সুজানগরে দুই চেয়ারম্যান প্রার্থীর সমর্থকদের সংঘর্ষ, গুলি, আহত ৫

পাবনার সুজানগরে দুই চেয়ারম্যান প্রার্থীর সমর্থকদের সংঘর্ষে আহত এক ব্যক্তি। আজ রাতে পাবনা জেনারেল হাসপাতালে
ছবি: প্রথম আলো

পাবনার সুজানগর উপজেলায় দুই চেয়ারম্যান প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এ সময় ঘটনাস্থলে গিয়ে পুলিশও হামলার শিকার হয়েছে। এ সময় দুজন গুলিবিদ্ধসহ পাঁচজন আহত হয়েছেন।

আজ বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় উপজেলার ভায়না ইউনিয়নের কালীর মোড় এলাকায় উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবদুল ওহাব এবং সাধারণ সম্পাদক ও বর্তমান উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান শাহিনুজ্জামানের কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে ৩ জনকে আটক করেছে।

আহত ব্যক্তিদের মধ্যে তিনজনের নাম জানা গেছে। তাঁরা হলেন ভায়না ইউনিয়নের ভায়না গ্রামের বাদশা প্রামাণিক (৪০, মতিন শেখ (৫০) ও আবদুল আওয়াল (৩৫)।

ভায়না ইউপির চেয়ারম্যান আমার সমর্থক। সন্ধ্যায় প্রতিপক্ষ প্রার্থী শাহিনুজ্জামানের সমর্থকেরা চেয়ারম্যান আমিন উদ্দিনের বাড়িতে হামলা চালান। বিষয়টি থানায় জানানো হলে পুলিশ আসে। এ সময় শাহিনুজ্জামানের লোকজন পুলিশের ওপরও হামলা করেন। এতে আমার বেশ কয়েকজন নেতা-কর্মী আহত হন। আমি এর সুষ্ঠু বিচার দাবি করছি।
আবদুল ওহাব, চেয়ারম্যান প্রার্থী ও সুজানগর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি

স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সুজানগর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে আবদুল ওহাব ও শাহিনুজ্জামান চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। স্থানীয় রাজনীতিতে তাঁরা দীর্ঘদিনের প্রতিদ্বন্দ্বী। উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে প্রার্থিতা ঘোষণার পর থেকে দুই পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা চলছে। গত ২৩ এপ্রিল প্রতীক বরাদ্দের পরই উপজেলা সদর বাজারে দুই পক্ষের মধ্যে পাল্টাপাল্টি ধাওয়া ও মারধরের ঘটনা ঘটেছে। এর জের ধরে আজ দ্বিতীয় দফা সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।

প্রত্যক্ষদর্শীদের কয়েকজন জানান, সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে উপজেলার ভায়না ইউনিয়নের কালীর মোড়ে চেয়ারম্যান প্রার্থী শাহিনুজ্জামানের কয়েকজন সমর্থক দাঁড়িয়ে ছিলেন। এ সময় অপর চেয়ারম্যান প্রার্থী আবদুল ওহাবের সমর্থকেরা পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় দুই পক্ষের মধ্যে কথা-কাটাকাটি হয়। একপর্যায়ে দুই পক্ষ লাঠিসোঁটা নিয়ে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। এ সময় ভায়না ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যানের বাড়িতেও হামলার ঘটনা ঘটে। তখন কয়েকটি গুলির শব্দ শোনা যায়। খবর পেয়ে পুলিশের একটি দল সেখানে গেলে সংঘর্ষে লিপ্ত ব্যক্তিরা পুলিশের ওপর হামলা চালান। এ সময় দুজন গুলিবিদ্ধসহ মোট পাঁচজন আহত হন।

ভোট নিয়ে কথা-কাটাকাটির জের ধরে প্রতিপক্ষ প্রার্থীর লোকজন আমিন চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে আমার এক কর্মীকে মারধর করেন। এ নিয়ে উত্তেজনা তৈরি হয়। পরে বিপক্ষ প্রার্থীর লোকজন আমার সমর্থকদের ওপর গুলি চালান। এতে কয়েকজন গুলিবিদ্ধ হন। আমি এ ঘটনার বিচার চাই।
শাহিনুজ্জামান, বর্তমান উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও সুজানগর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক

সুজানগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জালাল উদ্দিন বলেন, ভায়না ইউপির চেয়ারম্যান আমিন উদ্দিনের বাড়িতে হামলা হয়েছে। এমন সংবাদে সেখানে পুলিশ পাঠানো হয়। পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ দেখতে পায়। এ সময় দুই পক্ষকে থামাতে গেলে পুলিশের ওপর হামলা চালানো হয়। পরে পুলিশ সদস্যরা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে শটগানের গুলি ছোড়েন। এতে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে।

ওসি জানান, সংঘর্ষে দুজন গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। তাঁদের তাঁদের পাবনা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তাৎক্ষণিকভাবে তাঁদের পরিচয় নিশ্চিত করা জানা যায়নি।

চেয়ারম্যান প্রার্থী আবদুল ওহাব প্রথম আলোকে বলেন, ভায়না ইউপির চেয়ারম্যান তাঁর সমর্থক। সন্ধ্যায় তাঁর প্রতিপক্ষ প্রার্থী শাহিনুজ্জামানের সমর্থকেরা চেয়ারম্যান আমিন উদ্দিনের বাড়িতে হামলা চালান। বিষয়টি থানায় জানানো হলে পুলিশ আসে। এ সময় শাহিনুজ্জামানের লোকজন পুলিশের ওপরও হামলা করেন। এতে তাঁর (আবদুল ওহাবের) বেশ কয়েকজন নেতা-কর্মী আহত হন। আবদুল ওহাব এর সুষ্ঠু বিচার দাবি করেন।

পাল্টা অভিযোগ তুলে অপর প্রার্থী ও বর্তমান উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান শাহিনুজ্জামান বলেন, ‘ভোট নিয়ে কথা-কাটাকাটির জের ধরে প্রতিপক্ষ প্রার্থীর লোকজন আমিন চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে আমার এক কর্মীকে মারধর করেন। এ নিয়ে উত্তেজনা তৈরি হয়। পরে বিপক্ষ প্রার্থীর লোকজন আমার সমর্থকদের ওপর গুলি চালান। এতে কয়েকজন গুলিবিদ্ধ হন। আমি এ ঘটনার বিচার চাই।’