মেয়েকে হারিয়ে পাগলপ্রায় ফারুক–আয়েশা দম্পতি

মেয়ের কথা বলে বিলাপ করছিলেন মো. ফারুক। রোববার সকালে সীতাকুণ্ড উপজেলার সলিমপুর ইউনিয়নের কালোসনগর এলাকায় ফৌজদার বাড়িতে
ছবি: প্রথম আলো

দুই ছেলে ও এক মেয়েকে নিয়ে ভালোই চলছিল চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড উপজেলার মো. ফারুক ও আয়েশা বেগম দম্পতির সংসার। প্রতিদিন মেয়েকে নিজের মোটরসাইকেলে করে কলেজে পৌঁছে দিতেন ও বাড়িতে আনতেন ফারুক। সেই মোটরসাইকেলের পেছন থেকে পড়ে কাভার্ড ভ্যানের চাপায় নিহত হন তাঁর মেয়ে ফাতেহা জাহান ওরফে জেবা (১৯), যা তাঁকে বেশি পোড়াচ্ছে। একমাত্র মেয়েকে হারিয়ে এই দম্পতি এখন পাগলপ্রায়।

আজ রোববার সকালে সীতাকুণ্ডের সলিমপুর ইউনিয়নের কালুশাহ নগর এলাকায় মো. ফারুকের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, স্বজন ও প্রতিবেশীরা এসে ভিড় করেছেন। ফারুক পার্শ্ববর্তী দোকানের টুলে বসে বিলাপ করছিলেন আর তাঁর স্ত্রী আয়েশা বেগম ঘরে বারবার মূর্ছা যাচ্ছিলেন।

এ সময় মো. ফারুক বুক চাপড়ে কাঁদছিলেন আর বলছিলেন, ‘আঁর মায়ার (আমার মেয়ের) এবার সেকেন্ড ইয়ারত পড়ি (পড়ে) ভার্সিটিত ভর্তি হইবার হতা (কথা)। এত লালন–পালন গড়ি (করে), এত কিছু গরনের পর আঁর মায়াগা গেলগই (মারা গেল)।’

মো. ফারুক র‍্যাংগস ইলেকট্রনিকস লালখান বাজার শোরুমে কাজ করেন। তাঁর মেয়ে ফাতেহা জাহান চট্টগ্রাম নগরের এনায়েত বাজারের এনায়েত বাজার মহিলা কলেজের দ্বাদশ শ্রেণির বিজ্ঞান বিভাগের ছাত্রী ছিলেন। গতকাল বেলা দুইটা থেকে তাঁর ব্যবহারিক পরীক্ষা ছিল। এ জন্য মেয়ে ফাতেহা জাহানকে নিজের মোটরসাইকেলের পেছনে বসিয়ে কলেজে নিয়ে যাচ্ছিলেন ফারুক।

নিহত ফাতেহা জাহান
ছবি: সংগৃহীত

পথে ফৌজদারহাট বায়েজিদ সংযোগ সড়কের ৩ নম্বর সেতু এলাকায় সামনের দিক থেকে একটি কাভার্ড ভ্যানের কারণে মোটরসাইকেল ব্রেক করেন ফারুক। এ সময় সড়কে মাটি থাকায় মোটরসাইকেলসহ পিছলে পড়ে যান। এতে ফাতেহা জাহান পেছন থেকে পড়ে গিয়ে কাভার্ড ভ্যানের চাপায় নিহত হন।

আক্ষেপ করে ফারুক বলেন, ভাবতেই পারেননি, মেয়ে মারা গেছেন। তিনি মনে করেছিলেন, কাভার্ড ভ্যানের ধাক্কায় আঘাত পেয়ে পড়ে আছেন। ডাকার পর দেখেন, মেয়ে আর কথা বলছেন না। এরপর নিজেকে সামলাতে পারেননি। একাধিকবার আত্মহত্যা করার জন্য সড়কে শুয়ে পড়েন। সেখানে উপস্থিত দুই ব্যক্তি তাঁকে জোর করে তুলে নিয়ে আসেন।

প্রধানমন্ত্রী ও প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করে ফারুক বলেন, ফৌজদারহাট বায়েজিদ সংযোগ সড়কের কাছে পাহাড়ি ধস বন্ধ করতে হবে। এ মাটির কারণে গত এক বছরে অনেক দুর্ঘটনা ঘটেছে।

মেয়েকে হারিয়ে সারা রাত ঘুমাননি আয়েশা বেগম। তিনি বলেন, মেয়েকে নিয়ে অনেক স্বপ্ন ছিল তাঁদের। মেয়ের আশা ছিল, চিকিৎসক হবেন। অথচ কাভার্ড ভ্যানের চাপায় সব স্বপ্ন পিষে গেল।

জানতে চাইলে আজ রাত সাড়ে আটটার দিকে সীতাকুণ্ডু থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবুল কালাম আজাদ বলেন, আবেদন করায় লাশ ময়নাতদন্ত ছাড়াই পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। পরিবারের সদস্যদের মামলা করতে বলা হয়েছিল। কিন্তু তাঁরা মামলা করেননি।