নারায়ণ চন্দ্রের সম্পদ লাখ ছাড়িয়ে কোটির ঘরে, আয় বেড়েছে ১০ গুণ

নারায়ণ চন্দ্র চন্দ

২০০৮ সালে সংসদ নির্বাচনের সময় সাবেক মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী নারায়ণ চন্দ্র চন্দের বার্ষিক আয় ছিল ২ লাখ ৫ হাজার টাকা। টানা তিনবারের এই সংসদ সদস্যের বার্ষিক আয় প্রায় ১০ গুণ বেড়ে ১৯ লাখ ৭০ হাজার টাকা হয়েছে। একই সময়ে তাঁর স্থাবর-অস্থাবর সম্পদের পরিমাণ লাখ ছাড়িয়ে কোটিতে ঠেকেছে। ১০ বছর আগে তাঁর কোনো ঋণ না থাকলেও এখন দেনার পরিমাণ ২ কোটি ছাড়িয়েছে। ১৫ বছরে স্ত্রী ঊষা রানী চন্দের অস্থাবর সম্পদ বেড়েছে ১০ গুণের বেশি।  

নারায়ণ চন্দ্র চন্দ খুলনা-৫ (ডুমুরিয়া-ফুলতলা) আসনে টানা তিনবারের সংসদ সদস্য। তিনি দশম জাতীয় সংসদে প্রথমে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পান। ২০১৮ সালে একই মন্ত্রণালয়ের পূর্ণ মন্ত্রী হন। এবারও আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মনোনয়নপত্রের সঙ্গে জমা দেওয়া হলফনামা এবং নবম, দশম ও একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জমা দেওয়া হলফনামা বিশ্লেষণ করে এ তথ্য পাওয়া গেছে।  

বার্ষিক আয় বেড়েছে ১০ গুণ

স্নাতকোত্তর পাস নারায়ণ চন্দ্র হলফনামায় পেশার ঘরে ‘কৃষি ও ব্যবসা’ উল্লেখ করেছেন। তাঁর নামে একটি মামলা থাকলেও ২০১২ সালে উচ্চ আদালতের রায়ে মামলাটি বাতিল হয়ে যায়। হলফনামা ঘেঁটে দেখা গেছে, ২০০৮ সালে কৃষি খাত থেকে ১০ হাজার এবং ব্যবসা থেকে ১ লাখ ৯৫ হাজার টাকা বার্ষিক আয় দেখিয়েছিলেন নারায়ণ চন্দ্র। ১৫ বছর পরে এখন তাঁর বার্ষিক আয় দাঁড়িয়েছে ১৯ লাখ ৭০ হাজার টাকা। অর্থাৎ ১৫ বছরে প্রায় ১০ গুণ আয় বেড়েছে তাঁর। এর মধ্যে কৃষি খাত থেকে ৩ লাখ ৩০ হাজার, ইটভাটার ব্যবসা থেকে ৯ লাখ ৮০ হাজার এবং সংসদ সদস্যের বেতন-ভাতা বাবদ ৬ লাখ ৬০ হাজার টাকা আয় উল্লেখ করেছেন তিনি। তবে ২০১৮ সালের তুলনায় এবার তাঁর আয় কমেছে। পাঁচ বছর আগে তাঁর বার্ষিক আয় ছিল ২১ লাখ ২৫ হাজার ৮১ টাকা।

নবম ও দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময় তিনি নির্ভরশীলদের আয় হলফনামায় উল্লেখ করেছিলেন। ২০১৮ ও ২০২৩ সালে এসে তিনি নির্ভরশীলদের আয়ের কোনো তথ্য উল্লেখ করেননি। ২০০৮ সালে নির্ভরশীলদের বার্ষিক আয় ছিল ১ লাখ ১২ হাজার ৮৪০ টাকা। পাঁচ বছর পর তা বেড়ে দাঁড়ায় ২ লাখ ৫০ হাজার ৯৬৬ টাকা।

সম্পদ লাখ ছাড়িয়ে কোটির ঘরে

২০০৮ সালে নারায়ণ চন্দ্রের ২০ ভরি সোনা, পৈতৃক সূত্রে পাওয়া দুটি টিনশেডের ঘর ও আড়াই একর জমি বাদ দিয়ে মোট স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদের পরিমাণ ছিল ১৪ লাখ ৬৮ হাজার ৮২৫ টাকার। ১৫ বছরের ব্যবধানে তাঁর সম্পদের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১ কোটি ৬২৬ টাকায়। যদিও এবার তিনি স্বর্ণালংকার, আসবাব, তিনটি গাড়ির দাম উল্লেখ করেননি। ২০১৩ সালের হলফনামায় তিনি ৬৫ শতাংশ অকৃষিজমির দাম দেখিয়েছিলেন ৪০ লাখ ৮ হাজার টাকা। তবে গত দুটি নির্বাচনে তিনি একই জমির দাম ৪ লাখ ৮ হাজার টাকা দেখিয়েছেন। ১৫ বছর আগে তিনি পৈতৃক সূত্রে পাওয়া টিনশেডের বাড়িতে থাকলেও এখন ৪২ লাখ টাকা দামের ভবনে থাকেন।

ব্যাংকে জমা বেড়েছে

নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময় নারায়ণ চন্দ্রের নামে ব্যাংকে জমা ছিল মাত্র ১৫ হাজার টাকা। হাতে নগদ ছিল সাড়ে ৫ লাখ। আর স্থায়ী আমানত হিসেবে বিনিয়োগ ছিল ৬৫ হাজার টাকার। ২০১৩ সালেও তিনি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে জমা করা অর্থের পরিমাণ উল্লেখ করেননি। কিন্তু ২০১৮ সালে তাঁর ব্যাংকে জমার পরিমাণ দাঁড়ায় ৫৭ লাখ ৮৮ হাজার টাকা। এবার তিনি ৫০ লাখ টাকা জমা থাকার তথ্য দিয়েছেন। তবে গত দুবার তিনি স্থায়ী আমানতে বিনিয়োগের তথ্য দেননি।

স্ত্রীর অস্থাবর সম্পদ বেড়েছে

১৫ বছরে সংসদ সদস্য নারায়ণ চন্দের স্ত্রী ঊষা রানী চন্দের অস্থাবর সম্পদ ১০ গুণের বেশি বেড়েছে। ২০০৮ সালে স্ত্রীর হাতে নগদ ৫ হাজার, ২ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র ও ১ লাখ ৪২ হাজার টাকার সঞ্চয় স্কিম ছিল। এর বাইরে স্বর্ণালংকার, গাড়ি, আসবাবের কোনো তথ্য উল্লেখ করা হয়নি। বর্তমানে তাঁর অস্থাবর সম্পদ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩৫ লাখ ৫৯ হাজার ৭৬৩ টাকায়। এর মধ্যে নগদ ৭৫ হাজার, ব্যাংকে জমা ৭ লাখ ৮৪ হাজার ৭৬৩ ও ২৭ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র আছে। এ ছাড়া বিয়ের উপহার হিসেবে পাওয়া ১৫ ভরি সোনা আছে, যার মূল্য উল্লেখ নেই। স্থাবর সম্পদের মধ্যে ১ লাখ সাড়ে ৬২ হাজার টাকা দামের ২ দশমিক ৭০ একর কৃষিজমি আছে, যা ১৫ বছর ধরে স্থিতিশীল আছে।  

কোটির ওপর দেনা

২০০৮ সালে নারায়ণ চন্দ্রের কোনো ঋণ ছিল না। ২০১৩ সালে এসে ১৫ লাখ টাকা ঋণের তথ্য উল্লেখ করলেও পরিশোধিত উল্লেখ করা হয়। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময় তিনি ১ কোটি ১৮ লাখ ৯৮ হাজার ৯৫৮ টাকার ঋণ দেখান। এর মধ্যে ব্যাংকঋণ প্রায় ৮৪ লাখ টাকা। এবার তিনি ২ কোটি ১৪ লাখ ৫৭ হাজার ৪৪৮ টাকার দেনা দেখিয়েছেন। এর মধ্যে ব্যাংকঋণ ২ কোটি এবং বাকি ১৫ লাখ ব্যক্তিগত ধার। শুধু গত ৫ বছরে তাঁর ১ কোটি টাকা দেনা বেড়েছে।

নারায়ণ চন্দ্র চন্দ প্রথম আলোকে বলেন, ইউনিব্লক তৈরির একটি কারখানা করতে ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়েছি। সদ্য ওই কারখানা চালু হয়েছে। ওই ঋণের টাকা এখনো ব্যাংক হিসাবে জমা আছে। এ কারণে ব্যাংকে স্থিতির পরিমাণ বেড়েছে। তাঁর কোনো অবৈধ আয় নেই বলে তিনি দাবি করেন।