অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেওয়ার সময় অসুস্থ হয়ে পড়লেন জাকের পার্টির চেয়ারম্যান

প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে নির্মিত মঞ্চে শুভেচ্ছা বক্তব্য দেওয়ার সময় অসুস্থ হয়ে পড়েন জাকের পার্টির চেয়ারম্যান মোস্তফা আমীর ফয়সাল। পরে তিনি অজ্ঞান হয়ে পড়েন। আজ বৃহস্পতিবার বিকেলে ফরিদপুরের সদরপুরে অবস্থিত বাইশরশি স্পিনিং মিল–সংলগ্ন মাঠে
ছবি: সংগৃহীত

ফরিদপুরে জাকের পার্টির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর মঞ্চে শুভেচ্ছা বক্তব্য দেওয়ার অসুস্থ হয়ে পড়েন জাকের পার্টির চেয়ারম্যান মোস্তফা আমীর ফয়সাল। আজ বৃহস্পতিবার বেলা একটার দিকে ফরিদপুরের সদরপুরে অবস্থিত বাইশরশি স্পিনিং মিল–সংলগ্ন মাঠে এ ঘটনা ঘটে। এ সময় ওই সমাবেশে কয়েক হাজার মানুষ উপস্থিত ছিলেন। তবে নেতা অসুস্থ হওয়ার পর দলের ৩৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী এবং পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) পালন উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভাটি স্থগিত হয়ে যায়।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, দুপুর ১২টার দিকে মোস্তফা আমীর ফয়সাল একটি গাড়িতে করে স্পিনিং মিল থেকে বের হয়ে পাশের মাঠের মঞ্চে গিয়ে বসেন। এরপর জাতীয় সংগীত ও হামদ–নাত পরিবেশনের মাধ্যমে সভার কার্যক্রম শুরু হয়। দুপুর ১২টা ১৮ মিনিটের দিকে আমীর ফয়সাল বক্তব্য দেওয়া শুরু করেন। ১২টা ৫০–এর দিকে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন।

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানান, জাকের পার্টির ৩৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে সদরপুরের বাইশরশি স্পিনিং মিলের মাঠে কর্মী সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। এতে প্রধান ও একমাত্র বক্তা হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জাকের পার্টির চেয়ারম্যান মোস্তফা আমীর ফয়সাল।

তিন প্রত্যক্ষদর্শী বলেন, ওই সময় প্রচণ্ড গরম ছিল। মঞ্চে শামিয়ানা থাকলেও কোনো ফ্যানের ব্যবস্থা ছিল না। ওই সময় আবেগাপ্লুত হয়ে বক্তব্য দিচ্ছিলেন মোস্তফা আমীর ফয়সাল। তিনি তাঁর বক্তব্যে বলছন, ‘আমি যেখানে বক্তব্য দিচ্ছি, তার থেকে আধা কিলোমিটার দূরে আটরশিতে আমার বাবা আটরশির পীর শাহ সুফি খাজাবাবা ফরিদপুরি শুয়ে আছেন। অথচ সেখানে আমাকে যেতে দেওয়া হচ্ছে না। পুলিশ ঘিরে রেখেছে। আমি এত কাছে এসে বাবার কবরটাও জিয়ারত করতে পারছি না।’

এই বক্তব্য দেওয়ার পর মোস্তফা আমীর ফয়সাল দাঁড়িয়ে থাকা অবস্থায় হঠাৎ কথা বলা বন্ধ করে দেন। ওই সময় তাঁর আশপাশে থাকা জাকের পার্টির নেতারা তাঁকে ধরে পাশের সোফায় বসিয়ে দেন। এ সময় আশপাশের নেতা–কর্মীরা তাঁকে বাতাস করতে থাকেন। তবে দু–এক মিনিটের মধ্যে তাঁর অবস্থার আরও অবনতি হলে তিনি সংজ্ঞা হারিয়ে ফেলেন। এরপর জাকের পার্টির নেতা–কর্মীরা তাঁকে মঞ্চ থেকে নামিয়ে গাড়িতে তুলে স্পিনিং মিলের বিশ্রামকক্ষে নিয়ে যান। সেখানে তাঁকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়।

এ বিষয়ে জাকের পার্টির চেয়ারম্যানের প্রেস সচিব শামীম হায়দার জানান, বৃহস্পতিবার বিকেলেই মোস্তফা আমীর ফয়সালকে ঢাকা নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে একটি বেসরকারি হাসপাতালে তাঁকে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। তাঁর শারীরিক অবস্থা উন্নতির দিকে।

১৯৮৯ সালে জাকের পার্টি যাত্রা শুরু করে। ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে আটরশির পীর শাহ সুফি খাজাবাবা ফরিদপুরীর দুই ছেলে মাহফুজুল হক ও মোস্তফা আমীর ফয়সালের মধ্যে বিরোধ সৃষ্টি হয়। পীরের বড় ছেলে মাহফুজুল হক পীরের মাজারসহ আটরশি দরবার শরিফ নিজ আয়ত্তে রাখেন। ছোট ভাই মোস্তফা আমীর ফয়সাল এরপর থেকে ওরসসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠানে ওই দরবারে প্রবেশের আর সুযোগ পাননি।
গত বুধ ও আজ বৃহস্পতিবার পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) উপলক্ষে আটরশি দরবার শরিফে ধর্মীয় অনুষ্ঠানে যোগ দেন পীরজাদা মাহফুজুল হক।

সদরপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মামুন আল রশিদ জানান, দ্বন্দ্বের কারণে দুই ভাই আধা কিলোমিটার দূরে দুটি আনুষ্ঠান আয়োজন করায় পুলিশ ছিল তৎপর। তবে দুই ভাইয়ের সমর্থকেরা কথা রেখেছেন। কেউ একে অন্যের সমাবেশে যেতে চাননি। তিনি বলেন, জাকের পার্টির চেয়ারম্যান অসুস্থ হয়ে পড়ায় তাঁকে ঢাকা নিয়ে যাওয়া হয়েছে। আটরশিতে অনুষ্ঠানও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে সম্পন্ন হয়েছে।