কক্সবাজার শহরের সানমুন হোটেলে আওয়ামী লীগ নেতা সাইফ উদ্দিন (৪৫) হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় গ্রেপ্তার মাদ্রাসাছাত্র আশরাফুল ইসলামের (১৮) বরাত দিয়ে পুলিশ সুপার মো. মাহফুজুল ইসলাম ব্রিফিংয়ে যে বক্তব্য দিয়েছেন, তা প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছেন কক্সবাজার-৩ (সদর-রামু) আসনের সংসদ সদস্য সাইমুম সরওয়ার। বুধবার সকালে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে তিনি ভিডিও বার্তার মাধ্যমে নিহত সাইফ উদ্দিন ও গ্রেপ্তার আশরাফুলের বিষয়ে বিস্তারিত তুলে ধরেন।
ভিডিও বার্তার বিষয়টি নিশ্চিত করে সাইমুম সরওয়ার কমল প্রথম আলোকে বলেন, একজন খুনির মুখের কথায় দায়িত্বশীল একজন পুলিশ কর্মকর্তা (এসপি) এ ধরনের বক্তব্য দিতে পারেন না। তদন্ত শেষ হওয়ার আগে নিহত সাইফ উদ্দিনের চরিত্র হনন করা হয়েছে। তাতে তাঁর পরিবার ও আওয়ামী লীগের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয়েছে।
এর আগে গতকাল দুপুরে নিজ কার্যালয়ে ব্রিফিংয়ে পুলিশ সুপার বলেন, গ্রেপ্তার আশরাফুলকে জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ নিশ্চিত হয়েছে, যৌন নির্যাতনের প্রতিশোধ নিতেই আশরাফুল সানমুন হোটেলের দ্বিতীয় তলার ২০৮ নম্বর কক্ষে সাইফ উদ্দিনকে হত্যা করে পালিয়ে যান। হোটেলের সিসিটিভির ফুটেজে মুখে মাস্ক ও পাঞ্জাবি পরিহিত যে তরুণকে সাইফ উদ্দিনের কক্ষ থেকে বেরিয়ে যেতে দেখা গেছে, তিনিই আশরাফুল।
পুলিশ সুপারের ব্রিফিংয়ের বিষয়ে ভিডিও বার্তায় সংসদ সদস্য সাইমুম সরওয়ার বলেন, সোমবার রাতে গ্রেপ্তার আশরাফুলকে দেখা গেল খুবই স্বাভাবিক অবস্থায় খুনের ঘটনা বর্ণনা দিচ্ছেন। মঙ্গলবার দুপুরে প্রেস ব্রিফিং করে খুনির (আশরাফুল) বরাতে পুলিশ সুপার সেই কথা জাতির সামনে তুলে ধরলেন। সাইফ উদ্দিনের রাজনৈতিক পরিচয় দিয়ে তাঁর ব্যক্তিগত স্খলনের কথা বলেছেন।
পুলিশ সুপারের বক্তব্য বস্তুনিষ্ঠ নয় দাবি করে সাইমুম সরওয়ার বলেন, ‘এখন সাইফ উদ্দিন মরে গেছে। কিন্তু খুনির কথা সত্য বলে পুলিশ সুপারের মাধ্যমে জানতে পারলাম। প্রতিহিংসার কারণে যদি সাইফ উদ্দিনকে হত্যা করা হয়, তাহলে প্রশ্ন ওঠে, কে আশরাফুল?’
আশরাফুলকে ঠান্ডা মাথার খুনি উল্লেখ করে ভিডিও বার্তায় সাইমুম সরওয়ার বলেন, ‘নইলে সে (আশরাফ) হোটেলকক্ষ থেকে স্বাভাবিক অবস্থায় বেরিয়ে যেতে পারত না। রুম থেকে সাইফের মানিব্যাগ, মুঠোফোন, ঘড়ি ও মোটরসাইকেল নিয়ে যেতে পারত না। সিসিটিভি ফুটেজে আশরাফের মধ্যে অস্থিরতা দেখা যায়নি। কক্সবাজার শহরে কেউ এখন মুখে মাস্ক পরে না। আশরাফুলও মাস্ক পরত না। অথচ সাইফ হত্যার ঘটনায় আশরাফুল কেন মাস্ক পরল? কারণ পেশাদার খুনি না হলে, পূর্বপরিকল্পনা না থাকলে ঘটনার সময় আশরাফুল মাস্ক পরল কেন? উদ্দেশ্য—নিজের চেহারা গোপন করা।’
সাইমুম সরওয়ার আরও বলেন, ‘ধরা পড়লে পুলিশকে কী বলা হবে, আশরাফুলকে আগে থেকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু পুলিশ সুপার ঘটনার তদন্ত না করেই খুনির বক্তব্য জাতির সামনে উপস্থাপন করে দিলেন। তাতে শুধু সাইফ উদ্দিন নয়, একজন রাজনৈতিক কর্মী হিসেবে সাইফ উদ্দিনের সুনাম ক্ষুণ্ন হয়েছে। তাঁর (সাইফ) স্ত্রী ও তিন ছেলের কী হবে?’
নিহত সাইফের বাবা আবুল বাশার বলেন, তাঁর ছেলেকে চেতনানাশক কিছু খাইয়ে অজ্ঞান করে ছুরিকাঘাত করে হত্যা করা হয়েছে।
গত সোমবার সকালে হোটেল সানমুনের দ্বিতীয় তলার ২০৮ নম্বর কক্ষ থেকে সাইফ উদ্দিনের হাত বাঁধা লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। ওই দিন বিকেলে কক্সবাজার সদর হাসপাতাল মর্গে ময়নাতদন্ত শেষে লাশ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়। নিহত সাইফ উদ্দিনের বাড়ি শহরের ঘোনাপাড়ায়। সাবেক ছাত্রলীগ নেতা সাইফ উদ্দিন কক্সবাজার শহর আওয়ামী লীগের দুর্যোগ ও ত্রাণবিষয়ক সম্পাদক ছিলেন।
ঘটনার পর সোমবার রাতে টেকনাফ থেকে পুলিশ আশরাফুলকে গ্রেপ্তার করে। আশরাফুলের বাড়ি শহরের পাহাড়তলী এলাকায়। আশরাফুলের পূর্বপুরুষ মিয়ানমারের বাসিন্দা। কয়েক মাস আগে নিহত সাইফ উদ্দিনের শ্যালক নয়নের মাধ্যমে সাইফের সঙ্গে পরিচিত হন।
কক্সবাজার সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম বলেন, মঙ্গলবার রাতে আদালতে ১৬৪ ধারা স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন আশরাফুল। যৌন নির্যাতনের প্রতিশোধ নিতেই সাইফ উদ্দিনকে হত্যার কথা স্বীকার করেন আশরাফ। আজ সকালে তাঁকে কক্সবাজার জেলা কারাগারে পাঠানো হয়েছে।