কাস্টমস কর্মকর্তা পরিচয়ে অভিনব কায়দায় ৭৮ লাখ টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ
অভিনব কায়দায় প্রতারণা করে বরিশাল নগরের এক ব্যক্তির প্রায় ৭৮ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে একটি সংঘবদ্ধ প্রতারক চক্র। ঘটনা টের পাওয়ার পর ওই ব্যক্তি বরিশাল কোতোয়ালি থানায় মামলা করেন। এর ছয় মাস পর পুলিশ চক্রটির এক সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে।
গ্রেপ্তার তরুণের নাম সোহাগ শেখ (২৪)। তিনি শরীয়তপুরের নড়িয়া উপজেলার কেদারপুর ইউনিয়নের পাঁচগাঁও গ্রামের মো. জব্বার শেখের ছেলে। আজ রোববার সকালে বরিশাল মহানগর পুলিশের সদর দপ্তরে সংবাদ সম্মেলন করে প্রতারণার বিষয়টি জানান নগর পুলিশের উপকমিশনার (দক্ষিণ) মো. আলী আশরাফ ভূঞা।
জিজ্ঞাসাবাদে পাওয়া তথ্যের বরাত দিয়ে আলী আশরাফ ভূঞা বলেন, গ্রেপ্তার সোহাগ শেখ প্রতারক চক্রের প্রথম স্তরের প্রথম ব্যক্তি। এখানে আরও চার থেকে পাঁচটি ধাপে ১০ থেকে ১২ কিংবা আরও বেশি সদস্য আছে। এর মধ্যে বিদেশেও একটি স্তর থাকতে পারে। চক্রের সদস্যরা প্রতিটি স্তরে প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে মানুষের টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। বাকিদেরও গ্রেপ্তারে তৎপরতা চলছে।
ঘটনার বিবরণে পুলিশ জানায়, বরিশাল নগরের বাসিন্দা রত্নেশ্বর মাঝি (৬৫) একজন বেসরকারি অবসরপ্রাপ্ত চাকরিজীবী। গত বছরের ১৯ নভেম্বর তাঁর মুঠোফোন নম্বরে খায়রুন নেছা নামের এক নারী কল করে নিজেকে কাস্টমস কর্মকর্তা পরিচয় দেন। তিনি রত্নেশ্বর মাঝিকে জানান, তাঁর (রত্নেশ্বর মাঝির) নামে এলিজাবেথ এরিস নামে একজন বিদেশি নাগরিক একটি লাগেজ পাঠিয়েছেন, যার মধ্যে বিপুল পরিমাণে ডলার আছে। ওই নারী রত্নেশ্বর মাঝিকে বিভিন্নভাবে প্রলোভন দেখান এবং ডলারগুলো কাস্টমস থেকে ছাড়ানোর জন্য পর্যায়ক্রমে বিভিন্ন পরিমাণে টাকা দাবি করেন। রত্নেশ্বর প্রলোভনে পড়ে ২৩ দিনের মধ্যে বিভিন্ন ব্যাংকের অ্যাকাউন্টে এবং বিভিন্ন বিকাশ নম্বরে ৭৭ লাখ ৯০ হাজার টাকা পাঠান। এরপরও লাগেজ ছাড়াতে আরও টাকা লাগবে জানালে রত্নেশ্বর বুঝতে পারেন, তিনি প্রতারণার শিকার হয়েছেন। পরে গত বছরের ১৫ ডিসেম্বর কোতোয়ালি মডেল থানায় গিয়ে একটি মামলা করেন তিনি।
পুলিশ জানায়, কোতোয়ালি মডেল থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মো. রেজাউল ইসলামসহ একটি দল এ ঘটনার তদন্ত শুরু করে। একপর্যায়ে থানার পরিদর্শক (অপারেশন) বিপ্লব মিস্ত্রি ও এসআই মো. রেজাউল ইসলামসহ বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের একটি সাইবার দল ঢাকার মতিঝিলে অভিযান চালায়। অভিযানে সোহাগ শেখকে গ্রেপ্তার করা হয়। এ সময় তাঁর সঙ্গে পাওয়া যায় ৩৫টি ব্যাংকের ৮৬টি এটিএম কার্ড, বিভিন্ন ব্যাংকের ১৫১টি চেকের পাতা, চারটি মুঠোফোন ও আটটি সিমকার্ড।
সংবাদ সম্মেলনে উপকমিশনার মো. আলী আশরাফ ভূঞা বলেন, এ চক্রের বাকি সদস্যদের গ্রেপ্তারে কাজ করছে পুলিশ। গ্রেপ্তার সোহাগ শেখের বিরুদ্ধে ঢাকার খিলগাঁও থানাসহ একাধিক থানায় একাধিক মামলা রয়েছে। তিনি বলেন, চক্রের সদস্যরা মূলত বিদেশি নাগরিকের নামের ফেসবুক আইডি থেকে টার্গেট করা ব্যক্তির সঙ্গে বন্ধুত্ব করেন। নানা পরিচয় দেওয়ার পর বলেন, ব্যবসা করার জন্য এ দেশে আসতে চান। আর তখন বিদেশ থেকে বাংলাদেশের টার্গেট করা ব্যক্তির কাছে কিছু উপহার পাঠানোর নামে প্রতারণার মূল নাটক শুরু হয়। উপহার পাঠিয়ে টার্গেট করা ব্যক্তির ই–মেইল বা অন্য মাধ্যমে কিছু নথি পাঠানো হয়, যা পরে বাংলাদেশের কাস্টমস কর্মকর্তার পরিচয় দেওয়া ব্যক্তির পাঠানো নথির সঙ্গে মিলে যায়। আর এর মাধ্যমেই প্রথম বিশ্বাস অর্জনের চেষ্টা করেন চক্রের সদস্যরা।
মো. আলী আশরাফ ভূঞা বলেন, দেশের বাইরেও চক্রের সদস্য থাকতে পারে। তাঁরা এত চালাক যে টাকা পাঠানোর কয়েক মিনিটের মাথায় বিকাশ ও ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থেকে তা তুলে নেন। গ্রেপ্তার ব্যক্তির কাছে পাওয়া এটিএম কার্ডগুলোর ক্ষেত্রে যেসব পরিচয়পত্র ব্যবহার করা হয়েছে, সেগুলো চক্রের কারও নয়। এখানেও জালিয়াতি করেছেন তাঁরা।