কাজ শেষ হলেও লোহালিয়া সেতু খুলে না দেওয়ায় ক্ষোভ
২০১১ সালে সেতু নির্মাণের কাজ শুরু হয়। ২০১৪ সালে নির্মাণকাজ শেষ হওয়ার কথা। কিন্তু উচ্চতা নিয়ে সমস্যা দেখা দেওয়ায় জুনে কাজ শেষ হয়েছে।
পটুয়াখালী শহরসংলগ্ন লোহালিয়া নদীর ওপর নির্মিত লোহালিয়া সেতুর নির্মাণকাজ শেষ করতে লেগেছে ১২ বছর। এরপরও বহুল প্রতীক্ষিত সেতুটি খুলে দেওয়া হয়নি।
অথচ এই সেতু খুলে দিলে জেলার বাউফল, দশমিনা ও গলাচিপা উপজেলার মানুষ সরাসরি উপকৃত হবেন। এখনো সেতুটি চালু না হওয়ায় প্রতিদিন ট্রলারে লোহালিয়া নদী পারাপারে ভোগান্তির শিকার হচ্ছে মানুষ। এ ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন জনপ্রতিনিধিসহ স্থানীয় লোকজন। তাঁরা দ্রুত সেতুটি খুলে দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন।
দশমিনা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান ইকবাল মাহামুদ বলেন, ‘সেতুটি বাউফলসহ দশমিনা উপজেলাবাসীর কাছেও অনেক গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের জেলা শহরে সহজ যাতায়াতের সড়কটির সঙ্গে যুক্ত সেতুটি। এখন নদী পেরিয়ে জেলা শহরে যাতায়াত করতে হচ্ছে আমাদের। দীর্ঘদিন পর সেতুর নির্মাণকাজ শেষ হয়েছে। এখন এটি খুলে দিলে আমাদের নদী পারাপারে আর দুর্ভোগ পোহাতে হতো না।’
দশমিনারবেতাগী-সানকিপুর ইউপি চেয়ারম্যান মশিউর রহমান বলেন, ‘সেতুর নির্মাণকাজ শেষ হয়েছে। এখন আর খেয়া পারাপারের ভোগান্তি শিকার হতে চাই না। এলাকার মানুষ এখন সেতু দিয়ে যাতায়াত করতে চায়।’
সেতুটি কবে উদ্বোধন করা হবে, জানতে চাইলে এলজিইডির পটুয়াখালী কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ লতিফ হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘সেতুটির নির্মাণকাজ গত জুন মাসে শেষ হয়েছে। সেতুটির চলাচলে খুলে দেওয়ার জন্য উদ্বোধনের পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। ইতিমধ্যে এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য এলজিইডির প্রধান প্রকৌশলীর কাছে অনুরোধ জানানো হয়েছে। প্রধান প্রকৌশলী মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করে উদ্বোধনের উদ্যোগ নেবেন। তবে শিগগরিই সেতুটি উদ্বোধন হবে বলে আমরা আশা করছি।’
সেতুটি চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হলে পটুয়াখালী সদরের সঙ্গে লোহালিয়া ইউনিয়নসহ জেলার বাউফল, দশমিনা উপজেলা ও গলাচিপা উপজেলার সরাসরি সড়ক যোগাযোগ স্থাপিত হবে। এ ছাড়া সেতুটি চালু হলে পটুয়াখালীর সঙ্গে ভোলার লালমোহন উপজেলাসহ আশপাশের উপজেলার সড়ক যোগাযোগ সহজ হবে।
স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) পটুয়াখালী কার্যালয় সুত্র জানায়, পটুয়াখালী জেলা সদরের সঙ্গে বাউফল, দশমিনা, গলাচিপা উপজেলাসহ ভোলার সঙ্গে সড়ক পথে যোগাযোগে সহজ করতে ২০০৮ সালে পটুয়াখালীর গলাচিপা-কলাগাছিয়া সড়কের লোহালিয়া নদীর ওপর একটি সেতু নির্মাণের উদ্যোগ নেয় এলজিইডি। ৪৬৪ মিটার দীর্ঘ এই গার্ডার সেতুটি নির্মাণে ব্যয় ধরা হয় ৪৬ কোটি টাকা। ২০১১ সালের ৯ নভেম্বর কার্যাদেশ নিয়ে সেতু নির্মাণকাজ শুরু হয়। ২০১৪ সালের ২০ অক্টোবর সেতুর নির্মাণকাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল।
কিন্তু ওই নকশায় ৫৫ শতাংশ কাজ শেষে হওয়ার পর সেতু নির্মাণ নিয়ে দেখা দেয় জটিলতা। ২০১৪ সালের ১ অক্টোবর স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয় ও নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়ের আন্তমন্ত্রণালয়ের সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী লোহালিয়া সেতুর নির্মাণকাজ বন্ধ করে দেওয়া হয়।
এলজিইডি সুত্র জানায়, শুরুতে লোহালিয়া সেতুর উচ্চতা ছিল ৯ দশমিক ৫৭ মিটার। সেই অনুযায়ী সেতু নির্মাণকাজ শুরু হয়েছিল। তবে লোহালিয়া সেতু অনুমোদনের সময় পায়রা বন্দরের কথা বিবেচনা করা হয়নি। পায়রা গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণের ফলে ভবিষ্যতে লোহালিয়া নদী দিয়ে পণ্যবাহী জাহাজ চলাচল করবে। তাই উচ্চতা কম হওয়ায় ওই সেতুর নির্মাণকাজ বন্ধ করা হয়েছিল। পরে ২০১৬ সালের ১৭ জুলাই স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয় ও নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়ের আন্তমন্ত্রণালয়ের সভায় আবার লোহালিয়া সেতুর নির্মাণকাজ শুরু করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
পায়রা বন্দরের কথা বিবেচনা করে সেতুর উচ্চতা আরও বাড়ানো হয়েছে। এখন পায়রা সমুদ্রবন্দরের স্বার্থে সেতুর উচ্চতা ১৩ দশমিক ০৫ মিটার করা হয়েছে। সেতুর মাঝখানে ইস্পাতের প্লেট ব্যবহার করা হয়েছে।
গত বৃহস্পতিবার বিকেলে সরেজমিনে দেখা যায়, লোহালিয়া সেতুর মূল কাঠামো নির্মাণ শেষ হয়েছে। সেতুর মাঝখানে ইস্পাতের প্লেট বসানো হয়ে গেছে। সেতুর দুই পাশে বিদ্যুতের জন্য সোলার বসানো হয়েছে। সেতুর রেলিংয়ে রং করা হয়েছে। সেতুর দুই পারের অনেক দর্শনার্থী সেতুতে ঘুরতে এসেছেন। তাঁরা সেলফি তুলছেন।