‘জালিয়াতি’ তুলে ধরা শিক্ষকের বিরুদ্ধেই তদন্ত কমিটি

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়
ফাইল ছবি

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগের নির্বাচনী বোর্ডে অসৌজন্যমূলক আচরণ এবং গণমাধ্যমে গোপনীয় নথি প্রকাশের অভিযোগে পালি বিভাগের সভাপতি শাসনানন্দ বড়ুয়ার বিরুদ্ধে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে কর্তৃপক্ষ। মঙ্গলবার দুপুরে তিন সদস্যের এ কমিটি গঠন করা হয়। পালি বিভাগের প্রভাষক পদে ‘জালিয়াতির’ পরও এক সহকারী প্রক্টরের স্ত্রীকে নিয়োগের চেষ্টার বিষয়ে আপত্তি জানিয়েছিলেন শাসনানন্দ বড়ুয়া।

তদন্ত কমিটির সদস্যদের আজ বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার স্বাক্ষরিত চিঠিটি ইস্যু করা হয়। দ্রুত সময়ের মধ্যে সুপারিশসহ প্রতিবেদন জমা দেওয়ার নির্দেশনা দেওয়া কমিটিকে।

বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেটের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে জানিয়ে চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, গত ১৩ মার্চ পালি বিভাগের শিক্ষক নিয়োগের নির্বাচনী বোর্ডে (মৌখিক পরীক্ষা) শাসনানন্দ বড়ুয়া অসৌজন্যমূলক আচরণ করেছেন। পাশাপাশি নিয়োগসংক্রান্ত গোপনীয় তথ্য গণমাধ্যমে প্রকাশ করেছেন। সিন্ডিকেট থেকে উপাচার্যকে এ বিষয়ে তদন্ত কমিটি গঠনের জন্য ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে।

তিন সদস্যর তদন্ত কমিটিতে আহ্বায়ক করা হয়েছে আইন অনুষদের ডিন আবদুল্লাহ আল ফারুককে। তবে আজ বিকেল সাড়ে পাঁচটা পর্যন্ত কোনো চিঠি হাতে পাননি জানিয়ে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, চিঠি পেলে কাজ শুরু করবেন।

যা হয়েছিল

গত বছর ২৫ জানুয়ারি ও ২৪ আগস্ট পালি বিভাগের প্রভাষক পদে আলাদা দুটি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। দুটিতেই বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী প্রক্টর অরূপ বড়ুয়ার স্ত্রী অভি বড়ুয়া আবেদন করেন। তবে তিনি স্নাতকে প্রথম শ্রেণিতে প্রথম না হয়েও আবেদনপত্রে প্রথম বলে উল্লেখ করেন। এ ছাড়া বিজ্ঞপ্তিতে মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিকে প্রাপ্ত নম্বরের শতকরা হিসাব উল্লেখ করার কথা থাকলেও তিনি তা করেননি। আবেদনপত্রে এমন ভুল তথ্য দেওয়াকে ‘জালিয়াতি’ হিসেবে চিহ্নিত করে আবেদনপত্র যাচাই-বাছাই কমিটি।

সহকারী প্রক্টর অরূপ বড়ুয়া একই বিভাগের শিক্ষক হওয়ার কারণে বিষয়টি জানতে পারেন অভি বড়ুয়া। এরপর বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে নিজের ভুল স্বীকার করেন তিনি। গত বছরের ৬ নভেম্বর তিনি সংশোধনীসহ আবেদনপত্র জমা দেন। তবে আবেদনের মেয়াদ শেষ হওয়ায় সে আবেদনপত্র গ্রহণ করেনি নিয়োগের যাচাই–বাছাই কমিটি। কমিটির এ সিদ্ধান্তকে উপেক্ষা করে অভি বড়ুয়াকে সাক্ষাৎকারে ডাকে কর্তৃপক্ষ। গত ১৩ মার্চ এই সাক্ষাৎকার নেয় নিয়োগের নির্বাচনী বোর্ড। ওই বোর্ডে পদাধিকার বলে শাসনানন্দ বড়ুয়াও ছিলেন। তিনি অভি বড়ুয়ার নিয়োগে আপত্তি দিলেও তাঁকে তালিকার ১ নম্বরে রেখে নিয়োগের সুপারিশ করে নির্বাচনী বোর্ড।

নির্বাচনী বোর্ডের সুপারিশের পর অভি বড়ুয়ার নিয়োগে কেন আপত্তি করছেন, এ বিষয়ে ওই দিনই উপাচার্য শিরীণ আখতারকে চিঠি দিয়ে ব্যাখ্যা দেন শাসনানন্দ বড়ুয়া। এতে তিনি অভি বড়ুয়ার স্নাতক ও স্নাতকোত্তরে ফলাফল কম থাকা, আবেদন পত্রে ভুল তথ্য দেওয়া, বিধি না মেনে সাক্ষাৎকারে ডাকা, মৌখিক পরীক্ষায় প্রশ্নের উত্তর দিতে না পারার কারণ উল্লেখ করেন।

অভি বড়ুয়াকে নির্বাচনী বোর্ডের সুপারিশের তালিকার ১ নম্বরে রাখা নিয়ে একাধিক গণমাধ্যমে সংবাদ পরিবেশিত হয়। সংবাদে সহকারী প্রক্টর অরূপ বড়ুয়ার বিরুদ্ধে নিয়োগে প্রভাব বিস্তারের অভিযোগ ওঠে।

এরপর গত ১৪ জুলাই অভি বড়ুয়ার নিয়োগের সুপারিশ বাতিল করে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট। তবে সিন্ডিকেটের বৈঠকে শাসনানন্দ বড়ুয়ার বিরুদ্ধেও কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার কে এম নূর আহমদ বলেন, সিন্ডিকেট সভার সিদ্ধান্তের আলোকে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। প্রতিবেদন পাওয়ার পর বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেবে।

জানতে চাইলে পালি বিভাগের সভাপতি শাসনানন্দ বড়ুয়া বলেন, অসৌজন্যমূলক আচরণের অভিযোগ সত্য নয়। তাঁর বিরুদ্ধে তদন্ত কমিটি গঠনের বিষয়ে তিনি এখনো কোনো চিঠি পাননি।

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাদেশ, সংবিধি এবং শিক্ষক নিয়োগ নীতিমালা অনুযায়ী কোন বিভাগে কতজন শিক্ষক দরকার হবে, তা নির্ধারণ করে সংশ্লিষ্ট বিভাগের পরিকল্পনা কমিটি। এরপর শূন্য পদের বিপরীতে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী আবেদনকারীদের তথ্য যাচাই-বাছাই করা হয়। এরপর এসব তথ্য পাঠানো হয় নিয়োগ বোর্ডে। বোর্ড প্রার্থীদের সাক্ষাৎকার নেয় এবং নিয়োগের সুপারিশ করে। পরে সিন্ডিকেট সভায় নিয়োগের চূড়ান্ত অনুমোদন হয়।