পাদকসহ ২২ জনের মধ্যে ১৫ জন সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক এবং ১০টি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের মধ্যে ৮ জন এই সমাবেশের সঙ্গে সরাসরি যুক্ত আছেন। এরপরও সাধারণ সম্পাদক বিদেশে থেকে শান্তি সমাবেশকে বিতর্কিত করতে চাচ্ছেন। নেতা-কর্মীদের বিভ্রান্ত না হয়ে সমাবেশ সফল করার আহ্বান জানানো হয় বিজ্ঞপ্তিতে।

এদিকে সভাপতি-সম্পাদকের পাল্টাপাল্টি বিজ্ঞপ্তিতে স্থানীয় নেতা-কর্মীদের মধ্যে চরম ক্ষোভ ও হতাশা তৈরি হয়েছে। নেতা-কর্মীরা দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়েছেন। এতে নির্ধারিত শান্তি সমাবেশের দিনে অপ্রীতিকর ঘটনার আশঙ্কা করছেন কেউ কেউ।

আরও পড়ুন
সুজানগর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের পাল্টাপাল্টি দেওয়া সংবাদ বিজ্ঞপ্তি
ছবি: সংগৃহীত

এ ব্যাপারে জানতে সাধারণ সম্পাদক শাহিনুজ্জামানের মুঠোফোনে একাধিকবার কল করা হলেও সেটি বন্ধ পাওয়া যায়। স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, তিনি বর্তমানে মালয়েশিয়ায় আছেন।

তবে সভাপতি আবদুল ওহাব প্রথম আলোকে বলেন, ‘দলের কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আমরা সমাবেশের আয়োজন করেছি। এখানে বাধা দেওয়া মানে দলের বিরোধিতা করা। দলীয় স্বার্থে যেকোনোভাবেই সমাবেশ করা হবে। কেউ বাধা দিলে সেটা দলের কেন্দ্রীয় কমিটি দেখবে।’

আরও পড়ুন

জানতে চাইলে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক গোলাম ফারুক প্রথম আলোকে বলেন, বিষয়টি জানার পরপরই তাঁরা দুই পক্ষের সঙ্গে কথা বলেছেন। তাঁদের একটি সমঝোতায় আসার আহ্বান জানানো হয়েছে। তাঁরা দ্রুত সমঝোতায় আসবেন বলে তিনি আশা করছেন।