সচেতনতার ঘাটতিতেই ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন বেশি

ডেঙ্গু সেরোটাইপ ২ ভাইরাসছবি: সংগৃহীত

চট্টগ্রাম শহরে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্তদের ৪৫ ভাগই পঞ্চম শ্রেণির বেশি পড়াশোনা করেননি। ডেঙ্গু ভাইরাসের সংক্রমণ সম্পর্কে অসচেতনতাই এর কারণ বলে গবেষকেরা জানিয়েছেন।

চট্টগ্রামে ডেঙ্গুতে আক্রান্তদের নিয়ে করা এক গবেষণায় এই তথ্য উঠে এসেছে। এসপেরিয়া হেলথ রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশনের তত্ত্বাবধানে সম্প্রতি চট্টগ্রামের ছয়টি প্রতিষ্ঠানের গবেষকেরা যৌথভাবে এই গবেষণা করেন। চার মাস ধরে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত চট্টগ্রামের ১ হাজার ৫৫০ জন নিয়ে গবেষণাটি করা হয়। এই রোগীদের রোগতত্ত্ব, জিনগত প্রভাব, ভাইরাসের ধরন, জিনোমের প্রকরণ উঠে এসেছে গবেষণায়।

গবেষণায় দেখা গেছে, চট্টগ্রামে এবার ডেঙ্গুতে আক্রান্তদের মধ্যে প্রতি পাঁচজনের একজন ছিল শিশু। আক্রান্তদের ৬৫ ভাগ পুরুষ হলেও এই রোগে নারী ও শিশুমৃত্যু বেশি হয়েছে। এ ছাড়া ডেঙ্গুতে ভোগা ৭৫ ভাগ রোগীই ডেন–২ সেরোটাইপ ধরনের মাধ্যমে আক্রান্ত হয়েছেন।

গবেষণায় আরও উঠে আসে, চট্টগ্রামে ডেঙ্গুর বিরল ধরন ডেন–১ সেরোটাইপ শনাক্ত হয়েছে। তবে মাত্র ৫ ভাগ মানুষ এই সেরোটাইপে আক্রান্ত হয়েছেন। এ ছাড়া গবেষণায় চট্টগ্রামের বেশ কয়েকটি এলাকাকে হটস্পট হিসেবেও চিহ্নিত করা হয়েছে।

চট্টগ্রামের ৯৯ শতাংশ রোগীর মধ্যে ডেঙ্গু সংক্রমণের পর জ্বরের প্রাধান্য দেখা গেছে। তবে শিশুদের ক্ষেত্রে শতভাগ রোগীর মাঝেই জ্বরের লক্ষণ ছিল। এ ছাড়া স্বল্পশিক্ষিত মানুষের মধ্যে ডেঙ্গুর প্রকোপ বেশি দেখা যায়। পঞ্চম শ্রেণির বেশি পড়াশোনা করেননি—এমন ডেঙ্গু রোগী ছিল চট্টগ্রামে ৪৫ শতাংশ। চট্টগ্রামের ৬০ ভাগ ডেঙ্গু রোগীর আবাসস্থল পাঁচটি এলাকায়, যা গবেষকেরা হটস্পট হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। এলাকাগুলো হলো বাকলিয়া, চকবাজার, কোতোয়ালি, ডবলমুরিং এবং বায়েজিদ বোস্তামী এলাকা। এ ছাড়া গ্রামাঞ্চলের মধ্যে সীতাকুণ্ড, হাটহাজারী, পটিয়া এবং কর্ণফুলী এলাকা থেকে সবচেয়ে বেশি রোগী পাওয়া গেছে।

এতে প্রধান গবেষক হিসেবে ছিলেন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের মেডিসিন বিভাগের প্রধান অধ্যাপক এম এ সাত্তার। গবেষণার পরিচালক হিসেবে ছিলেন এসপেরিয়া পরিচালক এবং চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের মেডিসিন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক আবদুর রব। আরও ছিলেন চমেকের সহকারী অধ্যাপক নূর উদ্দিন মোহাম্মদ ফয়সাল এবং চট্টগ্রাম জেনারেল হসপিটালের কনসালট্যান্ট এইচ এম হামিদুল্লাহ মেহেদী। সহ–প্রধান গবেষক হিসেবে ছিলেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং এবং বায়োটেকনোলজি বিভাগের অধ্যাপক আদনান মান্নান।

আদনান মান্নান বলেন, চট্টগ্রামের যাদের মধ্যে সেরোটাইপ–১ পাওয়া গেছে, তাদের মধ্যে ৭০ ভাগ ছিল শিশু। চট্টগ্রামের ডেঙ্গু আক্রান্ত শিশু শহর এলাকায় বেশি। প্রাপ্তবয়স্ক মানুষদের মধ্যে ডেঙ্গু সেরোটাইপ–২ বেশি দেখা গেছে, যা প্রায় ৭৫ ভাগ। রোগীদের মধ্যে দেখা গেছে সচেতনতার অভাব। চট্টগ্রামের ২০ ভাগ মানুষ এখনো জানেন না ডেঙ্গুর মূল কারণ মশা। জমাটবাঁধা পানি থাকলে সেখানে ডেঙ্গু মশার বিস্তার বাড়ে সেই তথ্যও ১৫ শতাংশ মানুষ জানেন না। ডেঙ্গুতে আক্রান্তদের ৪০ শতাংশ মশারি ব্যবহার করতেন না।

গবেষণায় আরও দেখা যায়, ৫ ভাগ মানুষের আগেও ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হওয়ার ইতিহাস ছিল। পুরো গবেষণার সমন্বয় ও তত্ত্বাবধানে ছিল স্বাস্থ্যবিষয়ক গবেষণা প্রতিষ্ঠান এসপেরিয়া হেলথ রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশন। গবেষণার সময়কাল ছিল জুলাই থেকে নভেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহ পর্যন্ত। গবেষকেরা মনে করেন হটস্পট চিহ্নিত জায়গায় পানি জমাট হয়ে থাকা এবং জলাবদ্ধতা নিরসনে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া উচিত।

উল্লেখ্য, এ বছর চট্টগ্রামে ডেঙ্গুতে ৯৬ জন মারা গেছেন, এর মধ্যে পুরুষ রয়েছেন ৩০ জন। ৩১ জন নারী ও ৩৫ জন শিশু। মোট আক্রান্ত হয়েছেন ১৩ হাজার ২১৮ জন। তার মধ্যে পুরুষ ৬ হাজার ২১০ জন।