গরু বেশি বড় করে বিপাকে খামারিরা

প্রায় ২৫ মণ ওজনের ‌‘মোহন রাজ’ নামের এই ষাঁড়টির পেছনে তিন বছরে সাত লাখ টাকার ওপরে ব্যয় হয়েছে বলে দাবি পালনকারীর। কিন্তু গরুটিকে বিক্রি করেছেন ছয় লাখ টাকায়। গত সোমবারের ছবি
প্রথম আলো

সাঁথিয়া উপজেলার শামুকজানি গ্রামের মনজেল হোসেন তিন বছর আগে ৯৫ হাজার টাকা দিয়ে হাট থেকে কিনে আনেন একটি ষাঁড়। অনেক যত্নে তিনি ও তাঁর বাড়ির লোকজন মিলে গরুটিকে বড় করে তোলেন। ভালো খাবার খাওয়ানোয় এটির আকৃতি হয়ে ওঠে হাতির মতোই বিশাল। আদর করে বাড়ির লোকজন এর নাম রাখেন ‘মোহন রাজ’।

প্রায় ২৫ মণ (এক হাজার কেজি) ওজনের মোহন রাজকে নিয়ে বেশ গর্বই করতেন মনজেল হোসেনের বাড়ির লোকজন। একপর্যায়ে এ গর্ব দুশ্চিন্তায় পরিণত হয়ে যায়। কারণ, এটিকে বিক্রি করতে গিয়ে ক্রেতার দেখা পাওয়া যাচ্ছিল না। শেষ পর্যন্ত অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে আত্মীয় সম্পর্কের এক গরুর ব্যাপারীর কাছে গতকাল সোমবার ছয় লাখ টাকায় গরুটি বিক্রি করেন। তা–ও বেশ কিছু টাকা এখনো বাকি রয়ে গেছে। অথচ তিনি গরুটির দাম কম করে হলেও ১০ লাখ টাকা হবে বলে আশা করেছিলেন।

আক্ষেপ করে মনজেল হোসেন বলেন, ‘আমাগের এই এলাকায় বাড়ি থেকেই কোরবানির সব গরু বেচাকেনা হয়। গরুটি কেনার জন্য কেউই তেমন আসে নাই। গত বছরেও এই গরুটার দাম সাড়ে পাঁচ লাখ টাকা কইছিল। কিন্তু দেই নাই। গত এক বছরে প্রতিদিন এর পেছনে খাদ্য বাবদ ৬০০ থেকে ৭০০ টাকা টাকা খরচ পড়িছে। তার মানে শুধু এক বছরেই গরুর পিছনে আড়াই লাখ টাকার মতো খরচ হইছে। সব মিলায়া এই গরুতে আমার ম্যালা টাকা লোকসান হয়া গেল।’

মনজেল হোসেনের মতো বড় আকারের গরু নিয়ে বিপাকে পড়েছেন পাবনার বেড়া ও সাঁথিয়া উপজেলার গরু পালনকারীরা। বড় বা বিশেষ আকারের গরুগুলো পালন করতে গিয়ে সাধারণ গরুর চেয়ে তাঁদের ব্যয় হয়েছে কয়েক গুণ বেশি। অথচ বিক্রি করতে গিয়ে লাভ দূরের কথা, খরচই তুলতে পারছেন না পালনকারীরা।

হাটে বড় গরুর চাহিদা তেমন নেই। এ ধরনের ছোট ও মাঝারি গরুর চাহিদা বেশি, বিক্রি হচ্ছেও বেশি। মঙ্গলবার সাঁথিয়া উপজেলার করমজা চতুরহাটে
ছবি: প্রথম আলো

গরু পালনকারীরা জানান, বিশেষ গড়ন বা আকৃতির গরুগুলোকে যত্ন করে বড় করা হয়। এদের জন্য ছোটবেলা থেকেই নিয়মিতভাবে স্বাভাবিক খাবারের পাশাপাশি বিভিন্ন ধরনের ফলসহ বিশেষ খাবার খাওয়াতে হয়। এদের থাকার জায়গাও আলাদা ও পরিচ্ছন্ন রাখতে হয়। এভাবেই একপর্যায়ে গরুগুলো সুঠাম ও বিশালদেহী হয়ে ওঠে। শৌখিন লোকজনের কাছে কোরবানির জন্য এসব গরুর বিশেষ চাহিদা থাকে। তাই এগুলোর দামও হয় বেশি। শখের পাশাপাশি লাভের আশায় এ ধরনের গরু পালন করে থাকেন অনেকে। আগের বছরগুলোতে বেড়া ও সাঁথিয়া উপজেলার বিভিন্ন বাড়ি থেকে বড় আকারের গরুগুলো ভালো দামে বিক্রি হয়েছে। এবার বিপরীত চিত্র। বড় আকৃতির গরুগুলোর চাহিদা নেই বললেই চলে।

বেড়া পৌর এলাকার দক্ষিণপাড়া মহল্লার খামারি মো. টিটু বলেন, ‘এবার বড় আকারের গরুর চাহিদা ও দাম—দুটোই কমে গেছে। আমার খামারের লাল রঙের একটি ষাঁড় দুই সপ্তাহ আগেও ২ লাখ ৮০ হাজার টাকায় কেনার জন্য একজন সাধাসাধি করেছে। অথচ এখন দুই লাখ টাকায় নেওয়ারও মানুষ নাই।’

মঙ্গলবার উত্তরাঞ্চলের অন্যতম বড় পশুর হাট সাঁথিয়ার করমজা চতুরহাটে গিয়ে প্রচুর গরু আমদানি লক্ষ করা গেছে। হাট ঘুরে দেখা যায়, মাঝারি আকারের গরুর চাহিদা ছিল বেশি। ক্রেতাদের আগ্রহ ৮০ হাজার থেকে এক লাখ ২০ হাজার টাকা দামের গরুতে। হাটে প্রচুর বড় গরু উঠলেও সেসব বিক্রি হয়েছে কম।

বেড়া উপজেলা ডেইরি অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক ও বেড়ার বনগ্রাম মহল্লার খামারি মাহফুজা মীনা বলেন, ‘আমার খামারে বড় আকারের ষাঁড় ছিল চারটি। এর মধ্যে অনেক চেষ্টা করে সাড়ে সাত লাখ টাকায় দুটি বিক্রি করেছি। বাকি দুটি গরু এখনো বিক্রি করতে পারিনি। যে দুটি বিক্রি করেছি, গত বছরের বাজার অনুযায়ী সেগুলোর দাম অন্তত ১০ লাখ টাকা হওয়া উচিত ছিল। আর আমার খামার থেকে এবার কোরবানির উপযোগী আরও ২০ লাখ টাকার গরু বিক্রি করেছি। সেগুলোর সবই মাঝারি আকৃতির। সেগুলোর দাম নিয়ে আমি মোটামুটি সন্তুষ্ট।’