শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসে মন্তব্য
আট ঘণ্টা অবরুদ্ধ দুই সহ-উপাচার্য ও রেজিস্ট্রার, পাল্টাপাল্টি স্লোগান
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) সহ–উপাচার্য (একাডেমিক) অধ্যাপক মোহাম্মদ শামীম উদ্দিন খানের পদত্যাগের দাবিতে প্রশাসনিক ভবনে শিক্ষার্থীদের দেওয়া তালা আট ঘণ্টা পরও খোলা হয়নি। আজ সোমবার দুপুর ১২টা ৩৫ মিনিটে প্রশাসনিক ভবনের গেটে তালা দেন ছাত্রদলসহ ছয়টি সংগঠনের শিক্ষার্থীরা। এতে ভেতরে আটকা পড়ে আছেন সহ-উপাচার্য (একাডেমিক) অধ্যাপক মোহাম্মদ শামীম উদ্দিন খান, সহ-উপাচার্য (প্রশাসনিক) অধ্যাপক মো. কামাল উদ্দিন ও ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার অধ্যাপক সাইফুল ইসলাম।
আজ রাত আটটার দিকে এই প্রতিবেদন লেখার সময় প্রশাসনিক ভবনের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করছিলেন বিভিন্ন ছাত্রসংগঠনের নেতা–কর্মীরা। এ সময় জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল ও ইসলামী ছাত্রশিবিরের নেতা–কর্মীরা পাল্টাপাল্টি স্লোগান দিলে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। দুই ছাত্রসংগঠনের নেতা–কর্মীরা প্রশাসনিক ভবনের দুই পাশে অবস্থান নেন।
সরেজমিনে দেখা যায়, প্রশাসনিক ভবনের এক পাশে কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে অবস্থান নেন ছাত্রশিবিরের নেতা–কর্মীরা। অন্যদিকে প্রশাসনিক ভবনের মূল ফটকে তালা দিয়ে অবস্থান করছিলেন শাখা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদল, বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রী, গণতান্ত্রিক ছাত্র কাউন্সিল, নারী অঙ্গন, বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশন ও বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন। একই সঙ্গে চাকসুর প্রতিনিধিরাও প্রশাসনিক ভবনের সামনে অবস্থান নেন।
কর্মসূচি চলাকালে শাখা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদল ও বামপন্থী ছাত্রসংগঠনের নেতা–কর্মীরা স্লোগান দেন—‘এই মুহূর্তে বাংলা ছাড়, জামায়াত-শিবির রাজাকার’, ‘দফা এক দাবি এক, শামীম স্যারের পদত্যাগ’। অপর দিকে ইসলামী ছাত্রশিবিরের নেতা–কর্মীরা স্লোগান দেন, ‘হিন্দুস্তানি দালালেরা হুঁশিয়ার সাবধান’, ‘ভারতের দালালেরা হুঁশিয়ার সাবধান’। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর হোসেন শহীদ সরওয়ার্দী ও সহকারী প্রক্টর মো. নুরুল হামিদের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে।
শাখা ইসলামী ছাত্রশিবিরের সেক্রেটারি মুহাম্মদ পারভেজ বলেন, ‘সকাল থেকে দেখা যাচ্ছে ছাত্রদল ও বামপন্থী কিছু নেতা–কর্মী প্রশাসনিক ভবনে তালা দিয়েছেন। তাঁরা দাবি করছেন সহ–উপাচার্যের বক্তব্যের কারণে তালা দেওয়া হয়েছে। তবে আমরা শুনেছি, অতীতে যেভাবে ছাত্রলীগ তালা দিয়ে চাঁদা দাবি করত, আজ ছাত্রদলও একই কারণে তালা দিয়েছে।’
এই অভিযোগ অস্বীকার করে শাখা ছাত্রদলের সভাপতি আলাউদ্দিন মহসিন বলেন, ‘গতকাল বুদ্ধিজীবী দিবসের আলোচনা সভায় মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসকে অস্বীকার করে সহ–উপাচার্য (একাডেমিক) যে বক্তব্য দিয়েছেন, তা নিন্দনীয়। এর প্রতিবাদে গতকাল বিক্ষোভ করেছি এবং আজ তারই ধারাবাহিকতায় তালা দেওয়া হয়েছে। অতীতে প্রশাসন গদি রক্ষায় ছাত্রলীগকে ব্যবহার করত, এখন ইসলামী ছাত্রশিবিরকেও ব্যবহার করছে।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী প্রক্টর মো. নুরুল হামিদ বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থিতিশীল পরিবেশ রক্ষার্থে সব সংগঠনের শান্তিপূর্ণ আচরণ জরুরি। এখন পর্যন্ত পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে। এখানে কোনো সংগঠনের নেতা–কর্মীদের আটকে রাখা হয়নি। আমি নিজে ছাত্রশিবিরের জমায়েতের মাঝখান থেকে দুজন শিক্ষার্থীকে বের করে এনেছি।’
গতকাল রোববার শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় সহ-উপাচার্য অধ্যাপক মোহাম্মদ শামীম উদ্দিন খান বলেছিলেন, ‘যে সময় পাকিস্তানি বাহিনী দেশ থেকে পালানোর চেষ্টা করছিল, তখন তারা বাংলাদেশের বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করবে, এটি আমি মনে করি রীতিমতো অবান্তর।’
এ ঘটনার পর গতকাল রাত সাড়ে ৯টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের গোলচত্বর থেকে প্রশাসনিক ভবনের সামনে ছাত্রদল ও বামপন্থী সংগঠনের নেতা-কর্মীরা বিক্ষোভ করেন। তাঁরা সহ-উপাচার্য (একাডেমিক) শামীম উদ্দিন খানকে নিঃশর্ত ক্ষমা চেয়ে পদত্যাগ করার আহ্বান জানান। এরপর আজ দুপুরে প্রশাসনিক ভবনে তালা দেন তাঁরা।
এদিকে এ ঘটনায় বিবৃতি দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। আজ বিকেল সাড়ে পাঁচটায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রকাশিত বিবৃতি থেকে জানানো হয়, বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ–উপাচার্য (একাডেমিক) অধ্যাপক মোহাম্মদ শামীম উদ্দিন খানের শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসের আলোচনায় দেওয়া বক্তব্যের কিছু অংশ খণ্ডিতভাবে প্রচারিত হওয়ায় বিভ্রান্তি সৃষ্টি হয়। তিনি শহীদ বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ড অস্বীকার করেননি; বরং হত্যার প্রকৃতি ও পরিকল্পনা নিয়ে আরও প্রামাণ্য গবেষণার প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন।