ফরিদপুর জেলার মানচিত্র

ফরিদপুরের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় এক বীর মুক্তিযোদ্ধার মৃত্যুকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষের ঘটনায় কোতোয়ালি থানায় দুটি মামলা হয়েছে।

এর মধ্যে একটি মামলার বাদী মৃত বীর মুক্তিযোদ্ধার ছেলে রহমত আলী খান (৪৪)। অপর মামলার বাদী ওই হাসপাতালের প্রধান সহকারী মো. মোবাশ্বার হাসান (৫০)। মেডিকেল কলেজের পক্ষের মামলাটি গতকাল মঙ্গলবার এবং মৃত বীর মুক্তিযোদ্ধার ছেলের করা মামলাটি আজ বুধবার তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। আজ ফরিদপুর কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এম এ জলিল এ তথ্য জানিয়েছেন।

মেডিকেল কলেজের পক্ষে করা মামলায় মৃত বীর মুক্তিযোদ্ধার তিন মেয়ে, চার নাতিসহ আটজনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। এ মামলায় অজ্ঞাতনামা আরও সাত-আটজনকে আসামি করা হয়েছে। অপর দিকে বীর মুক্তিযোদ্ধার ছেলের করা মামলায় আসামি হিসেবে কারও নাম উল্লেখ না করলেও কর্তব্যরত চিকিৎসকসহ অজ্ঞাতনামা আরও ১০-১৫ জনকে আসামি করা হয়েছে।

মেডিকেল কলেজের করা মামলায় অনধিকার প্রবেশ করে সরকারি কাজে বাধা, আক্রমণ, সরকারি কর্মচারী ও মেডিকেল কলেজের ছাত্রদের মারধর করে গুরুতর জখম ও ভাঙচুরের অভিযোগ করা হয়েছে। অন্যদিকে বীর মুক্তিযোদ্ধার ছেলের করা মামলায় হত্যার উদ্দেশ্যে মারপিট করে সাধারণ ও গুরুতর জখম করার অভিযোগ করা হয়েছে।

ফরিদপুর জেনারেল হাসপাতালের পুরুষ সার্জারি ওয়ার্ডে পুলিশি পাহারায় চিকিৎসাধীন রয়েছেন বীর মুক্তিযোদ্ধার তিন নাতি আলিফ খান (১৪), তৌহিদ বিশ্বাস (২২) ও আলামীন বিশ্বাস (৩২)।

এ বিষয়ে ফরিদপুর কোতোয়ালি থানার ওসি এম এ জলিল বলেন, মেডিকেল কলেজের মামলাটি তালিকাভুক্ত হওয়ার পর ফরিদপুর জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বীর মুক্তিযোদ্ধার তিন নাতিকে এ মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে।

জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার আবুল ফয়েজ শাহনেওয়াজ প্রথম আলোকে বলেন, ‘যেহেতু জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে একটি তদন্ত কমিটি করা হয়েছে, আমরা সেই কমিটির প্রতিবেদনের অপেক্ষা করছি।’ তিনি আরও বলেন, ‘মৃত বীর মুক্তিযোদ্ধার তিন নাতিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, অথচ এ ব্যাপারে জেলা প্রশাসক মো. কামরুল আহসান তালুকদার আমাকে কথা দিয়েছেন, তাদের ছেড়ে দেওয়া হবে।’
এ ঘটনার তদন্তে গতকাল ফরিদপুরের জেলা প্রশাসক মো. কামরুল আহসান তালুকদার তিন সদস্যবিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেন। এর আহ্বায়ক করা হয়েছে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট অমিত দেবনাথকে। বাকি দুজন হলেন পুলিশ সুপার ও মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষের দুই প্রতিনিধি।

তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট অমিত দেবনাথ আজ দুপুরে প্রথম আলোকে বলেন, মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ সহযোগী অধ্যাপক খান মোহাম্মদ আরিফকে এ কমিটির সদস্য হিসেবে রাখা হয়েছে। তবে পুলিশ সুপারের প্রতিনিধির নাম এখন পর্যন্ত পাওয়া যায়নি। এর ফলে কমিটি পূর্ণাঙ্গ না হওয়ায় কাজ শুরু করা যায়নি। কমিটি পূর্ণাঙ্গ হলে আগামীকাল বৃহস্পতিবার থেকে কাজ শুরু করা সম্ভব হবে। তিনি বলেন, বিষয়টি খুবই স্পর্শকাতর। তিন কর্মদিবসে প্রতিবেদন সম্পন্ন করা সম্ভব না হলে সময় বাড়ানোর জন্য জেলা প্রশাসকের কাছে আবেদন করা হবে।

প্রসঙ্গত গত সোমবার দিবাগত রাত দেড়টার দিকে ফরিদপুরের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান বীর মুক্তিযোদ্ধা নয়ন খান (৯৫)। তাঁকে সময়মতো অক্সিজেন না দেওয়ায় মৃত্যু হয়েছে বলে অভিযোগ তুলে তাঁর স্বজনেরা ক্ষুব্ধ হন। বিষয়টি নিয়ে কথা–কাটাকাটির জেরে হাসপাতালের কর্মচারী, ইন্টার্ন চিকিৎসক ও মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে বীর মুক্তিযোদ্ধার স্বজনদের সংঘর্ষ হলে উভয় পক্ষের ১৮ জন আহত হন।

আজ বেলা দেড়টার দিকে ফরিদপুর জেনারেল হাসপাতালের পুরুষ সার্জারি ওয়ার্ডে গিয়ে দেখা যায়, পুলিশি পাহারায় মৃত বীর মুক্তিযোদ্ধার আহত তিন নাতিকে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। এর মধ্যে আলিফ খান ও তৌহিদ বিশ্বাসকে মেঝেতে রেখে এবং আলামীন বিশ্বাসকে শয্যায় রেখে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। পাশে দুটি চেয়ারে বসে আছেন ফরিদপুর কোতোয়ালি থানার দুই পুলিশ সদস্য।

চিকিৎসাধীন আলিফ খানের মা রিনা আহমেদ (৩৬) জানান, তাঁর ছেলের হাতে ও বুকে আঘাত লেগেছে। এ জন্য এক্স–রে করা হয়েছে। হাত মুচড়ে দেওয়ায় এক্স–রে করা হয়েছে তৌহিদ বিশ্বাসেরও।