‘ভালোভাবে থাকিও, দোয়া করিও’—ভারতে ফেরার আগে স্বামীকে বলেছিলেন সোনালী বিবি

ভারতীয় নাগরিক সোনালী বিবির স্বামী দানিস শেখ
ছবি: প্রথম আলো

‘আমাকে ছেড়ে দেশে ফেরত যাওয়ার সময় কাঁদছিল আমার স্ত্রী সোনালী বিবি। শেষে শুধু বলল, “ভালোভাবে থাকিও, দোয়া করিও।” এ সময় আমারও চোখে পানি আসে। আমিও তাকে বলি, ভালো থাকিও।’ আজ শনিবার বেলা ১১টার দিকে প্রথম আলোকে এ কথা বলেন ভারতীয় নাগরিক সোনালী বিবির স্বামী দানিস শেখ।

ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ) ‘পুশ ইন’ করার পর চাঁপাইনবাবগঞ্জে আটক অন্তঃসত্ত্বা নারী সোনালী বিবি ও তাঁর শিশুসন্তানকে গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যায় ভারতে ফেরত পাঠানো হয়েছে। ভারতের কলকাতা হাইকোর্ট ও পরে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশনা মোতাবেক সোনামসজিদ ইমিগ্রেশন চেকপোস্ট দিয়ে তাঁদের ফেরত নেয় ভারতীয় কর্তৃপক্ষ। তবে সোনালী বিবির স্বামীসহ আটক অন্য চারজনকে ফেরত নেয়নি ভারতীয় কর্তৃপক্ষ।

ফেরত নেওয়ার পর গতকাল রাতেই অন্তঃসত্ত্বা সোনালী বিবিকে পশ্চিমবঙ্গের মালদা জেলা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। ভারতীয় টিভির সংবাদ থেকে এ তথ্য জেনেছেন বলে জানান দানিস শেখ। তিনি বলেন, স্ত্রী ও শিশুসন্তান দেশে ফিরতে পারলেও তিনিসহ চারজনকে বিএসএফ গ্রহণ না করায় মনঃকষ্টের মধ্যে রয়েছেন।

আরও পড়ুন

দানিস শেখ জানান, গত ২০ আগস্ট চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌর এলাকার আলীনগর মহল্লার সোনালী বিবির এক আত্মীয়ের বাড়ি থেকে তিনি, তাঁদের আট বছর বয়সী ছেলে এবং সুইটি বিবি (৩৩) ও তাঁর ১৬ ও ৬ বছর বয়সী ছেলেকে আটক করে চাঁপাইনবাবগঞ্জ থানা–পুলিশ। পরে দুই শিশু ছাড়া চারজনকে অবৈধ অনুপ্রবেশের মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতের মাধ্যমে জেলা কারাগারে পাঠানো হয়। গত সোমবার চাঁপাইনবাবগঞ্জের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের (তৃতীয়) বিচারক মো. আশরাফুল ইসলাম নয়াগোলা মহল্লার ফারুক হোসেনের জিম্মায় ছয়জনকে জামিন দেন। কারাগার থেকে মুক্ত হয়ে ফারুক হোসেনের বাড়িতে অবস্থান নেন। এর মধ্যে গতকাল সন্ধ্যায় বিএসএফের কাছ থেকে অন্তঃসত্ত্বা সোনালী বিবি ও শিশুসন্তান সাব্বির শেখকে ফিরিয়ে নেয় ভারতীয় কর্তৃপক্ষ।

সোনালী বিবি ও তাঁর সন্তান
ছবি: বিজিবির সৌজন্যে

এ সময় বিজিবির মহানন্দা ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল গোলাম কিবরিয়া উপস্থিত ছিলেন। সাংবাদিকদের তিনি বলেন, বিএসএফের এই অমানবিক পুশ ইন কর্মকাণ্ড আন্তর্জাতিক মানবাধিকার মানদণ্ড ও দ্বিপক্ষীয় সীমান্ত ব্যবস্থাপনা চুক্তির সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। পুশ ইনের এই কর্মকাণ্ড দীর্ঘদিন ধরে সীমান্ত এলাকায় মানবিক সংকটের সৃষ্টি করছে এবং উভয় দেশের সৌহার্দ্যপূর্ণ সীমান্ত ব্যবস্থাপনার পথে প্রতিবন্ধকতা হিসেবে চিহ্নিত হচ্ছে।

সোনালী বিবির স্বামীসহ অন্য চারজনকে ভারতীয় কর্তৃপক্ষের না নেওয়া প্রসঙ্গে বিজিবির অধিনায়ক গোলাম কিবরিয়া প্রথম আলোকে বলেন, ভারতীয় ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের ছাড়পত্র না থাকায় অন্য চারজনকে গ্রহণ করেনি বিএসএফ।