টঙ্গীতে ইজতেমা মাঠের ফটকে লাঠি হাতে সাদপন্থীদের পাহারা

আজ মঙ্গলবার সকাল থেকেই ইজতেমা মাঠের প্রতিটি ফটকে পাহারা বসিয়েছেন সাদপন্থীরা। দুপুরে ইজতেমা মাঠের টঙ্গী বাটাগেট ফটকে
ছবি: প্রথম আলো

বিশ্ব ইজতেমা শেষে পূর্বসিদ্ধান্ত অনুযায়ী, আজ বুধবার বিকেল পাঁচটার মধ্যে জেলা প্রশাসনের কাছে টঙ্গীর ইজতেমা মাঠ হস্তান্তরের কথা মাওলানা সাদ কান্ধলভির অনুসারীদের। তবে এর মধ্যেই মাওলানা জুবায়েরের অনুসারীরা মাঠে ঢুকে মাঠের নিয়ন্ত্রণ নিতে পারেন, এমন আশঙ্কায় ইজতেমা মাঠের প্রতিটি ফটকে পাহারা বসিয়েছেন সাদপন্থীরা। আজ সকাল থেকেই এ দৃশ্য দেখা গেছে।

গত রোববার শেষ হয়েছে বিশ্ব ইজতেমার দ্বিতীয় পর্ব। তাবলিগ জামাতের দুই পক্ষের বিরোধের কারণে এবারও ইজতেমা হয়েছে দুই পর্বে। মাওলানা জুবায়েরের অনুসারীরা ইজতেমা পালন করেন ১৩ থেকে ১৫ জানুয়ারি। এরপর ১৭ জানুয়ারি প্রশাসনের কাছ থেকে মাঠ বুঝে নিয়ে দ্বিতীয় পর্বে ২০ থেকে ২৩ জানুয়ারি ইজতেমা পালন করেন মাওলানা সাদের অনুসারীরা। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, আজ পুনরায় জেলা প্রশাসকের কাছে তাঁদের মাঠ হস্তান্তরের কথা।

সাদ অনুসারীদের ইজতেমা সমন্বয়কের দায়িত্বে থাকা মো. সায়েম প্রথম আলোকে বলেন, ‘আজ বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত মাঠের দায়িত্ব আমাদের। সে জন্য আমাদের সাথিরাও অনেকে মাঠে অবস্থান করছেন। কিন্তু এর মধ্যেই আজ সকালে জুবায়ের অনুসারীদের কিছু লোক মাঠে ঢুকে মাঠ নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করেন। পরে আমাদের লোকজন কোনো প্রকার বিশৃঙ্খলায় না গিয়ে প্রশাসনের সহায়তায় তাঁদের বুঝিয়ে সেখান থেকে ফেরত পাঠিয়েছেন। কিন্তু তাঁরা আবার আসতে পারেন বা বিশৃঙ্খলা করতে পারেন, এমন শঙ্কায় আমরা প্রতি ফটকে পাহারা বসিয়েছি।’

মাওলানা সাদের অনুসারীরা আগামী বছর প্রথম পর্বে ইজতেমা পালন করবেন জানিয়ে সায়েম বলেন, ‘তিন বছর ধরে তাঁরা (জুবায়েরপন্থী) আগে ইজতেমা করছেন। মাঠ নিজেদের দখলে রাখছেন। কিন্তু সামনের বছর আমরা আগে ইজতেমা করব। এ জন্য এবার আমরা মাঠ গুছাব (সামিয়ানা খোলা, গোডাউন নিয়ন্ত্রণে রাখা)।’

কোনো কোনো ফটকে তালা ঝুলিয়ে দেওয়া হয়েছে
ছবি: প্রথম আলো

আজ দুপুরে সরেজমিনে দেখা যায়, ইজতেমা মাঠের প্রতিটি ফটকেই অবস্থান করছেন সাদ অনুসারীদের মুসল্লিরা। প্রতিটি ফটকে ১০ থেকে ১২ জন করে মুসল্লি বাঁশ ও লাঠি নিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন। কোনো কোনো ফটকে তালা ঝুলিয়ে দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে কেউ মাঠে ঢুকতে গেলে তাঁদের জিজ্ঞাসাবাদের মুখে পড়তে হচ্ছে। শুধু মুসল্লিদের পরিচিত কেউ বা প্রশাসনের লোকজন আসলে ফটক খুলে দেওয়া হচ্ছে।

টঙ্গী-কামারপাড়া সড়কের অলিম্পিয়া বিদ্যালয়ের সামনে ইজতেমা মাঠের ১ নম্বর ফটক। অন্যান্য ফটকের মতো এখানেও লাঠি হাতে অবস্থান করছেন লোকজন। সেখানে অবস্থান নেওয়া ঢাকার জিঞ্জিরা এলাকার বাসিন্দা মো. দিদার বলেন, ‘আজ বিকেলে প্রশাসনের কাছে মাঠ হস্তান্তরের কথা থাকলেও তাঁরা (জুবায়ের) বিভিন্নভাবে মাঠের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার চেষ্টা করছেন, লোকজন জড়ো করছেন। তাই আমাদের শীর্ষ মুরব্বিদের কথামতো আমরা মাঠে ফটকে পাহারা দিচ্ছি।’

মাঠ হস্তান্তরকে কেন্দ্র করে যেকোনো ধরনের অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে সকাল থেকেই মাঠে অবস্থান করছেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। তাঁরা ছড়িয়ে ছিটিয়ে অবস্থান করছেন বিভিন্ন ফটকে।

গাজীপুর মহানগর পুলিশের সহকারী কমিশনার মো. মেহেদী হাসান প্রথম আলোকে বলেন, যেহেতু মাঠ নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যেই বিরোধ চলমান, তাই বাড়তি সতর্কতা হিসেবে মাঠে অবস্থান করা হচ্ছে। শান্তিপূর্ণভাবে হস্তান্তর কার্যক্রম সম্পন্ন হবে বলে জানান তিনি।