ভালো ফল করেও শিক্ষক ও শ্রেণিকক্ষ-সংকট যাচ্ছে না কেশবপুর পাইলট বিদ্যালয়ে

পাঁচ বছর আগে সরকারীকরণ হলেও প্রতিষ্ঠানটি সরকারি প্রতিষ্ঠান হিসেবে তেমন কোনো সুবিধা পাচ্ছে না।

  • এসএসসিতে এবার ৫৩ জন জিপিএ-৫ ও শতভাগ পাসের সাফল্য অর্জন করেছে এ প্রতিষ্ঠান।

  • পুরোনো ভবনটি ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় ওই শ্রেণিকক্ষগুলোতে ক্লাস নেওয়া হয় না।

যশোর জেলার মানচিত্র

যশোরের কেশবপুরের একটি নামকরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সরকারি পাইলট উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয়। এসএসসি পরীক্ষায় শতভাগ পাসের সাফল্য আছে এ প্রতিষ্ঠানের। সেই সঙ্গে উপজেলায় সবচেয়ে বেশিসংখ্যক শিক্ষার্থী জিপিএ-৫ পেয়ে আসছে এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে। তবে প্রতিষ্ঠানটির মাধ্যমিক স্তরে শিক্ষক ও শ্রেণিকক্ষের সংকটে ভুগছে। পাঁচ বছর আগে সরকারীকরণ হলেও প্রতিষ্ঠানটি সরকারি প্রতিষ্ঠান হিসেবে তেমন কোনো সুবিধা পাচ্ছে না। এর অবকাঠামোসহ অন্যান্য সুবিধা বাড়েনি। মাধ্যমিক পর্যায়ে হয়নি নতুন শিক্ষক নিয়োগও। ফলে সার্বিক শিক্ষার মানোন্নয়ন নিয়ে প্রতিবন্ধকতার মুখে পড়ছে প্রতিষ্ঠানটি।

কেশবপুর সরকারি পাইলট উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয় সূত্র জানায়, ১৯৪২ সালে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটি প্রতিষ্ঠিত হয়। এখন এখানে ৯৬০ জন শিক্ষার্থী আছে। এর মধ্যে মাধ্যমিক স্তরে রয়েছে ৫০০ শিক্ষার্থী। প্রতিবছর এখান থেকে শিক্ষার্থীরা সেরা ফল করে। এ বছর এসএসসিতে ৫৩ জন জিপিএ-৫ পেয়েছে। শতভাগ পাসের সাফল্য অর্জন করেছে এ প্রতিষ্ঠান। ২০১৮ সালের অক্টোবর মাসে প্রতিষ্ঠানটি সরকারীকরণের চিঠি আসে। এ বছরের জুলাই মাসে প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষকেরা সরকারি বেতন পান। এখন প্রতিষ্ঠানটি পূর্ণাঙ্গ সরকারি হলেও সরকারি প্রতিষ্ঠান হিসেবে তেমন কোনো সুবিধা পাচ্ছে না।

স্কুল সূত্রে জানা গেছে, শিক্ষার্থী অনুপাতে মাধ্যমিক স্তরে ২৫ জন শিক্ষক থাকা দরকার। সেখানে আছেন ১৪ জন। ১১ জন শিক্ষকের সংকট রয়েছে। এই পরিস্থিতিতে কলেজ শাখার শিক্ষকদের দিয়ে মাধ্যমিকের ক্লাস নেওয়া হচ্ছে। এতে কলেজ শাখার ২১ জন শিক্ষকের ওপর ক্লাস নেওয়ার বাড়তি চাপ তৈরি হচ্ছে। কোনো কোনো শিক্ষকের প্রতি সপ্তাহে অতিরিক্ত ৬টি ক্লাস নিতে হয়।

১৯৪২ সালে মাধ্যমিক স্কুল প্রতিষ্ঠার সময় একটি ভবন তৈরি হয়। পরে ভবনটি দোতলা করা হয়। সেই ভবন ছাড়াও আরও দুটি তিনতলা ভবন থাকলেও পুরোনো ভবনের ছাদের পলেস্তারা ভেঙে ভেঙে পড়ছে। ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় সেই শ্রেণিকক্ষগুলোতে ক্লাস নেওয়া হয় না। প্রতিষ্ঠানটিতে কলেজ শাখা ছাড়াও রয়েছে কারিগরি বিভাগ। এক হাজার শিক্ষার্থীর একসঙ্গে ক্লাস চলার সময় শ্রেণিকক্ষের সংকট তৈরি হয় বলে শিক্ষকেরা জানান।

শিক্ষকসংকটের বিষয়ে নবম ও দশম শ্রেণির কয়েকজন শিক্ষার্থী বলে, শিক্ষকসংকটের কারণে তাদের সমস্যা হয় সত্য। তবে এর কিছু সুবিধাও হয়েছে। কলেজ শাখার শিক্ষকদের ক্লাস তারা পাচ্ছে। তাদের ভাষায়,  কলেজ শাখার শিক্ষকদের ক্লাস তাদের কঠিন বিষয়গুলো সহজে বুঝতে সাহায্য করছে।

কলেজ শাখার কয়েকজন শিক্ষক বলেন, তাঁদের কেবল উচ্চমাধ্যমিক শ্রেণির ক্লাস নেওয়ার কথা থাকলেও প্রতিষ্ঠানের সুনামের জন্য তাঁরা প্রতিদিন মাধ্যমিকেও সমানতালে ক্লাস নিয়ে থাকেন। এতে তাঁদের নিজ বিষয়ের ওপর অতিরিক্ত নজর দেওয়া সম্ভব হয়ে ওঠে না। তা ছাড়া কলেজের ক্লাস নেওয়ার জন্য যেমন তাঁদের প্রস্তুতি নিতে হয়, আবার মাধ্যমিকের জন্যও একইভাবে প্রস্তুতি নিয়ে ক্লাসে যেতে হয়। এতে তাঁদের ওপর বাড়তি ক্লাসের বোঝা তৈরি হয়।

অধ্যক্ষ আসাদুজ্জামান বলেন, ২০১৮ সালে সরকারীকরণের পর থেকে আর কোনো শিক্ষক নিয়োগ হয়নি। ফলে শিক্ষকসংকট রয়েছে। তবে কলেজ শাখার শিক্ষকদের দিয়ে ক্লাস নিয়ে শিক্ষকের ঘাটতি পূরণ করা হচ্ছে। তিনি বলেন, শিক্ষকসংকটের বিষয়ে শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের দপ্তরে চিঠি দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি শ্রেণিকক্ষ-সংকট রয়েছে। পুরোনো ভবনটি পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হবে। ছয়তলা একটি ভবন হলে ভালো হয়।

এ ব্যাপারে কেশবপুরের উপজেলা মাধ্যমিক কর্মকর্তা জিল্লুর রশিদ বলেন, সরকারি স্কুলের শিক্ষকসংকটের বিষয়টি বিভাগীয় কার্যালয় থেকে দেখা হয়। তারপরও পাইলট উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষকসংকটের বিষয়ে কর্তৃপক্ষকে তাঁরা চিঠি দিয়ে জানিয়েছেন।