ঝালকাঠিতে এনসিপির কমিটি নিয়ে অসন্তোষ, পদযাত্রায় বাধা, গাড়ি আটকে বিক্ষোভ

ঝালকাঠি শহরে গতকাল বিকেলে এনসিপির পদযাত্রা ও পথসভা অনুষ্ঠিত হয়ছবি: প্রথম আলো

ঝালকাঠিতে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সমন্বয় কমিটি নিয়ে অসন্তোষের জেরে ‘দেশ গড়তে জুলাই পদযাত্রা’ও সমাবেশে বাধা এবং গাড়ি আটকে বিক্ষোভ করেছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা–কর্মীরা। গতকাল রোববার বিকেল ও সন্ধ্যায় ঝালকাঠি শহরে এ ঘটনা ঘটে।

পরে বিক্ষুব্ধ নেতা–কর্মীরা সংবাদ সম্মেলন করেন। এ সময় তাঁরা অভিযোগ করেন, জুলাই আন্দোলনের সময় যাঁরা রাজপথে ছিলেন না, এখন তাঁরাই এনসিপির নেতৃত্বে জায়গা করে নিচ্ছেন। আন্দোলনের সময় মাঠে সক্রিয় থাকা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাদের মতামত উপেক্ষা করে ঝালকাঠিতে এনসিপির কমিটি গঠন করা হয়েছে। এতে আওয়ামী লীগের নেতা–কর্মীরাও স্থান পেয়েছেন। এ বিষয়ে তাঁরা এনসিপির কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে কথা বলতে চেয়েছিলেন; কিন্তু সেই সুযোগ তাঁদের দেওয়া হয়নি।  

এ সম্পর্কে ঝালকাঠি জেলা এনসিপির প্রধান সমন্বয়ক মাইনুল ইসলাম (মান্না) বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের বাধার কারণে আমরা সুস্থ ও স্বাভাবিকভাবে প্রোগ্রাম করতে পারিনি। আমাদের দুই জায়গায় বাধা দেওয়া হয়েছে। প্রথমে গাড়িবহর শহরের শহীদ মিনারে যেতে বাধা দেন বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের শিক্ষার্থীরা। পরে শহরের কাপুড়িয়াপট্টি ইসলামী ব্যাংকের কাছ থেকে ফায়ার সার্ভিস মোড়ে আসার পথে ডাক্তার পট্টিতে দ্বিতীয়বার বাধা দেন তাঁরা। তাই কেন্দ্রীয় নেতারা সংক্ষিপ্ত সফর করে চলে যান। সমাবেশ শেষে ঝালকাঠি ত্যাগ করার সময় ফের প্রতিরোধের মুখে পড়েন তাঁরা।’

মাইনুল ইসলাম আরও বলেন, ‘সারা দেশে কোনো আওয়ামী লীগ নেই। তাহলে আমাদের কমিটিতে আওয়ামী লীগ থাকে কীভাবে?’

ঝালকাঠি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের যুগ্ম সদস্যসচিব ইয়াসিন ফেরদৌস (ইফতি) বলেন, ‘ঝালকাঠিতে এনসিপির প্রধান সমন্বয়ক আমাদের সঙ্গে কোনো সমন্বয় না করেই আওয়ামী লীগের লোকজনকে কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত করেছেন। কমিটি গঠনের সময় আমাদের সঙ্গে কোনো যোগাযোগ করেননি। আমরা দলের কর্মসূচিতে কোথাও কোনো বাধার সৃষ্টি করিনি। এনসিপি নেতাদের কাছে আমাদের চারটি প্রশ্ন ছিল। আমরা উত্তর জানার জন্য চেষ্টা করেছি মাত্র; কিন্তু তাঁরা আমাদের সঙ্গে কথা না বলেই দ্রুত সভাস্থল ত্যাগ করেন।’  

শিক্ষার্থীদের অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে এনসিপির ঝালকাঠি জেলা শাখার প্রধান সমন্বয়ক মাইনুল ইসলাম মান্না বলেন, ‘এই অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন। আমি কমিটি গঠনের আগে ও পরে আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রক্ষা করেছি।’

আরও পড়ুন

এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলামসহ কেন্দ্রীয় নেতারা গতকাল বিকেল চারটার দিকে ঝালকাঠিতে এসে প্রথমে নেছারাবাদ দরবার শরিফে যান। শহরের ফায়ার সার্ভিস মোড় হয়ে প্রধান সড়কে পদযাত্রার পরিকল্পনা থাকলে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা–কর্মীদের বাধার কারণে সেই পথ পরিবর্তন করা হয়। বিকেলে ঝালকাঠি শহরের কাপুড়িয়া পট্টিতে এনসিপির পথসভা অনুষ্ঠিত হয়। এ সময় এনসিপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক সামান্তা শারমিন, জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সদস্যসচিব তাসনিম জারা প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। সন্ধ্যা সাতটার দিকে এনসিপির নেতারা গাড়িবহর নিয়ে পটুয়াখালীর উদ্দেশে রওনা হন।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সংবাদ সম্মেলন
এদিকে ঝালকাঠিতে জাতীয় নাগরিক কমিটির (এনসিপি) নবঘোষিত জেলা ও উপজেলা কমিটিতে আওয়ামীপন্থী নেতা–কর্মীদের অন্তর্ভুক্ত করে রাজনৈতিক পুনর্বাসনের অভিযোগ তুলেছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন।

ঝালকাঠি প্রেসক্লাবে গতকাল সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে সংবাদ সম্মেলন করেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা। এ সময় উপস্থিত ছিলেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন জেলা কমিটির সদস্যসচিব রাইয়ান বিন কামাল, যুগ্ম আহ্বায়ক মাইশা মেহজাবীন, সহমুখপাত্র অনামিকা দত্ত প্রমুখ।

সম্মেলনে সংগঠনের নেতারা বলেন, জুলাই আন্দোলনের সময় যাঁরা রাজপথে ছিলেন না, এখন তাঁরাই এনসিপির নেতৃত্বে জায়গা করে নিচ্ছেন। অথচ আন্দোলনের সময় মাঠে সক্রিয় থাকা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাদের মতামত উপেক্ষা করে কমিটি গঠন করা হয়েছে। তাঁরা বলেন, এনসিপির কেন্দ্রীয় নেতারা এ পর্যন্ত জুলাই আন্দোলনে ঝালকাঠি জেলার নিহত ব্যক্তিদের পরিবারের সঙ্গে দেখা করতে যাননি। এমনকি ঝালকাঠিতে পদযাত্রা শেষে এনসিপির আহ্বায়কের সঙ্গে মাত্র পাঁচ মিনিট কথা বলার সুযোগ চেয়েও তা পাননি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা।

সংগঠনের নেতারা আরও বলেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন একটি অরাজনৈতিক ফ্যাসিবাদবিরোধী ছাত্রসংগঠন। এটি কোনো লেজুড়বৃত্তিক সংগঠন নয়। তাঁরা এনসিপির কেন্দ্রীয় কমিটির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলামের সঙ্গে কথা বলতে চেয়েছিলেন; কিন্তু ঝালকাঠি জেলা এনসিপি নেতারা সেখানে ঘোলাটে পরিস্থিতি সৃষ্টি করেন।